সপ্তাহখানেক আগের কথা। আসরের আজানের পর টিউশনিতে গেছি পড়ানোর জন্য। পড়াতে পড়াতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমিও চলে আসতে চাইলাম। কিন্তু আংকেল (স্টুডেন্টের বাবা) আমাকে বসতে বললেন। বললেন মাগরিবের পরপরই বাসায় মিলাদ হবে এবং আমাকে অবশ্যই মিলাদ মাহফিলে থাকতে হবে।
অলরেডি মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে। তাই আমাকে আর উঠতে দেয়া হলনা। স্টুডেন্টের বাসায় মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। যদিও বাসার আর কেউই নামজের দিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাদের কাছে মিলাদের জন্য খানাপিনা রেডি করাটাই ছিল মুখ্য বিষয়। নামাজ পড়া শেষ করে যখন মিলাদের রুমে ফরে আসলাম দেখি আরও সাত-আটজন লোক চলে এসেছে। একেক জনের বেশ একেক রকম। একেক জন একেক জায়গা থেকে এসেছে। অর্থাৎ মোটামুটি দূর থেকে এসেছে। যেহেতু নামাজ পড়ার টাইমের মধ্যে চলে এসেছে, বুঝলাম এরাও কেউই নামাজ পড়েনি।
যাহোক আমিও চেয়ার নিয়ে মিলাদের রুমের এক কোণায় বসলাম। কয়েকজন এখনও আসেনি তাই সবাই মিলে তাদের বাবা সম্পর্কে আলোচনা শুরু করল। প্রথমেই শুরু করল তাদের বাবা দেওয়ানবাগীর গুণগান দিয়ে। যখন বুঝলাম এইদা পিরাগী জলসা মেজাজটা চখাম খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই মিলাদ বিষয়ক চুলকানী আমার অনেক আগে থেকেই, তার উপর আবার ভণ্ড পীরের জলসা।
কথোপকথনঃ
১ম জনঃ আমরা সবাই আশেকে রাসুল দেওয়ানবাগীর ভক্ত।
২য় জনঃ উনি আমাদের পথ খোলার উছিলা।
১ম জনঃ আমার বাবা যার উপর সওয়ার হয় তার দ্বারা সকল কিছুই করা সম্ভব। আমার বাবা পাশে থাকলে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার।
আঙ্কেলঃ (স্টুডেন্টের বাপ) একজন মূর্খের উপর যদি জ্বিন সওয়ার হয়, তবে তার দ্বারা কোরআন পড়া সম্ভব হয়ে যায়। আর আমার বাবা কারো উপর সওয়ার হলে সে দুনিয়ার সব কাজই সম্ভব করতে পারবে। (মনে মনে তখন প্রশ্ন উকি দিচ্ছিল। তগোর বাবাকি তগোরে নামাজ না পইড়াই আশেকে রাসুল হতে বলেছে।)
৩য় জনঃ বাবা আমাদের যেভাবে ইবাদাত শিখিয়ে দিয়েছেন, যেভাবে দোয়া দরুদ শিখিয়ে দিয়েছেন সেগুলো অনুসরণ করলে আমরা বাবার উছিলায় জান্নাতে যেতে পারব। (নাউযুবিল্লাহ। যেই বাবায় তগোরে নামাজ ছাড়াই জান্নাতের পথ দেখাইছে সেই বাবার কপালে উষ্ঠা মারি।)
৪র্থ জনঃ আমার বাবা দেওয়ানবাগীকে পেলে আল্লাহকে পাওয়া যাবে। তাইলে আল্লাহর রাসুলরে পাইবার কি দরকার? (নাউজুবিল্লাহ)
৫ম জনঃ আমার যখন ভালো লাগেনা তখন আমি নামাজ-কালাম বাদ দিয়ে বাবার পা ধরে বসে থাকি। তখন অটোম্যাটিক মনে শান্তি চলে আসে।
--------------- এরকম আরও অসংখ্য আলোচনা তারা করল। আমার পিন্ডি তখন পুরাই চটকে গেছে। কিছুক্ষণ পর বাকী লোক আসায় মিলাদ শুরু হল। কিন্তু, মিলাদের মাঝে যেসব ভণ্ডামি কথাবার্তা তারা উচ্চারণ করেছে তা আর বলতে পারলাম না। শুধু দোয়া-দরুদের উদ্দেশ্য ছিল বাবার সন্তুষ্টি। বার সন্তুষ্টি পেলেই সোজা জান্নাত। শেষপর্যন্ত খাওয়া-দাওয়ার পর আমি কোন রকমে পরীক্ষার কথা বলে সটকে পড়ি।
এখন কথা হলঃ ইসলাম কি এইসব পীর-আওলীয়াদের নাম নিয়ে কাউকে ভণ্ডামি করার অনুমতি দিয়েছে? আর কোন ছাগলের বাচ্চা এদেরকে নিজে নিজে পীর-আওলিয়া ঘোষণা করার অনুমতি দিয়েছে?
এইসব ভণ্ড পীর-মুর্শিদরা ইসলামের নাম নিয়ে ভন্ডামী করে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে। তা দেখে নাস্তিক নামধারী ধর্মের ব্যাপারে চুলকানিওয়ালারা ব্যপক বিনুদুন পাচ্ছে। দেশের সব মাজারগুলোই হচ্ছে ভণ্ডামি আর গাঞ্জার আখড়া। এগুলোকি বন্ধ হবে?
Title: শাহ ভণ্ড বাবা দেওয়ানবাগীর মুরিদানের সাথে এক মিলাদ মাহফিলঃ
Writter: Pythagorus (Facebook Nick)
Fb Post link:
https://www.facebook.com/mhshimulss