বিপ্লব ভাইকে বড় ভাইয়ের মত মনে করি, তিনিও আমাকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করেন। বিপ্লব ভাই মুন্নি সাহাকে দিদি বলে ডাকেন সেই সুত্রে আমিও তাকে দিদি বলি।
হটাৎ একদিন মুন্নি দিদি ও বিপ্লব ভাই আলাপ করতে লাগলেনযে মিশুক স্যার আসতেছেন। তখন আমরা লিবিয়া মিশর বর্ডার সাল্লুমে।
আমরা কায়রো থেকে প্রাইভেটকার নিয়েছি, ফলে তিনজনে বেশ মজার সাথে কাজকরতে ছিলাম। তাই হটাৎ এক মুরুব্বি আসবেন শুনে একটু বিব্রতই হয়ে গেলাম। তখন চারজন গাড়িতে অত আরামের সাথেও বসা যাবে না, তাছাড়া একজন মুরুব্বি সাথে থাকলে সব সময় একটু ইয়ে হয়ে চলতে হবে, এমনটা ভাবতে ভাবতে তিনি চলেই আসলেন।
লম্বা চউরা মানুষটিকে দেখলে যে কারোরই ভাল লাগবে। সাদা চুল ও গোফ অন্যদের না মানালেও তাকে বেশ মানিয়েছে। গলার ভয়েসও বেশ সুন্দর। আর কথা বলার ধরণ ও ভাষার ব্যাবহার অতুলনিয়। বাংলা ভাষায় যে এত সুন্দর করে কথা বলা যায় তা আমার জানা ছিল না। খুব আস্তে আস্তে ধিরে ধিরে খুবই গুছিয়ে কথা বলতেন। একটু চিন্তা করে কথা বলার সময় তিনি আবার ডান হাতের বৃদ্ধা আংগুলি দিয়ে নাকের ডান পাশে একটু ঘষতেন আর মিটি মিট হাসতেন।
মোট কথা অল্পতেই তাকে ভাল লেগে গেল, এবং তার ফ্রেন্ডলি আচরন তার বয়সের পরিমান অনেক কমিয়ে আনল। ফলে তার সাথে দুরত্ব অনেকটাই কমে এলো।
কিন্তু যেহেতু মুন্নি দি ও বিপ্লব ভাই উভয়ই তাকে স্যার বলে সম্বোধন করতেন সেহেতু আমিও স্যার বলেই সম্বোধন করতে লাগলাম। আমার দেখা দেখি ক্যাম্পে সেচ্ছা সেবি আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় ও কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ছত্ররাও স্যার বলেই সম্বোধন করতে লাগলেন।
কেটে গেল অনেকগুলো দিন। আলেকজান্ড্রিয়ায় এক ফ্লাটে কাটালাম তিনদিন। তিনি নিজ হাতে কেনা কাটা করে নিজেই রান্না করতে লাগলেন। সেই দিন গুলির কথা মনে থাকবে অনেকদিন। টুনা ভাজি, চিংড়ি মাছ ও মুরগি ভুনা করলেন আর আমি ভিডিও করতে লাগলাম। দিদি, বিপ্লব ভাই ও দু'একজন অতিথি মিলে সে কি যে আনন্দ করেছিলাম সেটা কখনো ভুলবার নয়। আজ তিনি চলে গেলেন রেখে গেলেন শুধু সেই ক্যামেরার ফুটেজ গুলো। আর মনের ভিতর রেখে গেলেন এক গুচ্ছ ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
কায়রো চলে আসলাম। হটাৎ একদিন আমাকে বলতে লাগলেন, 'মাহমুদ একটা প্রশ্ন কবর, ঠিক ঠিক জবাব দিবা। আমি বললাম, জ্বি, দিব।
তিনি জিজ্ঞস করললেন, মাহমুদ তুমি আমাকে স্যার বলো কেন??
মুন্নি দিদির সামনে আমি একেবারে হতভম্ব হয়েগেলাম। কি জবাব দিব বুঝতে পারলাম না। তবুও বললাম, দিদি আপনাকে স্যার বলে, বিপ্লব ভাই আপনাকে স্যার বলে, আমি বিপ্লব ভাইকে বড় ভাইয়ের মত মনে করি তাই আমিও স্যার বলি। তাছারা বাকি সবাইই তো দেখি আপনাকে স্যার বলে, সমস্ত ছাত্ররাও আপনাকে স্যার বলে। তিনি বললেন, মুন্নি আমাকে স্যার বলে কারণ সে আমার ছাত্রি, সে আমার নিকট পড়েছে। বিপ্লব স্যার বলে, কারন সে এই লাইনে কাজ করে তাই। কিন্তু তুমি বল কেন? তুমি আমাকে ভাই বলতে পার। আর ছাত্ররা স্যার বলে কারন তুমি স্যার বলছ।
আমি একেবারেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। আর কোন জবাবই পেলাম না, তাই বললাম আপনাকে স্যার বলতে পেরে আমি খুশি,,,,,,তাই,,,,,,,,,,,,,,,,
তিনি বুঝতে পারলেন যে আমি কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে পরেছি তাই তিনি টপিক চেন্জ করে ফেললেন, কিন্তু আমার স্বাভাবিক হতে অনেকক্ষন সময় লেগেছিল।
এমন অনেক সৃতি আছে যা সবসময় আমার মনে তারা করে বেরাচ্ছে, তাহলে নাজানি তার পরিবার কিভাবে দিন পার করছেন? কিভাবেই বা তারা স্বাভাবিক হবেন? আল্লাহ তায়ালা যেন তার পরিবারকে ধৈর্য ধরতে শাহায্য করেন ও তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করেন।
সৃতিতে মিশুক স্যার, পড়তে পারেন Click This Link
ছবিতে মিশরের আলেকজান্ড্রিয়া শহড়ের এক ফ্ল্যাটে আমরা কয়েকজন মিশুক স্যারের হাতের রান্না খাচ্ছিলাম। ছবি আমার হাতে তুলা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:২০