somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কতটা পথ পেরোলে তাকে পথিক বলা যায়!?? আসুন একজন রাজকুমারের গল্প শুনি, ভিখারী রাজকুমার

২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রংপুর শহরের সব লাইব্রেরি ঘুরে যখন সুনীলের ‘স্বপ্ন লজ্জাহীন’ বইটি পেলাম না, বিরক্ত হয়ে বের হলাম বাড়ির দিকে । প্রচণ্ড রোদের দরূণ না হেঁটে রিকশার অপেক্ষায় দাড়িঁয়ে পড়লাম । তখনই কানে মধুর এক সুর শুনতে পেলাম । বাঁশি বাজাচ্ছে কেউ!? এই রোদে!! খানিক খোঁজার পর দেখতে পেলাম একটু দুরেই বাঁশি বাজাচ্ছেন একজন । আগ্রহ একটু বেড়ে গেল ।পিছু নিলাম তার । অনেকেই শুনছেন আবার কেউ বা সদয় হয়ে দুএকটি টাকাও হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ।
অতপর কিছু না ভেবে তাকে ডেকে ফেললাম । দাঁড়িয়েও গেলো সে । দুজন মিলে দাড়ালাম পাশের পান দোকানের নিচে ছায়ায় । গলায় তার নাম, সাহয্যের আবেদন একটি কাগজে ঝুলানো ছিলো । নাম তার রাজকুমার । অন্ধ । আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, কারো কাছে হাত পাততে তিনি রাজী নন । তাই তিনি বাঁশির সুর শুনিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে অর্খ উপার্জন করেন ।
কতদিন থেকে বাঁশি বাজান, প্রশ্ন করাতে তিনি জানালেন ‘৮৫ সাল থেকে শুরু করেছিলেন । তবে তখন শুধু মনের তৃপ্তির জন্য বাজাতেন । সব কিছু হারিয়ে ২০০০ সাল থেকে এই বাঁশি তার অর্থ উপার্জনের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায় ।
সবচেয়ে অবাক হলাম তিনি কিভাবে অন্ধ হয়েছিলেন তা শুনে । মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদদাতা ছিলেন তিনি ।রংপুর স্টেশনে ছদ্মবেশে বাদাম বিক্রয় করতেন আর মুক্তিবাহিনীকে সংবাদ সরবরাহ করতেন। যুদ্ধের সেই সময়ের গোলাবারুদ, কাঁদানে শেল, ধুলাবালি ইত্যাদিতে তার দৃষ্টি হারিয়ে যায় । যুদ্ধের কথা বলতেই তিনি আবেগী হয়ে পড়লেন । নিজ মনেই বললেন, অনেক লোক মারা গেছে বাবা, তোমরাই ভবিষ্যত এ দেশের । তিনি আমাকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে বলেন । রাজকুমার আমার মাথায় হাত দিয়ে দোয়াও করলেন । আমিই কিছু দিতে পারিনি রাজকুমারকে । যা দিয়েছি তাতে তার একবেলার আহার ও জুটবেনা ।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ভাবলাম, আজকালকার হৃদয় খান, বালাম, মিলা, হাবিজাবি আরো কত… তথাকথিত শিল্পীরা সুর না বুঝেই গানের জগতে নক্ষত্র হয়ে গিয়েছেন । আর আমাদের রাজকুমার, যিনি দেশটাও স্বাধীন করলেন, প্রায় ২৭ বছর থেকে বাঁশি বাজালেন তিনি এখন ভাদ্র মাসের তীব্র তাপদাহে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বাশি বাজাচ্ছেন শুধু মাত্র জীবিকা অর্জনের জন্য !!!

আর কিছুই ভাবতে পারলাম না………………….
বাঁশির সুরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আমিও হাটতে থাকলাম রাজকুমারের পিছনে । আমি আর আমাদের রাজকুমার, যে সত্যিই রাজকুমার।

এটা ছিল ২০১২ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ওইদিন এই পোস্টটা করেছিলাম ফেবুতে যদি কিছু করতে পারি কি না। কিন্তু কাউকেই পাশে পেলাম না।
পরদিন খোজখবর নিয়ে রাজকুমারের বাসায় গেলাম। বাসা বলতে আস্পলে সেটা কিছু না। বাশের বেড়াও জোটে নি সেই বাসায়। কাথা-শাড়ি এসব দিয়ে ঘেরা একটা চালের ঘর। শুনলাম এই জমিটুকু ছাড়া রাজকুমারের আর কিছু নাই। তার বউ আর সে দুজন মিলে ওই চালের ঘরে থাকে। সন্তান সন্ততি নেই। তাই এই বয়সে নিজের কোন অবলম্বন না থাকায় এভাবেই চলতে হচ্ছে।
সেদিন রাজকুমারের বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম রংপুর টাউন হলে। সেখানে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন নাট্যদল এসবের মহড়া কক্ষ-অফিস এসব আছে। ভেবেছিলাম কথা বলে দেখি কেউ যদি রাজকুমারকে গানের দল কিংবা নাটকের দলে বাশিবাদক হিসেবে নেয়। কিন্তু বিধি বাম। সবাই একই অযুহাত দিল তারা যেভাবে যে প্যাটার্ণে কাজ করেন সেভাবে রাজকুমার পারবেনা। রাজকুমার নিজের ইচ্ছামত নাকি বাজায়!!

এরপরও অনেক চেষ্টা করেছি। অনেকে আশ্বাস দিয়েছিল একটা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু হায়!! কেউ কথা রাখেনি।

আমার একটা প্ল্যান ছিল একটা স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়ার। যেটা রাজকুমারের পক্ষে সহজ হবে। যেমন একটা মুদি দোকান করে দেয়া। সেখানে রাজকুমার বসে বসে বাশিও বাজাতে পারবে। তখন না হয় ওর বউ দোকানদারি করবে। কিন্তু সকল প্রবাদের বুকে লাথি মেরে বুঝতে পারলাম, আসলে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় না। এটা ভুয়া কথা।

যাই হোক, আর আশ্বাস চাই না। এই শেষ চেষ্টা। রাজকুমার যেন জীবনের শেষ দিনটিতে বুঝতে পারে তার দেশের মানুষ আসলে এতটা খারাপ না।

রাজকুমারের জন্য কিছু করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন

মেসবা - ০১৭৫১১১৩৬৮৩
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×