somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃস্বপ্ন ও তার পরে....

১৪ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শান্ত ভাবে ফোনটা রেখে দিলেন কায়সার সাহেব, চোখে মুখে কোন ভাব নেই...দেখে কেউ বলতে পারবে না এই মাত্র তিনি তার একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন। স্ত্রী রাহেলার প্রশ্নের জবাবে যখন বললেন “কক্সবাজার যেতে হবে,এক্ষুনি রেডি হয়ে নাও....রনক নাকি এক্সিডেন্ট করেছে”, তখনো তার গলা শান্তই শুনালো।তার স্ত্রী যে খবরটার তাৎপর্য বুঝে সরাসরি মূর্ছা যাচ্ছিলেন তাতেও তার তেমন বিকার হল না।হবার কথাও না,সংসার তার কাছে একটা compromise ছিল মাত্র,ছেলের জন্য করে যাচ্ছিলেন এতদিন।

কায়সার সাহেবের চেহারার শান্ত ভাবটা কেটে গেল যখন তিনি জানতে পারলেন তার ছেলে জাহাজ থেকে পড়ে গেছে,এখনো লাশ পাওয়া যায়নি। ছেলেকে আর কোন দিন দেখতে পারবেন না,চিন্তাটা মাথায় জমাট বাধতেই এতক্ষন আটকে রাখা অশ্রুর বাঁধ থেকে কয়েক ফোটা মুক্ত হয়ে গেল। একটু পরে শান্ত হলেন,জানতে চাইলেন তিনি ওই জায়গাটায় যেতে চান,কিভাবে কি ব্যবস্থা করতে হবে।

ট্রলারের ডেকে দাঁড়িয়ে শেষ ৪৮ ঘন্টার কথা ভাবছিলেন কায়সার সাহেব....কিছুই তার পক্ষে যাচ্ছে না কয় দিন ধরে,এই ট্রলার ভাড়া করতেও ঘাম ছুটে গেছে। একটা ট্রলারও এই জায়গায় আসতে রাজি হচ্ছিল না তাদের দেখে,যদিও এটা টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটেই পড়ে। অনেক খুজে এই বুড়ো ট্রলার মালিককে পেয়েছেন,তাও অনেক বুঝানোর পরে। রাহেলাকে রেখে আসতে চেয়েছিলেন,কিন্তু তার জেদের কাছে হার মানতে হয়েছে। ট্রলার মালিককে ডেকে জানতে চাইলেন কায়সার সাহেব “আর কত দূর ইদ্রিস মিয়া?” কণ্ঠে বিরক্তির রেশ আটকানোর কোন চেষ্টাই করলেন না। “আর আধ ঘন্টা স্যার” নির্বিকার ভাবে জবাব দিলো ইদ্রিস,তার বয়স হয়েছে অনেক,চুল সব সাদা...কিন্তু তার ট্রলারটার বয়স মনে হয় তার চাইতেও বেশী,ধুকতে ধুকতে চলছে কিভাবে গবেষণার বিষয়! বিরক্ত কণ্ঠে রাহেলাকে ডাকতে গেলেন কায়সার সাহেব, গত দুই দিন রাহেলার সাথে কথাই হয় নি বলতে গেলে,গিয়ে দেখেন চুপ করে ডেকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাহেলা,কায়সার সাহেবকে দেখেই জানতে চাই “আর কতক্ষন?” জবাবের অপেক্ষা না করেই আবার বলে উঠলেন “ভয় লাগছে কায়সার।” কায়সার সাহেব কিছু বললেন না,এই বয়সে এই সময়ে আর বলার মত কথাও পাওয়া যায় না সবসময়। হঠাৎ চিলের মত চিৎকার দিয়ে উঠলেন রাহেলা “কায়সার!! দেখে যাও!” দৌড়ে এসে স্ত্রীর দেখানো দিকে তাকিইয়ে কায়সার সাহেবও দেখতে পেলেন,পানিতে কিছু একটা ভাসছে.....দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মানুষ হতেও পারে,দৌড়ে গিয়ে ইদ্রিসকে ট্রলার ঘুরাতে বললেন কায়সার সাহেব। ইদ্রিস এর চেহারা শক্ত হয়ে গেল কিন্তু চুপ করে কৌশলী নাবিকের মত ট্রলারটা ঘুরিয়ে ঠিক লাশটার পাশেই নিয়ে রাখলো। হ্যা,কাছ থেকে দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এটা একটা মানুষেরি লাশ...কিন্তু ভয়ঙ্কর ভাবে বিকৃত হয়ে আছে,দেখে চেনার কোন উপায় নেই।হতাশ হলেন কায়সার সাহেব,দুই দিনে লাশের এত পচার কথা না,তাই তিনি মোটামুটি নিশ্চিত এটা রনকের লাশ না। স্ত্রীকে ব্যাপারটা বুঝাতে তার দিকে তাকাতেই দেখলেন রাহেলার মুখ হা হয়ে আছে,কিন্তু কোন আওয়াজ নেই.....চোখের তারায় ভয়ের ছাপ এমন স্পষ্ট যে সদ্যপ্রসূত বাচ্চাও হয়ত বুঝবে,কি মনে করে আবার লাশের দিকে তাকালেন কায়সার সাহেব,যা দেখলেন তার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।তিনি তাকানো মাত্রই লাশের চোখ দুইটা খুলে গেল,কয়লা কালো চোখ দুটির দৃষ্টি সোজা কায়সার সাহেবের দিকে....পানির নিচ থেকে বিকৃত এক জোড়া হাত উঠে এল,আর ট্রলারের খোল আকড়ে ধরলো। অবাস্তব ঘটনাটা রাহেলা বেগমের আর সহ্য হল না,ভয়ঙ্কর স্বরে চিৎকার দিয়ে মূর্ছা গেলেন তিনি। কায়সার সাহেব অবিশ্বাসের সাথে ভয়ের মাত্রা পূর্ণতা পেল যখন রাহেলা বেগমের চিৎকারে বিকৃত লাশটাও নড়ে উঠলো,কিছু বলার জন্য মুখ খুললো কিন্তু শুধু গলগল করে পানি বের হল কিছু। লাশটা ভয়ঙ্কর চোখে কায়সার সাহেব এর দিকে তাকিয়ে ট্রলার এর খোল বেয়ে একটু উঠে এল,ওটার গলা দিয়ে এবার যেন একটু আওয়াজ বের হল, “মা” বলে উঠলো কি কোন?পাশে হঠাৎ করে ইদ্রিস এসে দাড়ালো,হাতে একটা পাথর। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে পাথরটা সে লাশটার দিকে ছুড়ে মারলো,লাশটার হাত খোল থেকে ছুটতেই দৌড়ে গিয়ে সে ট্রলার ঘুরিয়ে নিলো। ফেরার পথটা কায়সার সাহেবের স্ত্রীর জ্ঞান ফেরানোর চেস্টাতেই গেল,তিনি টের পেলেন না কখন ইদ্রিস বন্দরে এসে ট্রলার রেখে গাড়ী আনতে গেল।

২ সপ্তাহ পরের কথা, খোজ নিয়ে জানতে পেরেছেন কায়সার সাহেব ওই জায়গায় অনেক আগে একবার এক মানসিক ভারসাম্যহীন লোক জাহাজে তার স্ত্রীকে খুন করেছিল,তাদের ছোট বাচ্চাটা বাসায় যাবার জন্য কান্নাকাটি করছিলো মায়ের কাছে,তখনো কেউ খুনের ঘটনা টের পায়নি।লোকটি পরে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে জাহাজের পিছে নিয়ে ফেলে দেয়,বাচ্চাটির ভাগ্য খারাপ ছিল,জাহাজের প্রপেলারে বেধে এক নিমেষেই ছিন্নভিন্ন হয়ে চায় তার ছোট্ট দেহটি,জাহাজের বাকি লোকজন এসে উন্মাদ লোকটিকে থামানোর আগেই সব ঘটে যায়,এর পরে থেকে নাকি এই জায়গায় কেই ডুবে মারা গেলে তাদের লাশ খুজতে এসে এরকম ঘটনা দেখেছে অনেকে,তাই স্থানীয় মানুষ এখানে লাশ খুজতে আসে না,শুধু এক বুড়ো ইদ্রিস আসে। যাবার আগে আলাদা করে ডেকে ইদ্রিসের বলা কথা গুলি মনে করে গেল কায়সার সাহেবের “সাবধানে থাইকেন স্যার,যাই হোক ভয় পাইয়েন না,আপনার কিছু এরা করতে পারতো না, কিন্তু ভয় পাইয়েন না”।

“হুম,কি বুঝলে আসাদ?”- অসহিষ্ণু স্বরে জানতে চাইলেন লিয়াকত ইনস্পেক্টর। “ওপেন অ্যান্ড শাট কেস স্যার,খুনের কোন আলামত নাই,কোন রকমের ধ্বস্তাধস্তি নাই,কিছু চুরি গেছে মনে হয় না। মিসেস আহমেদ মারা গেছেন প্রায় ৭ ঘন্টা আগে,তখন বাসায় কেউ ছিল না,কেউ আসেওনি প্রতিবেশীদের কথা অনুযায়ী....মিসেস আহমেদ এর cause of death হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,wrist কেটে ফেলেছিলেন,খালি চোখে কোন রকমের আঘাতের চিহ্ন নেই আর। সুইসাইড কেস স্যার, মিঃ আহমেদ তার নিজের রিভলভার এর গুলিতে মারা গেছেন....পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ,কপালে গান পাউডার এর দাগও আছে।এটাও তাহলে সুইসাইড কেসই হবে।”

“ময়নাতদন্ততের রিপোর্ট আমি জলদি চাই” – গম্ভীর ভাবে বললেন লিয়াকত মির্জা। ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান আসাদের চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে জানতে চাইলেন “আর কিছু?” “না স্যার, একটা হিসাব মিলছে না খালি স্যার। পাশের ফ্লাট এর বৃদ্ধ ভাড়াটিয়া বলছিলেন তিনি দুটি গুলির আওয়াজ পেয়েছেন,আর কেউ অবশ্য বলেনি।কিন্তু বুলেট পাচ্ছি কেবল একটা,বেডরুমে আর কোন হদিশ নাই। আর স্যার,অবাক ব্যাপার....মিসেস আহমেদ মারা গেছেন অনেকক্ষণ,কিন্তু গুলির আওয়াজে যারা ছুটে এসেছিলো তারা সবাই বলছে ফ্লোরে প্রচুর পানি পড়েছিল....কিন্তু ফ্যানগুলো ছাড়া ছিলো,পানিতো শুকিয়ে যাবার কথা,তাহলে পানি এলো কোথা থেকে?!” – একটানা কথা বলে থামলেন আসাদ। বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকালেন লিয়াকত মির্জা “এই ছেলেটা বেশী কথা বলে” মনে মনে ভাব্লেন তিনি। “ওয়েল,চেক করে দেখুন,দেখে আমাকে জলদি জানান।আমি যাচ্ছি আপাতত”

পাঠকের কল্পনার উপর ছেড়ে দিলাম কি ঘটতে পারে তা ভেবে নেওয়া....

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×