somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আদৌ ইসলামসম্মত নয়

১১ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠাতা ও বাসত্মবায়নকারী হজরত মুহম্মদ কর্তৃক আল কুরআনের আলোকে আই-ইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারযুগকে নজিরবিহীন এক স্বর্ণযুগে রূপামত্মরের ইতিহাস জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে কমবেশি সবারই জানা আছে। নবী (সা এর জীবদ্দশায় এবং চার খলিফার রাজত্ব থেকে শুরম্ন করে আজ পর্যমত্ম পৃথিবীর ইতিহাসে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধযুদ্ধ ব্যতীত বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ বা কোনরূপ সন্ত্রাসের প্রতি ইসলামধর্ম বা তার নবী অথবা মুসলমানদের সমর্থনের নজির কেউ কখনো হাজির করতে পারবে না। এমনকি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসেও ইসলামধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, তথাকথিত বোমাবাজী, নির্বিচারে মানুষহত্যা বা জঙ্গিবাদের কোন উদাহরণ নেই। শুধু তাই-নয়, স্বাধীনতার ৪০ বছরের ইতিহাসে দেশের পরিচিত ইসলামী দল বা ধর্মভীরম্ন আলেম-ওলামা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধেও কখনো জঙ্গিবাদের অপবাদ শোনা যায়নি।

কারণ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের পক্ষে ইসলামের একবিন্দু সমর্থন অতীতেও ছিলনা বা এখনো নেই। এমনকি সাম্প্রতিককালে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের ধারণাও বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একদমই অভিনব অন্তত: বাংলাদেশের লোকদের কাছে তো বটেই। বস্ত্ততপক্ষে ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পক্ষেই অনড় বলে ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতেও সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। এর সমর্থনে ইতিহাসে নজিরবিহীন সব কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে, যা অনেকেরই জানা থাকার কথা। তন্মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, হজরত ওমর (রা) এর সময় এক মুসলিম সৈনিক গোপনে বিধমীদের এক মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলায় খলিফার কাছে নালিশ আসে। পক্ষপাতহীন তদন্তসাপেক্ষে ওই সৈনিককে চি‎‎‎হ্নত করার পর ওমর (রা) অপরাধীকে অভিযোগকারীর হাতে তুলে দিয়ে তারও নাক কেটে নেয়ার নির্দেশ দেন। অন্য ধর্মের প্রতি বাড়াবাড়ির বদলে নজিরবিহীন ন্যায়বিচার দেখে ততক্ষণাৎ অভিযোগকারী ক্ষমা করে দেন ওই সৈনিককে।

এটাই ইসলামের প্রকৃত রূপ এবং ইসলাম যে সন্ত্রাসের ঘোরবিরোধী, তা আল কুরআনেও বলা আছে এভাবে, ‘‘যারা সমাজে সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তোমরা পরস্পর বিপরীতদিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে দাও।’’ হাদিসে বলা হয়েছে ‘‘যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা অনিরাপদ, সে মুসলমানদের অমত্মর্ভূক্ত নয়।’’ এধরণের অসংখ্য কুরআন-হাদিসের বাণী উপস্থাপন করা যায়, যা জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটনেরই সমার্থক। তাছাড়া, ইসলামে শিয়া-সুন্নি, হানাফি, শাফিঈ, হাম্বলী এমনকি বিতর্কিত কাদিয়ানী, বাহাই প্রভৃতি মতবাদ নিয়ে আকাশ-পাতাল মতপার্থক্য থাকলেও বিনাবিচারে মানুষহত্যা এবং ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ যে সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী, এব্যাপারে কিন্তু কারুরই কোনো দ্বিমত বা মতাপার্থক্য নেই। আসলে মসজিদের জুতাচোররা টুপি-পাঞ্জাবীপরা থাকলেও যেমন চোর, তেমনি ইসলামের নামে সন্ত্রাসকারীরাও জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী, এটাই ইসলামের কথা আল কুরআনের বক্তব্য। এজন্যই হাদিসে বলা হয়েছে যে, পরকালে বিভ্রান্ত আলেমদের শাস্তি হবে সবচে বেশি ও মর্মন্তুদ। তাই বলা বলা চলে, দাঁড়ি-টুপিধারী জঙ্গিবাদের ধারক-বাহকরা প্রকৃতপক্ষে মাওলানা, আলেম, মুফতি, হাফেজ নামধারী হলেও বিভ্রান্ত মুসলিমমাত্র।

তবে খুব আশার কথা যে, এসব জঙ্গি বা সন্ত্রাসীর পেছনে যেমন কুরআন-হাদিসের সমর্থন নেই; তেমনি এদেশের প্রকৃত আলেম-ওলামা, ইসলামীদলসহ সাধারণ মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোন দরদও নেই। সর্বসাধারণ এবং আলেমদের সচেতনতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাবের দরুনই সরকার দ্রুততম সময়ে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই, মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি নেতাদের ধরতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি ইতোমধ্যে তদের কারো মৃতুদন্ডও কার্যকর করা হয়েছে।


হিন্দু-মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যুগ যুগ ধরে এদেশে সহাবস্থান করলেও ধর্মের আলখেল্লায় জঙ্গিবাদের মুখোমুখি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রথম। যতদূর জানা যায়, হরকাতুল জিহাদ নামের জঙ্গি সংগঠণের আড়ালে মুফতি হান্নান কর্তৃক ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সর্বপ্রথম বিশালাকার ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পূঁতে রাখা হয়েছিল। এভাবে ২০০৫ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাপ্রচেষ্টা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমাহামলা, উদিচীর অনুষ্ঠানে বোমাহামলা, একযোগে সারাদেশে বোমাহামলাসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঘটেছে এবং বহু নিরীহ মানুষ আহত-নিহত হয়েছেন, যার জন্য দায়ী ইসলামের নাম ব্যবহারকারী ছদ্মবেশধারী জঙ্গিরাই।

বাংলাদেশে বহু ইসলামীদল থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী দলগুলোর মতো জঙ্গিবাদের অভিযোগ ইতিপূর্বে শোনা যায়নি। কোনো কোনো দল বা তার নেতাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদসহ স্বাধীনতাবিরোধিতা বা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভূঁইফোড় এসব অখ্যাত সন্ত্রাসী, বোমাবাজ-জঙ্গিবাদী সংগঠন ও নেতাদের ইসলামী নামের পাশাপাশি মাওলানা, শায়খ, মুফতি, হাফেজ ইত্যাদি লকবের কারণে মুসলমান-অমুসলমানদের মধ্যে পবিত্র ইসলামধর্ম এবং কোরআন-হাদিস সম্পর্কেও সন্দেহ-বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত: নবপ্রজন্মরা এক্ষেত্রে বেশ বিভ্রান্ত। কেউ কেউ আবার ইচ্ছায় হোক-অনিচ্ছায় হোক পাশ্চাত্যের অনুকরণে ‘‘ইসলামী জঙ্গিবাদ, ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’’ ইত্যাদি আবিষ্কারের মাধ্যমে পবিত্র ইসলামের গায়ে কলঙ্কলেপণেরও চেষ্টা করে থাকেন, যা সঠিক নয়। কেননা ইসলাম-ইসলামই আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদই। অস্ত্রধারী পুলিশ আর ডাকাতের মধ্যে যেমন তফাৎ আছে তেমনি সুস্পষ্ট পার্থক্য হচ্ছে ধর্মভীরূ মুসলমান আর জঙ্গিবাদীদের মধ্যে, একথা ভুললে চলবেনা। সব ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেই একথা খাঁটে।

কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তেমনি সন্ত্রাসীর কোন দল নেই, ধর্মও নেই। যদি তা-ই না হতো, তাহলে এদেশের প্রথিতযশা ধর্মীয় গুরু আলেম-ওলামারাই সর্বাগ্রে সন্ত্রাসী হতেন, বোমাবাজ ও জঙ্গিবাদী হতেন। কিন্তু এমন ঘটনা কখনো এদেশে ঘটেনি। কিন্তু তাই বলে, ধর্মের পোশাকপরিহিত গুটি কয়েক জঙ্গিবাদীর কারণে শান্তি-সহাবস্থানের ধর্ম, সহানুভহতি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে হাজারবছর ধরে লালিত বিশ্বাস-ধারণা এবং অভিজ্ঞতা কি একমূহুর্তেই মিথ্যে হয়ে যেতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এদেশের মূলধারার আলেম-ওলামাসহ সাধারণ জনতার সন্দেহ ও বিশ্বাস হচ্ছে, পবিত্র ইসলামধর্মকে বিতর্কিত-সন্দেহযুক্ত করার মানসে এবং নবপ্রজন্মকে ইসলাম সম্পর্কে ভুলধারণা প্রদানের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়েই এসব জঙ্গি কারো ক্রীড়নকের কাজ করছে মাত্র।

তাই ইসলামবিরোধী এসব সন্ত্রাসীর মুখোশ উন্মোচন এবং এদের আইনের হাতে সোপর্দ করার দায়িত্ব দেশপ্রেমিক জনতার। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন আর এধরণের সন্ত্রাস চালাতে না পারে, সেদিকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। এমনকি এসব জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে একদিকে যেমন ধর্মের বদনাম ঘুচবে তেমনি মানবতা, দেশ ও জাতির বিরাট খেদমত করা হবে। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে যে, দেশপ্রেম হচ্ছে ঈমানের অংশ! নবী সাঃ এও বলেছেন, ‘‘কারো সামনে অন্যায়-জুলুম সংঘটিত হলে সে যেন তা শক্তিদ্বারা প্রতিহত করে। এতে অপারগ হলে সে যেন এর প্রতিবাদ করে। এটাও না পারলে যেন মনে মনে ঘৃণা করে আর এটা হচ্ছে দূর্বলতম ঈমানের লক্ষণ।’’ আর পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে - ‘‘ যে কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো। আর যে কারো প্রাণরক্ষা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করলো। (আল মায়েদা-)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×