somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঃশব্দ নৈবেদ্য

১০ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় বড্ড নিঃশব্দ ঘাতক। যখন সে চলে যায়, আস্তে-ধীরে যায়, কোন সাড়াশব্ধ পাওয়া যায় না। তারপর হঠাৎ একদিন যখন চোখে আঙ্গুল পড়ে, তখন বোঝা যায়। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। সেই সময় তো ফিরে পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের বয়স চল্লিশ হয়েছে। একটা পরিণত বয়স। এই বয়সে একজন যুবক অনেকটাই থিতু হয়ে আসে। সে তার গন্তব্যের অনেকটা পথ ইতিমধ্যেই অতক্রম করেছে এবং স্পষ্টতঃই বুঝতে পারে তার পরবর্তী পথটা কেমন হবে এবং কোন দিক দিয়ে কোথায় যাবে। সে তার চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার সবকিছুই গুছিয়ে আনে।

আমরা যদি বাংলাদেশকে একজন একই বয়সী যুবকের সাথে তুলনা করি তাহলে কি পাই? সময় যেন চোখে প্রচন্ড এক খোঁচা দিয়ে দেখিয়ে দেয় - পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ! চল্লিশ বছর, অনেকগুলো বছরই তো! অবশ্য এই চল্লিশ বছরের মধ্যে আদতে কতগুলো বছর সে ঠিক পথে চলেছে তাও তর্কসাপেক্ষ। পথে হয়ত দু’একবার উঠেছে, কিন্তু পরমূহুর্তেই ছিটকে পড়েছে।

এই চল্লিশ বছরে আমরা কি তেমন কিছু পেয়েছি? হঠাৎ বিচ্ছিন্ন কিছু অর্জন যে নেই তা নয়। কিন্তু সেগুলো রাষ্ট্রীয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের যথাযথ বাস্তবায়নের ফল নয়; বরং তা অনেকাংশেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্জন এবং আমরা অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোকেও কলঙ্কিত করেছি। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে বলতেই হয় গত চল্লিশ বছরে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পণাহেতু কোন কিছু অর্জিত না হলেও, সবার অগোচরে একটি সু(!)বিশাল অর্জন আমরা করে ফেলেছি! আমরা আমাদের নৈতিকতাকে হারিয়ে ফেলেছি। অনেকেই বলতে চাইবেন এটা পুরোপুরি সত্য নয়।

কিছু টিমটিম করে জ্বলতে থাকা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নৈতিকতা সমাজের সমষ্টিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত বড় বেশী দুর্বল; যার ফলাফল আমরা ভোগ করছি নিত্য-নৈমিত্তিক। আজ আমাদের বসবাস অপরাধের সাথে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের উপর এর প্রভাব এত বেশী যে আমরা এটাকেই স্বাভাবিক মনে করছি এবং আর ব্যত্যয় ঘটলেই উল্টো আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি।

অপরাধের পুরোপুরি বিনাশ হয়ত তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব, কিন্তু প্রায়োগিকভাবে এখন পর্যন্ত কোথাও তা হয়েছে বলে জানা যায়নি। আর বিনাশ করা না গেলেও অন্তঃত একে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করা হয়নি। এর বিপরীতে অপরাধের সামাজিকিকরণ বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোথাও এত ব্যপকভাবে হয়েছে কিনা সন্দেহ। এখানেই দুর্বল ব্যক্তি নৈতিকতার উপস্থিতির বিপরীতে প্রকট অনৈতিক সমাজের দানব চরিত্র প্রস্ফূটিত। যেহেতু আমরা অনেক অপরাধকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে ফেলেছি, সেহেতু অবশিষ্ট ব্যক্তিকেন্দ্রিক নৈতিকতাও অস্তিত্বের হুমকীর সম্মুখীন কারণ তারা আমাদের মাঝে অগ্রহনযোগ্য হয়ে পড়ছে। সমাজে তো বটেই এমনকি নিজ পরবারের ভিতরেও। অল্প যা কিছু সামাজিক প্রচেষ্টা দেখা যায় তা মূলত মানবতাকেন্দ্রিক।

আর এই সমস্ত কারণেই বহুতল অট্টালিকা হেলে পড়ে, তথাপিও আমরা সেখানেই বিনিয়োগ করি! ফলে, ব্যবসায়ীরা দুর্বল ভিত্তির উপর আরও অট্টালিকা তৈরী করেন; তারা খাল-বিল-নদী ভরাট করে প্লট বিক্রি করেন, আর আমরা সেই প্লট খরিদ করি। যদিও আমরা সবই জানি তথাপিও আমরা এরূপ আচরণ করি, কারণ বাংলাদেশের সমাজে গত চল্লিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে যেন অতি সূক্ষ্ম কিন্তু ব্যাপক পরিকল্পণামাফিক সমস্ত অন্যায়-অবিচার-অনিয়ম গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। এটা মাত্র একটা উদাহরণ, কিন্তু ব্যাপকতার মাত্রা এখানে সুস্পষ্ট।

কি এক পরম নৈশব্দে গত চল্লিশ বছর যাবৎ আমরা আমাদের নৈতিকতার ভিত্তিমূলে আঘাত করে চলেছি, কোথাও কোন প্রতিবাদ নেই! নাকি প্রতিবাদের ভাষাও নেই? কেউ প্রতিবাদ করে এক-আধবেলা হরতাল ডাকেনি, কেউ মানববন্ধন করেনি, কেউ মানবতার ডাক নিয়ে ছুটে আসেনি। হেলে পড়া দালানের মত হেলতে হেলতে নৈতিকতাবিহীন আমরা আমাদের বাংলাদেশকে ভূমিতে শায়িত করেছি।


নিঃশব্দ নৈবেদ্য
সেম্বাওয়াং, সিঙ্গাপুর
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×