somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হারিয়ে গেছি আমি "

০৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে উঠেই দেখি ঝিরঝির বৃষ্টি। জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোঁটা একটুও ইচ্ছে হচ্ছিল না উঠি। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখি ৯ টা ছুঁই ছুঁই। তক্ষুনি মনে পড়ল আজ অফিসে যেতে হবে। ছুটির দিন, মনটা বিষাদে ভরে গেল। মন ভালো নেই, কবি মহাদেব সাহার মতন বলতেই হয়-

বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই;
ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা
সারাদিন ডাকি সাড়া নেই,
একবার ফিরেও চায় না কেউ
পথ ভুল করে চলে যায়, এদিকে আসে না
আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে
তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে?

মনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এলাম অফিসে। নাহ বিষাদ পর্ব নেই। একটা ভালো না লাগার প্রচ্ছন্ন অনুভূতি মনের আকাশকে ছেয়ে ফেলেছে। তৈরী হতে হতে অনেক কয়টা মুখ ভেসে উঠলো। তার মাঝে ছোট্ট একটি দেব শিশু। ফুটফুটে কোঁকড়ানো চুল, ফোলা ফোলা গাল যেন মোম। ধরলেই গলে পড়বে। এই ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটি ৪ বছরের নুহা। পরশুদিন ভর্তি হলো জ্বর নিয়ে। ওর মা আমার খুব খুব কাছের বান্ধবী। মেয়ের এত দিন জ্বর ৯৯ ডিগ্রী থেকে ১০০ এমনি আসছে। আমাকে সেদিন কল করার পর বললাম, এক মাস থেকে জ্বর এক কাজ কর ভর্তি কর সব পরীক্ষা করি কিছু তো নিশ্চয় আছে।

কাল দুপুরে একমনে কাজ করছিলাম, কাঁধে উষ্ণ একটা হাতের স্পর্শে চমকে উঠলাম, কে? দেখি রানু, বললাম, কি রে? মেয়ে কেমন আছে। মুখ থমথমে, আমাকে কিছু রিপোর্ট দেখতে বলল। আমি আমাদেরটা দেখব বলে পাশ কাটাতে চাইলাম, পারলাম না। দেখলাম, নাহ কিছু নেইতো। দাঁড়া আমাদেরগুলো আসুক। ও তখন যা বলল আমি কেঁপে উঠলাম। কি বলিস? এসব নাওতো হতে পারে। ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল আমাকে ধরে। ওর বাঁধভাঙ্গা কান্নাকে আমি কিছুইতেই সামাল দিতে পারছিলাম না। ও মা!! অনেকক্ষণ পর বলল, না-রে সব তুই দেখে দে আবার। আমি সিঙ্গাপুর যাব।

আমার হাতে সব আসার পর দেখে বুঝলাম, নুহার ব্লাড ক্যান্সার। ও এই কথাই বলছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রিপোর্ট ছাড়ার আগে দৌড়ে গেলাম আইসিউতে, একটিবার ওকে দেখি। জুঁই ফুলের মতন শুভ্র বিছানায় নুহা শুয়ে আছে। এক চোখের কোণ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁটের কোণ বেয়ে ক্ষীণ ধারায় রক্ত পড়ছে। ওকে রক্ত দেয়া হচ্ছে।

এই সেই নুহা যে আমাকে দেখলেই ছুটে আসত। আজ ওপাশ ফিরে আছে। এতবার ডাকি, সাড়া দেয় না। অভিমান? কিসের অভিমান তার, আমি জানি না। কিন্তু এই নিষ্পাপ ফুলটি কি দোষ করেছিল? কেন অকালে ঝরতে হবে? নীরবে সকলের অগোচরে সরে এসেছিলাম কাল। রানু কল দিয়েও পায় নি আমায়। আমি ধরি নি, মন ভালো নেই।

মন বসে না কিছুতেই, দূরে
ওই মিটমিট জ্বলা নক্ষত্রটি
নীরবে ঝরে যেতে চায়
শ্রাবণের ঝিরঝির বৃষ্টির ধারায়
মনের তটরেখা ভাসে বেদনার জলে
শান্ত হোক মন-প্রাণ, ভাসিয়ে নিয়ে যাক
আছে যত জরা-ভয়, যত ক্লান্তি সব
নিষ্ঠুর খেলায় মত্ত প্রকৃতি,
আজ না হয় থেমে যাক সব খেলা
আজ না হয় একটু দিলে সময়
জীবনের শেষ ঝিনুক কুড়াবার।।

ঝরে যাওয়া ফুলটিকে রেখো,
বুকের জমিনে পরম মমতায়।।


আমার ছোট্ট নুহাকে বিধাতা ভালো করে তুলুক, আমার সব বন্ধুদের দোয়াপ্রার্থী। আবার যেন মিষ্টি কথায় হাসিতে ভরপুর করে রাখতে পারে তার চারধার।



-----------------------

সেই নুহাকেই উত্সর্গ করে এই কবিতা আর এই লেখা। এমনি অনেক শিশু অনেক ছেলেমেয়ে আমরা প্রতিদিন পাই ঘাতক রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। হে মঙ্গলময় কবে আমাদের বোধদয় হবে? কবে হবে দূষণমুক্ত, ভেজালমুক্ত আমার দেশ। এমনি আরো অনেক অনেক রুগী পাই। আমাদের সচেতন হতে হবে। সত্যি ক্যান্সারের হার অনেক অনেক বেড়ে গেছে বিশেষ করে স্টোমাক (gastric) ক্যান্সার, লাঙ (lung) ক্যান্সার।।আমি আর একটু বলতে চাই আজ এই পোস্ট শুধু নুহা কে নিয়ে নয় । এটা আমাদের সকলের জন্য আমরা কেন পারিনা ভেজাল খাবার না কিনতে ? কেন সোচ্চার হইনা? শিশু খেদ্যা তেজস্ক্রিয়তার জন্য কেন নেসলে র মত এত বড় কোম্পানির দুধ এ ভেজাল থাকবে ? কেন ফরমালিন এর মতন বিষাক্ত রাসোয়িনিক আমাদের খাবার এ মিশানো হবে? কেন বছরের এত প্রতীক্ষার মৌসুমী ফল এ মেশানো হবে ক্ষতিকারক কার্বলিক এসিড? এভাবে কত যে কারসিনোজেনিক এজেন্ট প্রত্যহ আমরা গ্রহণ করছি নিজেরাও জানি না।

কবিতা এখন আর আসেনা ।. আজ শঙ্কিত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কেমন পৃথিবী রেখে যাচ্ছি আমরা ?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৩০
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×