somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্রসূতিমৃত্যু

১১ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃতীয় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অত্যধিক রক্তক্ষরণেই মারা গেল রাবেয়া, সাথে সন্তানটিও। আগের দু‘সন্তান প্রসবে তেমন কোন জটিলতা হয়নি তার, গ্রাম্য দাইয়ের সাহায্যে সহজেই প্রসব হয়েছিল। কিন্তু এবার শেষরক্ষা হলোনা। মরেই তাকে প্রমাণ করতে হলো যে, প্রসবের মতো জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অনভিজ্ঞ এবং অশিক্ষিত দাইয়ের ওপর ভরসা করতে নেই। আসলে জরায়ুতে সন্তানের উল্টা-পাল্টা অবস্থানের (ডিসপ্লেসড) বিষয়টি আদৌ জানতে পারেনি জামেলা দাই। ফলে প্রচন্ড বেদনায় রাবেয়ার দীর্ঘ চারঘন্টার ছটপটানি আর দাইয়ের প্রাণপণ টানাহেঁচড়ায় অকালে ঝরে গেল দুটোপ্রাণ। প্রচুর রক্তক্ষরণে রাবেয়ার মৃত্যুতো ঘটলোই অধিকন্তু দাইয়ের ভুলে নিস্পাপ নবজাতকটির প্রাণপ্রদীপও নিভে গেলো। অথচ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে হয়তো রাবেয়ার মৃত্যু এড়ানো যেতো যদিও নিরাপদরক্ত সংগ্রহের ব্যাপারটিও আজকাল সত্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ‘হু’র পরিসংখ্যানমতে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫লাখ নারী গর্ভধারণ কিংবা প্রসবজনিত জটিলতায় মারা যান। বাংলাদেশে গত ১৫বছরে মাতৃমৃত্যু ২২শতাংশ কমলেও এখনও প্রতিবছর ১২হাজার মায়ের মৃত্যু হচ্ছে গর্ভ ও প্রসবকালীন নানা জটিলতায়। আর প্রতিলাখে মারা যাচ্ছেন ৩২০জন প্রসূতি মা। এরমধ্যে ২৫% মারা যান রক্তক্ষরণের দরুণ। অর্থাৎ ৩২০জনের মধ্যে রক্তক্ষরণজনিত কারণেই মারা যাচ্ছেন ৫৫জন প্রসূতি। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ও নিরাপদ রক্তপরিসঞ্চালনের অভাবে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মাকেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে। অথচ নিয়মিত রক্তসংগ্রহ ও সঠিক সময়ে নিরাপদরক্ত ব্যবহার করলে এধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত মাতৃমৃত্যুরোধ করা সম্ভব। কিন্তু রোগাক্রান্ত, রক্তবাহিত ঘাতকরোগের জীবানুবাহক পেশাদার রক্তদাতাদের দৌরাত্ম্য নিরাপদরক্ত পরিসঞ্চালন আন্দোলনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘হু‘র সূত্রমতে, আমাদের দেশে রক্তের চাহিদা প্রতিবছর প্রায় ৪লাখ ব্যাগ। ২০০০সালে দেশের শতকরা ৭০% রক্তই সংগৃহিত হয় পেশাদার রক্তদাতা থেকে। অথচ ঐ রক্তদাতাদের শতকরা ২৯জনই হেপাটাইটিস বি, ৬জন হেপাটাইটিস সি ও ২২জন সিফিলিসের বাহক এবং এদের কারুরই হিমোগে­­াবিন ৪০শতাংশের বেশি নয়।

এজন্যই স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের ‘নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি’র (এবিটিপি) আওতায় ২০০০সালে সরকারি উদ্যোগে ৯৮টি কেন্দ্রে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। বাধ্যতামূলক ব­­াড স্ক্রিনিংয়ের ফলে ২০০৪সালে পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যা ১০শতাংশে নেমে আসে। অপরদিকে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে ২৬ভাগে উন্নীত হয়। উলে­খ্য যে, ১৮ থেকে ৫৭বছর বয়সী যেকোন সুস্থ-সবল ব্যক্তি প্রতি চারমাস পরপর স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারেন। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির কোন আশংকা নেই। বাধ্যতামূলক ব­­াড স্ক্রিনিংয়ের ফলে রক্তের মাধ্যমে এইড্সসহ হেপাটাইটিস বি, সি ও সিফিলিসের বিস্তারও বহুলাংশে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এইচআইভি/এইড্স, হেপাটাইটিস বি ও সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার জীবানু স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ২০০১সালে ৯৮টি কেন্দ্রে প্রায় ৯৭হাজার, ২০০২সালে প্রায় একলাখ ৭১হাজার, ২০০৩সালে একলাখ ৮১হাজার ১৫, ২০০৪সালে প্রায় একলাখ ২২হাজার, ২০০৫সালে ২লাখ ৩২হাজার ২৭৯ ও ২০০৬সালে ২লাখ ৫৩হাজার ৭৫ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করা হয়। এরফলে উলি­খিত দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্তগ্রহীতারা রক্ষা পায়। জানা গেছে, দেশের বেসরকারি ব­­াডব্যাঙ্ক প্রতিস্থাপনকে সহজতর করতে সরকার ‘নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন/২০০০’ অনুমোদন করে এবং ২০০৪সালের ১ আগস্ট এটি কার্যকরী হয়। চাহিদানুযায়ী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপে­ক্সপর্যায়ে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনব্যবস্থার সম্প্রসারনপরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন আরও ১০০টি কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং এরমধ্যে ৫৬টি কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি সরবরাহও করা হয়েছে। এছাড়া গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কাউন্সিলে ‘জাতীয় নিরাপদ রক্তনীতি’ অনুমোদিত হয়েছে।

এদিকে, বিগত ভেজালবিরোধী অভিযানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ফাঙ্গাসপড়া ও সবুজরঙ্গা রক্ত ব্যাগভর্তি অবস্থায় পাওয়া গেছে। সংশি­ষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর মনিটরিংব্যবস্থা না থাকায় এধরণের মরণঘাতী অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নীতিমালা কঠোর ও কার্যকরভাবে প্রয়াগের কোনই বিকল্প নেই। এমনি এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৪জুন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যরাষ্ট্রসমূহের সাথে প্রতিবছর একযোগে বাংলাদেশেও পালিত হয় ‘‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।“

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×