সব পুলিশ অমানুষ না। আমি একজন মানুষ পুলিশের কথা বলছি।
যার চাকুরি আছে, সাধারণ মানুষের মতো যার ঘর আছে সংসার আছে। তাদের ভরণ পোষনের দায়ভার আছে। এর পাশাপাশি আছে যার সীমাবদ্ধতা, নিজের ইচ্ছায় বিবেকের দায়বোধ থেকে যিনি সবকিছু করতে পারেন না।
পুলিশরা আজ জিম্মি। রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের নিকট জিম্মি। রাজনৈতিক ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে গিয়ে একজন সৎ পুলিশ অফিসারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে যে কী পরিমান চ্যালেন্জের মোকাবিলা করতে হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগি মাত্রই জানেন।
একদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা আর অন্যদিকে প্রশাসনিক ক্ষমতা আর এর ভিতরে জন্ম নেয় অনেক নাটক। আপনি হয়তো নিজে কোনোদিনও জানবেন না ,একজন নিরাপরাধ পুলিশ অফিসার কীভাবে ফেঁসে যায়, তার পুরোটা জীবনটাকে কীভাবে তছনছ করে দেয়া হয়। আর তার সংসারের প্রতিটি মানুষ কীভাবে প্রতিনিয়ত কী ব্যাকুল হয়ে ফরীয়াদ করতে থাকে।
রাজনৈতিক শক্তি আর দূর্নীতি পরায়ন প্রশাসনের কাঁচির ভিতর মাথা রেখে প্রতিনিয়ত একজন সৎ পুলিশ অফিসারকে চলতে হয়। একটু এদিক ওদিক হলেই মাথা দ্বিখন্ডিত। তখন তার কী করার থাকে। হয়তো রাজনৈতিক ক্ষমতার দানবীয় শক্তির সাথে আঁতাত করা নয়তোবা চাকুরি ইস্তফা দেয়া।কিন্তু তা করা এতো সহজে যে সম্ভব নয়। কারণ ঐ যে সংসারের আকুতি, পরিবাবরে ভরণ পোষণের দায়ভার। আর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে শান্তি তাও সম্ভব নয়- কারণ- রাজনৈতিক মামলায় হয়তোবা যেকোন সময় আটকে যেতে পারেন।
একটা কেস স্টাডি: একজন পুলিশ সুপার নতুন জেলায় বদলি হয়ে এসেছেন। পারিবারিক ঐতিহ্য, ন্যায়পরায়ণতা,সততা আর বিবেকের দায়বোধ থেকে চাইলেন সমস্ত দূর্নীতি, ঘুষের লেনদেন সমূলে উৎপাটন করতে। এভাবে চললো মাস দুয়েক। এরপর আসতে থাকলো উপর মহল থেকে ফোন, রাজনৈতিক প্রেশার, দলীয় ক্যাডারদের অবাধে চলাচল দানের নির্দেশ, প্রবাহমান ঘুষের ধারায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য থ্রেট...,, কাকে ধরতে হবে,কাকে ছেড়ে দিতে হবে তার সরাসরি নির্দেশ। অথচ পত্রিকার পাতায় মান্যবর মন্ত্রীর ,সাংসদের বক্তব্য ছাপা হলো, সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশকে সব রকমের সাহায্য প্রদাণ করা হবে।
সেমিনার হয়, কনফারেন্স হয় পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকীকরণ করা হবে।কিন্তু যারা সৎ পুলিশ অফিসার রয়েছেন তাদেরকেই যথাযথ ভাবে কাজ করতে দেয়া হয়না।
এইসব সৎ পুলিশ অফিসারদের কীভাবে জিম্মি হয়ে কাজ করতে হয়, তা ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়, এটা কেমন সভ্যতা। কেমন করে সাধারণ মানুষের চিন্তাশক্তিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। যতদিন পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক শক্তি, ক্ষমতাসীন দল পরিশোধিত না হবে- ততদিন পর্যন্ত এদেশের কোনো সেক্টরই দূর্নীতি মুক্ত হবেনা।
একজন সাধারণ দলীয় রাজনৈতিক ক্যাডারের হাতে যখন একজন পুলিশের এসপি'র জবাবদিহি করতে হয়-কেন তাদের দলের সাংগ পাংগকে ছেড়ে দেয়া হবেনা- এরচেয়ে বড় রাজনৈতিক ক্ষমতার পাপ আর কী হতে পারে?
সব পুলিশ অমানুষ না, যারা অন্তত মানুষ পুলিশ আছে তাদের মানুষ হিসাবে থাকতে দিন।