somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি: Trade - হিউম্যান ট্র্যাফিকিঙ, সেক্স স্লেভারি ও অন্যান্য

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেক্সিকোর অপরাধপ্রবণতা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বেশ বাজার পায়। ডেসপারেডো, ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মেক্সিকো, অ্যামেরোস পের্রোস, চায়না টাউন, নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান- এই ধরনের অনেকগুলো ক্রাইম ধারার ছবি পাওয়া যাবে যেগুলো মেক্সিকো কেন্দ্রিক। ছবিগুলো থেকে ক্রাইমের পেছনে প্রধাণ যে কারণ পাওয়া যায় তা হল দারিদ্র্য। দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীর লোকেরা দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে, এবং, অনেকক্ষেত্রে দরিদ্র্যরাই সেই অপরাধের ভিক্টিমে পরিণত হয়। ‘ট্রেড’ নামের ছবিতেও একই বিষয় ফুটে উঠেছে। এই ছবিতে অপরাধের ধরনটি একটু সংবেদনশীল – হিউম্যান ট্র্যাফিকিং এবং সেক্স স্লেভারি।

‘ট্রেড’ সিনেমার প্রধান ভিক্টিমের বয়স মাত্র তেরো। তার নাম আদ্রিয়ানা। আদ্রিয়ানার জন্মদিনে তাকে একটি সাইকেল কিনে দেয় তার ভাই হোর্হে (Jorge – উচ্চারন সম্ভবত হোর্হে)। হোর্হের বয়স সতেরো, তুলনামূলকভাবে একটু বেশী ইংরেজি জানা আছে বলে তা ব্যবহার করে নানা অপরাধের মাধ্যমে আয় করে হোর্হে। দুপুরে তাদের মা যখন ঘুমাচ্ছে তখন আদ্রিয়ানা বেরিয়েছিল সদ্য কেনা সাইকেলে চড়ে এলাকাটা ঘুরে দেখতে, কিন্তু অপহৃত হয়ে যায়। আদ্রিয়ানার ফেলে যাওয়া সাইকেলের সূত্র ধরে হোর্হে জানতে পারে আদ্রিয়ানা অপহৃত হয়েছে মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে, হাত বদলের মাধ্যমে আদ্রিয়ানার মত অপহৃতরা পৌছে যাবে আমেরিকায়। বোনকে বাচানোর জন্য একাকী পথে নেমে পড়ে হোর্হে।

ধারনা করেছিলাম যে ভূমিকার মাধ্যমে ‘ট্রেড’ ছবির শুরু তার মাধ্যমে হিউম্যান ট্র্যাফিকিং এবং সেক্স স্লেভারির পূর্ণ চিত্র উঠে আসবে। একটা চিত্র পাওয়া যায় বটে ছবিতে, তবে তা কতটা বাস্তব আর কতটা গল্প সেটা বিচারসাপেক্ষ। আদ্রিয়ানার মত আরেক বন্দী ভেরোনিকা, তাকে চাকরীর প্রলোভনে নিয়ে আসা হয়েছিল পোল্যান্ড থেকে, বাস্তবতা বুঝতে না বুঝতেই তাকে ব্যবসায়ের পণ্যে পরিণত হতে হয়। দুজনের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়, অপহরনকারীরা অনেক বেশি সংঘবদ্ধ এবং শক্তিশালী, তারা শুধু অপহরণই করে না, অপহৃতের পরিবার পরিজনকেও নজরে রাখে অপহৃতদের নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে। অপহৃত নারীদের কি পরিমান নির্যাতন সহ্য করতে হয় তার একটা পরিচয় পাওয়া যায় ছবিতে। কিন্তু এর বিপরীতে হোর্হে কর্তৃক আদ্রিয়ানাকে উদ্ধারের ঘটনাবলী এই ঘটনাবলীকে খেলো করে দেয়।

তবে পরিচালক গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুব বেশী অস্বাভাবিকতার আশ্রয়ও নেন নি। আদ্রিয়ানাকে উদ্ধারে হোর্হেকে সহযোগিতার জন্য পুলিশ অফিসার রে শেরিডানকে উপস্থিত করেছেন, কিন্তু তার অমানুষিক যোগ্যতায় আদ্রিয়ানাকে উদ্ধার করান নি। কিন্তু রে’র সাথে দেখা হওয়া পর্যন্ত হোর্হের কার্যক্রম কতটা বাস্তব সেটা ভাবতে হবে।

ট্রেড ছবির সিনেমাটোগ্রাফি দারুন, বিশেষ করে ওপেনিং সিকোয়েন্সটা – অসাধারণ। ভালো লেগেছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। আদ্রিয়ানা চরিত্রে অভিনয় করেছে পলিনা গিতান – দুই বছর পরে Sin Nombre (2009) নামের চলচ্চিত্রে আরও ভালো অভিনয় প্রকাশ পায়। হোর্হে চরিত্রে সিজার রামো মন্দ অভিনয় করেন নি। সবচে ভালো লেগেছে ম্যানুয়েলো চরিত্রে মার্কো পেরেজ এর অভিনয় – দারুন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চরিত্র। মার্কো পেরেজ অ্যামোরেস পের্রোস – ছবিতেও অভিনয করেছিলেন।

‘ট্রেড’ ছবিতে হিউম্যান ট্র্যাফিকিং এবং সেক্স স্লেভারির বিষয়টা ততটা ভয়াবহভাবে উঠে আসেনি যতটা ভয়াবহ পৃথিবীর চরিত্র। টিনএজ মেয়েদের বাধ্য করা হয় যৌনবাণিজ্যে। বিকৃত রুচির পুরুষের খোরাক হয় এই সকল কিশোরী। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ আখন্দের একটি ডকিউমেন্টারী ফেসবুকে উন্মুক্ত করা হয়। ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ছবিটির নাম স্লেভ কুইন, দৌলতদিয়ায় কিশোরী এক মেয়ের যৌনকর্মীতে রূপান্তরের কাহিনী এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধারের গল্প নিয়ে নির্মিত। পাঠকের জন্য স্লেভ কুইন ডকিউমেন্টারিটি এখানে যুক্ত করা হল।

http://vimeo.com/61422165

বড় অদ্ভুত এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। কিশোর-কিশোরীরা নিজ আগ্রহে জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ যৌনসম্পর্কে, আবার কিছু দুর্ভাগা যারা হয়তো বেচে থাকতে চেয়েছিল তারা বাধ্য হচ্ছে এই সম্পর্কে জড়াতে। দুই এক্সট্রিম থেকেই বেঁচে থাকুক পৃথিবী – শুভকামনা।

স্বাগতম দারাশিকো'র ব্লগে
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×