somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজচক্রেঃমানুষ ও মেশিন-

১৩ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছর।মানুষ দিনে(২৪ ঘন্টায়) সাধারণত ৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে পার করে।মোট হিসেবে এটা জীবনের ৬ ভাগের ২ ভাগ।৬ ভাগের প্রায় এক ভাগ সময় কেটে যায় পড়াশোনার জন্যও।অর্থাৎ জীবনের অর্ধেকটা সময় ঘুম আর পড়াশোনার পিছনেই শেষ।পড়াশোনার পরই আসে অর্থোপার্জনের পালা।এক্ষেত্রে কেটে যায় ৬ ভাগের আরও একটি অংশ,অনেকক্ষেত্রে ১ ভাগের বেশীই কেটে যায়।এরপর আসে সন্তান লালন-পালন তাদের পড়াশোনা এবং আরও অনেক কিছুই।একই ভাবে লালিত-পালিত হবে সেই সন্তান, তার জীবনও কাটবে একইভাবে।'Student' শব্দটা ভালো-ভাবে উচ্চারন করার আগেই তার কাধে চরিয়ে দেওয়া হবে তার ওজনের প্রায় অর্ধেক ওজনের একটি ব্যাগ।বাচ্চা Student উচ্চারন করতে না পারলে কি হবে!! কাধে বস্তা আছে না?ওতেই বুঝা যাবে যে সে Student।তাকে ভর্তি করার চেস্টা করা হবে কোন নামকরা ভর্তি কোচিংয়ে যেন ভালো কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারে।আরও বড় বস্তা কাধে নিতে হয় এমন স্কুলে ভর্তি করার জন্যই তো ভর্তি কোচিং!!!:|





অনেক ভর্তি কোচিঙয়েরও ডিমান্ড আছে তারা যেন-ত্যান হ্যান-ত্যান ছাত্র ভর্তি করবে না।কারণ তারা Quantity তে বিশ্বাসী না, তারা বিশ্বাসী ছাত্রের Quality তে।ছাত্রের কুয়ালিটি থাকতে হবে নাহলে তো আর ভালো স্কুলে চান্স পাবে না, ফলে তাদের নিজেরই দুর্নাম হবে।তাই অনেক পিতা-মাতা ভর্তি-কোচিংয়ে ভর্তি করানোর জন্য আবার বাসায়ও টিউটর রাখেন।যাহ!! বেটা তোকে ভর্তি করিয়েই ছাড়বো।X((X((



বিকশিত হওয়ার সময়ে পড়া-শোনার চাপে এরা ভালোভাবে বিকশিতই হতে পারে না।এই চাপ বয়ে চলতে হয় দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর বয়স পর্যন্ত।মুরুব্বিরা এই চাপের ব্যপারে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, যেমন "কস্ট না করলে কেষ্ট মেলে না"।আবার অনেক মুরুব্বিই আছেন যারা মাতৃভাষা বাংলার থেকে ইংলিশকে গুরুত্ব বেশী দেয়,তাই তারা বলে "No Pain,No gain"।সারকথা সেই একই "এই কষ্টের কথা চিন্তা করা যাবে না"।মূলত চিন্তাই করা যাবে না।চিন্তা করার সময় কোথায় আগে তো পড়ালেখা নাকি??তারপরও বেশিরভাগ শিশুরা চিন্তা করে,স্বপ্ন দেখে,মনে জাগে বিভিন্ন ধরনের ইচ্ছা।শিশুরা বেড়ে উঠে এই চিন্তা করে যে, পড়াশোনা শেষ করে এক দিন সেই তথাকথিত কেষ্ট বা Gain পাওয়া যাবে,পূরণ করা যাবে নিজের ইচ্ছা।অনেকেই এই কারনে তাদের অতিরিক্ত সময়ও পড়ালেখা করেই কাটায়,তাদেরকে ইংরেজিতে "নার্ড"(Nerd)বলা হয়।পিতা-মাতাও এই ব্যপারে "না" করতে পারেন না।এরপর এই শিশুরা পড়াশোনা শেষ করে দেখতে পায় কঠিন বাস্তবতা।



তাদেরকে চিন্তা করতে হয় অর্থ উপার্জনের রাস্তা।কেও বা আবার শুরু করে দেয় চাকুরির খোজ।অনেকেই এই চাকুরি জিনিশটা সোনার হরিণের মত খুজতে থাকে।এই সোনার হরিণ পেলেই যে জীবন সুখে পরিপূর্ণ হয় তাও কিন্তু না।চাকুরি পাওয়ার পরই বিয়ে।এরপর বাচ্চা-কাচ্চা।পরিবার হয়ে যায় বড়।তার জন্য দরকার বাড়তি ইনকাম।বাড়তি ইনকামের জন্য আবার চাকুরিতে করতে হয় বাড়তি কাজ।ফলস্বরূপ সকাল ৮ থেকে ৪-৫ টা চাকুরি,তারপর একটু ঘুম,রাত্রে একটু টিভিতে খবর দেখা,খাওয়া-দাওয়া,মাঝে মাঝে বাচ্চার পড়ালেখায় নজর দেওয়া,তারপর ঘুম,সকালে আবার চাকুরি......এই তো জীবন,এই হল সেই সুখ যার জন্য দীর্ঘ ২৫ বছরের শ্রম।এখানে ইচ্ছা পূরণ করার সময় কোথায়??দীর্ঘ ২৫ বছরের শ্রম আসলে তাকে শিক্ষিত করার জন্য নয়, তাকে পরিপূর্ণ ভাবে মেশিন বানানোর জন্য।/:)





কোনো সাময়িকী বা পত্রিকায় একটি জরিপ দেখেছিলাম।জরিপটি থেকে পাওয়া যায় "প্রায় ৮৭% কর্মজীবী মানুষ নিজেকে অসুখী হিশেবে বিবেচনা করেছেন"।এমনকি ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করে এমন কর্মজীবীদের সেন্স অফ হিউমারও কমে যায়,যা কিছুটা মেশিনেরই ইঙ্গিত বহন করে।এরপর আসে বার্ধক্য।মানুষের জীবনের এই সময়ে সে বাস্তবিক অর্থে চিন্তা ও উপলব্ধি করার জন্য সময় পায়।এই সময়েই সে বুঝতে পারে যে, "আসলে তেমন কিছুই তো করা হলনা যা আমি করব বলে ভেবেছিলাম,ছোটোকালের স্বপ্নগুলোর কিছুই তো পূরন হল না"।অনেক কিছুই তো করার ছিল।অবশ্য অনেক বৃদ্ধই ছোটোকালে স্বপ্ন দেখারও সময়-সুযোগ পায়নি।টিচারের বেতের ভয়ে তাদের মন স্বপ্ন জিনিসটাকে একটু দুরেই রাখত,পড়া না শিখলে টিচারের বেতের বাড়ি খেতে হবে তাই আগে পড়ালেখা।X(



বৃদ্ধকালে মানুষ এই ভেবে দুঃখিত হয়না যে কি কি সে করেছে বরং এই ভেবে দুঃখিত হয় যে কি কি সে করেনি।স্মৃতিচারণ করে সময় কাটানই তার প্রধান কাজ হয়ে পড়ে।কারো বা ছোটোকালের ইচ্ছা থাকে অ্যামাজনে একটি দিন কাটানোর,কারো বা থাকে গ্রেট ব্যারীয়ার রিফে সাতার কাটা'র কিন্তু তা বাস্তবতায় রুপ পায় কয়জনের ক্ষেত্রে??"ইচ্ছা" নামক জিনিসটাকে পূরন করতে দুইটি জিনিসের সাধারনত প্রয়োজন হয় আর তা হল সময় ও সামর্থ।তরুণকালে ইচ্ছা পুরনের জন্য সময়টা থাকে কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য থাকে না।এরপর কর্মজীবনে আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য থাকলেও যা থাকে না তা হল সময়।বার্ধক্যে এসে সময় এবং আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও থাকে না দৈহিক সামর্থ্য।



তারপরও তারাই বাচ্চাদের কে বলে থাকে No pain,No gain টাইপের কথা।এই কথা বলার সময় সে চিন্তা করে না যে সে নিজে এই Pain করে কি gain করল।বাচ্চাদের কাছে সে উদাহরণ দেয় তার থেকে বেশী ইনকাম করে বা বেশী বিত্তশালী এমন কোনো লোকের যে কিনা বাস্তবে তার থেকেও অসুখী।সেই বাচ্চা বড় হয়েও একই কাজ করবে।এভাবেই পূরণ হয় চক্র।ছোটোকালের স্বপ্ন গুলো থেকে যায় বৃদ্ধ বয়সের সান্তনা হিসেবে অথবা আফসোস করার একটি কারণ হিসেবে।মাঝবয়সে মেশিনের মত কাজ করার জন্য সময় পাওয়া যায় না ইচ্ছা পূরণের।কেন বেশিরভাগ মানুষই ছোটোবেলায় স্বপ্ন দেখে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই বড় হয়ে মেশিনে পরিনত হয়?অধিক সুখের জন্য মেশিনের মত কাজ করে টাকা উপার্জন করে কি সুখটা পায় মানুষ??কেন বাবা-মা মুখে বলে মানুষ হতে হবে কিন্তু সবধরনের চেস্টা করে রক্ত-মাংসের মেশিন বানাতে???
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×