somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগের বিশেষ প্যাকেজে এবার মুক্তিযুদ্ধ না করেই চট্টগ্রামের ২৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ‘মুক্তিযোদ্ধা’।

০৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুক্তিযুদ্ধ না করেই চট্টগ্রামের ২৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক গেজেটভুক্ত এসব ‘মুক্তিযোদ্ধা’র মধ্যে আছেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এমন কয়েকজন ব্যক্তি। এদের মধ্যে কয়েকজন নিয়মিত ভাতাও পাচ্ছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা কমান্ড গত ১৬ জুন ২৭ জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে লিখিত অভিযোগ (স্মারক নং-মুক্তি/চ/৩৩/২০১১) পাঠিয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২৭ জন গেজেটভুক্ত হওয়ার পর বিভিন্নভাবে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় তাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা স্থানীয় কমান্ডারদের মাধ্যমে তদন্ত করেছি। তদন্তে একজনেরও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। কিন্তু এরপরও তারা যাচাই-বাছাই না করে গেজেটভুক্ত করা অব্যাহত রেখেছেন।’

তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তদন্ত এবং তাদের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন।

বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা মনোনয়ন কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।

কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পারভিন মেহতাব বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বেশ কয়েকজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যাপারে বৃহস্পতিবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

গেজেটভুক্তদের মধ্যে আছেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ওয়াহিদুন্নবী চৌধুরী, হাটহাজারীতে প্রফেসর মো.নূরুল হুদা, বাঁশখালী উপজেলায় সুলতান আহমেদ, সাতকানিয়া উপজেলায় নূরুল আলম ও হাফেজ আহমেদ, চন্দনাইশ উপজেলায় রীতা সেন, পটিয়ায় তাহের আহমেদ, সুজিত কুমার বড়ুয়া, নূরুল ইসলাম ও দয়াল হরি দে, বোয়ালখালীতে মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, আনেয়ারা উপজেলায় আবুল কালাম, আবুল বশর, আবদুল ওহাব চৌধুরী, রেজাউল হক চৌধুরী, কৃষ্ণা চক্রবর্ত্তী, মোহাম্মদ শাহ আলম ও আবু তাহের মাসুদ।

এছাড়াও আছেন নগরীর বন্দর থানার হারুনুর রশিদ, ইমাম শরীফ, শফিউল আলম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও আব্দুস সোবহান পারভেজ, পাঁচলাইশ থানার আবু তাহের মিন্টু, কোতয়ালী থানার মোহাম্মদ শাহ আলম ও এম ওয়াহিদ উল্লাহ জামাল এবং ডবলমুরিং থানার দেওয়ান মাকসুদ আহমেদ (মাসুম)।

এদের মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় গেজেটভুক্ত প্রফেসর মো. নূরুল হুদা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট তিনি মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত হন। গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর ৬২০৩। তার পিতার নাম মৃত ছৈয়দুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মো.সাহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা হাটহাজারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখেছি নূরুল হুদা সাহেব মুক্তিযুদ্ধ করেননি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার হাটহাজারীতে অবস্থানের ব্যাপারেও কোনও তথ্য পাইনি।’

জবাবে প্রফেসর নূরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘নেতা-ক্যাথাকে (কাঁথা) তোয়াজ না করায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সনদ আমার কাছে কাছে। ১৯৮৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান গাজী সালাহউদ্দিনের স্বাক্ষরিত সনদও আমার কাছে আছে।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যেখানে আমাকে গেজেটভুক্ত করেছে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে তদন্ত করার এখতিয়ার কে দিয়েছে? পারলে তারা আদালতে যাক, আমি সেখানে লড়ব।’

‘কোন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?’--বাংলানিউজের এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

প্রফেসর নূরুল হুদার সঙ্গে একই দিন বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। গেজেটে তার ক্রমিক নম্বর ৬২০১। পিতার নাম মরহুম নূরুজ্জামান। তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কধুরখীল গ্রামে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বোয়ালখালীর কমান্ডার আবুল বশর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানের বাড়ি এক কিলোমিটার দূরে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম বোয়ালখালীর কোম্পানি কমান্ডার। আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধ করতে দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘গত ৪০ বছরে বদিউজ্জামান কোনও দিন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেননি। এখন সরকার যখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরির বয়সসীমা দু’বছর বাড়িয়েছে তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।’

জবাবে বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বশর সাহেব ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আমার কাছে আগের তিনজন কমান্ডারের দেওয়া সনদ আছে।’

মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল এবং কোন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন- এ প্রশ্নের জবাবে বদিউজ্জামান বলেন, ‘আপনি টেলিফোনে কথা না বলে সামনাসামনি দেখা করেন। আপনাকে কনভিন্স করার জন্য যা যা দরকার সব করব।’

গেজেটভুক্তদের মধ্যে পাঁচলাইশ থানার আবু তাহের মিন্টু (ক্রমিক নং-৬২৩২) এবং কোতোয়ালী থানার মোহাম্মদ শাহ আলম (ক্রমিক নং-৬১৮৯) সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আবু তাহের মিন্টুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তাতে উল্লেখ করেছে, ‘২০১১ সালে সার্টিফিকেট এবং চট্টগ্রামের ঠিকানায় তার নাম গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। পূর্বের যাচাই-বাছাইকালে প্রতিবারই তার নাম চট্টগ্রামে বাদ পড়েছিল। তার মতে, তিনি আগরতলায় বিএলএফ ট্রেনিং নিয়ে, ফেনীতে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, আগরতলায় কোনও বিএলএফ ট্রেনিং সেন্টারই ছিল না। আমরা তথ্য সংগ্রহকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’

শাহ আলমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তাতে উল্লেখ আছে, ‘প্রাথমিক যাচাইয়ে তিনি চট্টগ্রামের কোথাও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন বলে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি নোয়াখালী জেলায় যুদ্ধ করেছেন মর্মে তথ্য দিয়েছেন। তিনি অতীতেও চট্টগ্রামে অনেকবার তালিকাভুক্ত হতে চেয়েছেন। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের সময় বাদ পড়েছেন।’

আবু তাহের মিন্টু ও শাহ আলমকে ভাতা দেয়া প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পারভিন মেহতাব বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মনোনয়ন কমিটির সভায় সর্বসম্মতভাবে তাদের ভাতা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুটো পক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। এরা ব্যক্তিগত ক্ষোভ, আক্রোশ থেকে অনেক কিছু করছে।’



Click This Link
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×