somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুনে যাও মা........

১০ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরে অঝোরে বৃষ্টি ঝড়ছে, জানালার পাশে বসে দেখছি তাই। সেদিন এক নাটকে দেখলাম বাঁধন কাকে জানি বলছে যারা বৃষ্টি পছন্দ করে তারা জোছনা পছন্দ করে, যারা জোছনা পছন্দ করে তারা এইটা পছন্দ করে, ওইটা পছন্দ করে -- এইসব হাবিজাবি। মোদ্দা কথা বৃষ্টি আর বর্ষা যারা পছন্দ করে, জোছনা খায় তারা অনেক রোমান্টিক, তাদের মেয়েরা অনেক পছন্দ করে। বৃষ্টি ব্যাপারটা ছোটবেলা থেকেই আমার জন্য বিরক্তিকর। যখন অঝোরে জলধারা ঝরে যেত, বাইরে বেরুনো বন্ধ হত, আমার হতাশার শেষ ছিল না। আর বাড়িতে আব্বু থাকলে তো অবস্থা আরো খারাপ, অঙ্ক কষ। উফ!!!

বৃষ্টির দিনে প্রিয় খেলার মাঠটা জলে থই থই করত, ক্রিকেটের পিচটা ভিজে একাকার, কতবার গিয়ে যে দেখতাম পিচটা শুকোলো কিনা, কেউ খেলতে এল কিনা! বোরিং সেই বৃষ্টিটা আজো আমার মাঝে অন্য কোন অনুভূতি সৃষ্টি করে না, আমি বিরক্ত হই, ভীষণ বিরক্ত, সবকিছু স্যাতস্যেতে। সবকিছু যেন থমকে যায়।

লাভের মধ্যে একটাই, অলস মস্তিষ্কটাকে যথেচ্ছ শয়তানিতে নিমজ্জিত রেখে সময়টা পার করা যায়। তার উপর আব্বুতো আজ আর কাছে নাই, কেউ চোখ পাকিয়ে বলে না এইটা কর, ওইটা কর, সময়টা তাই একান্তই আমার।

আজ কেন জানি বিচ্ছিন্ন শয়তানিগুলো ঠিক এক করতে পারছি না কিছুতেই, বার বার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চারপাশটা খানিক অন্ধকার, আলোআঁধারি একটা ব্যাপার-স্যাপার। চাচার বাড়ী যাওয়া দরকার, হতচ্ছাড়া বৃষ্টি যেন থামবে না বলেই পণ করেছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হব হব করছে, রাত নামলেই আমি ইদানিং ভয় পাই কেন জানি।

বাড়ি থেকে আসার সময় আম্মু বারবার বলে দিয়েছিল, রাত বিরেতে বাইরে যাবে না, ঢাকা চোর আর ছিনতাইকারী দিয়ে ভরা। আমার জন্য আম্মুর টেনশনটা তো আমি বুঝি। অদরকারে তাই বাইরে বেরুই না তেমন রাতের বেলা, শুধু ক্যাম্পাসে হাটি মাঝে মাঝে, একদল বন্ধুর ভিড়ে হইচই আর হট্টগোলে।

বেচারি মা তো আর জানে না, তার ছেলে এখন আর চোর/ছিনতাইকারী তেমন ভয় পায়না। এই নয় যে তার ভীতু ছেলেটা হঠাত করে বীরপুরুষ কিংবা তাদের সর্দার টাইপ কিছু হয়ে গেছে। আমি ভয় পাই, অনেক ভয় পাই, অনেক ভীতু না হলেও সাহসী টাইপ কিছু যে না, তা নিজেও খুব ভাল করেই জানি। আমি কাদের ভয় পাই জানলে তুমি অবাক হবে মা, হয়তো আঁচলে মুখ চেপে বলবে ওমা, পাগল ছেলেটা কি বলে? বলবে, তুই কি চোর না ডাকাত যে ওদের ভয় পাবি? ওরা তো তোর বন্ধু, ওরা আমাদের বন্ধু, খারাপ মানুষের হাত থেকে তো ওরাই বাঁচাবে তোকে পাগল ছেলে।

মা-টা কি বোকা! মা-রা মনে হয় এমন বোকাই হয়, নিজেকেই বলি আমি। মা তুমি তো জানো না, আমি পুলিশ কেন ভয় পাই, যে পুলিশকে তুমি ছোটবেলায় জনগণের বন্ধু বলে চিনিয়েছিলে। বলেছিলে এই পবিত্র উর্দি পড়া মানুষগুলো থাকতে ভয় নাই।

মা, তুমি কাদের ভাইকে চেনো? জানি চেনো না। চিনবে কেমন করে, মানুষটাকে তো আমি_ই চিনতাম না এই সেদিনও। আচ্ছা মা, ছোটবেলায় তুমি যে বলতে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি? মা, স্বাধীনতা মানে কি? রাতের বেলা আত্মীয় বাড়ি থেকে ফিরলে জনগণের বন্ধুরা আমাকে ছিনতাইকারী বলে পেটাবে, এর নাম স্বাধীনতা? আমার পা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তে মেঝে ভিজিয়ে ফেলবে, আমি ছিনতাইকারী, এই কথাটা বানিয়ে বলতে হবে, নইলে অকথ্য নির্যাতন করবে, এর নাম স্বাধীনতা মা?

মা, আমিনবাজারের কথা তোমার মনে আছে? ভোলার কথা তো না, এইতো সেদিনের ঘটনা, পুলিশের সামনে ছয়জন মানুষকে মেরে ফেলল ডাকাত সন্দেহে। মা, এর নাম কি সভ্যতা? সন্দেহ হলেই কি এভাবে মানুষ মেরে ফেলা যায়?

মা, মিলন ছেলেটাকে জান? হয়তো মিলন মেয়েটাকে ভালবাসত মা, ওই যে দুঃসম্পর্কের মেয়েটার জন্য ছুটে গিয়েছিল পাশের গাঁয়ে কিংবা বহুদিন দেখা হয়নি আদরের বোনটার সাথে। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মা, বোঝইতো, ঝামেলা একটা ছিল বলেই তো ছেলেটা ওদের বাড়ি যেতে পারে নি, বসেছিল একলাটি পুকুর ঘাটে। গ্রামের লোকজন এসে কয়েক দফা জিজ্ঞেস করেছিল ছেলেটাকে, এমনকি মেয়েটাকে নিয়ে এসে পরিচয় নিশ্চিত করেছিল। তবু গ্রামের লোকগুলোর সন্দেহ যায় নি, তার পকেটের টাকা আর মোবাইল কেড়ে নিল সভ্য মানুষগুলো(!), তাতেই শেষ না, পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিল ডাকাত সন্দেহে, যেন অপরিচিত মানুষগুলো ডাকাত হয়ে যাচ্ছে আজকাল। গ্রামের লোকগুলোর দোষ দেই কেমন করে, আমার বাড়ি ডাকাতি হয়ে যায়, সরকার পারে না আমাকে নিরাপত্তা দিতে, যখন বাধ্য হই নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ত নিজে নিতে, যখন তোমার জনগণের বন্ধু বলা পুলিশগুলো আমড়া কাঠের ঢেঁকি, মিলনকে তো আমি ডাকাত ভাববোই!

মাগো, এরপর কি হল জানো? মিলনকে নিয়ে গেল পুলিশবন্ধু, ছেড়ে দিল জনগণের মাঝে, বলল পিটিয়ে মেরে ফেলতে। মরে গেল ছেলেটা, মরে যাওয়া কত্ত সহজ, দেখেছো মা?

মা, আমি আর দাদু বাড়ি, নানু বাড়ি যাবো না, ওখানে আমাকে কয়জন চেনে বল? আমাকে যদি ডাকাত বলে ধরিয়ে দেয়? তুমি কি পারবে মা, তোমার ছেলেকে মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এটা সহ্য করতে? পারবে এত আদরের ছেলে, যাকে বাসে তুলে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে তুমি আঁচলে চোখ মোছ বারবার, তোমার রিকশাটা পেছনে ফেলে তোমার আদরের ছেলেকে নিয়ে বাসটা এগিয়ে যায়, ছেলের মুখ আর একটিবার দেখতে আকুল হয়ে তাকিয়ে থাক যে তুমি, অপসৃয়মান বাসটা ঝাপসা হয়ে আসে, তাকে ডাকাতের মা অপবাদ নিয়ে কবরে রেখে ফিরে আসতে পারবে তো মা?

টিউশনি থেকে ফিরতে প্রায়_ই রাত হয়ে যায়, ফেরার পথে যদি পুলিশ আমাকে ধরে ছিনতাইকারী বলে, যদি স্টুডেন্ট আইডিটাও আমাকে নিরাপত্তা না দিতে পারে, পারবে মা তোমার পঙ্গু ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে?

আর কত উদাহরণ চাও তুমি? তোমার ছেলেটাও একদিন হয়ত উদাহরণ হয়ে যাবে, সেদিন শুধু চোখ মুছো, আর অভিশম্পাত দিও। এর বেশি তোমার কাছে চাইবো না মা, আমি তো জানি তোমার ছেলের কিছু হলে তুমি বিচার পাবে না, অযথা ছুটোছুটি করে নিজেকে কষ্ট দিও না, আমি জাতির পিতা কিংবা স্বাধীনতার ঘোষকের কেউ নই, আমি দেশনেত্রী কিংবা জননেত্রীর সোনার ছেলে নই, খুব সাধারণ তোমার ছেলে মা। তোমার ছেলে মরে পচে যাবে, পচা সে লাশের গন্ধে ওনাদের বাতাস ভারী করতে যেও না।

ভাবছো কেন তোমাকে বলছি এইসব, এইসব অন্যায়ের প্রতিকার করতেই তো তুমি প্রতি পাঁচ বছর পরপর ভোট দাও সুনাগরিকের মত, তাদের কাছে বললেই তো প্রতিকার পাব আমি। মাগো, এইসব কি তোমার কাছে অন্যায় মনে হচ্ছে? এইসব ঘটছে অহরহ, তুমি কি বলবে আইন শৃঙ্খলা এখন অনেক ভাল? তোমাকে তো চিনি মা, পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেছে এরই মাঝে, ছেলেটা কি করে নিরাপদ থাকবে এত পঙ্কিলতার মাঝে তা নিয়ে অজানা আশংকায় কেঁপে উঠছো বারবার। নিশ্চয় বলবে ন্যায় বলে কি কিছু আছে এসবের মাঝে? হা হা হা, তুমি সত্যি বোকাই রয়ে গেলে মা, যাদের হাতে তুমি তোমার ছেলেদের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছ, তারা বলেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা আগের চাইতে অনেক ভাল, তুমি টেনশন করো না মা, তোমার ছেলে ভাল থাকবে।

আজ আর চোর/ছিনতাইকারী কেন ভয় পাই না, বুঝেছো মা? ওরা মারলে সেটাই বরং স্বাভাবিক হত, কিন্তু বিপদে পড়লে যাদের কাছে যেতে শিখিয়েছ, তারাই যদি আজ মারে আমাকে, কার কাছে যাব বলে দিয়ে যাও। এর নাম যদি স্বাধীনতা হয়, ফিরিয়ে নাও মা এই স্বাধীনতা, স্বাধীনতার বিষবাষ্পে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, আমাকে মুক্তি দাও। এই আতংক নিয়ে আমি চলতে চাই না।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×