বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাথায় করে সাবওয়ে থেকে হেটে ফিরতে ফিরতে শুধু এই কথাটায় মনে হচ্ছিল যে, বৃষ্টি পড়ছে। স্নিগ্ধ, হিমেল হাওয়ায় জড়ানো শান্তির বৃষ্টি। এই মনের আঙ্গিনায়ও মনে হচ্ছিল যেন শ্রাবণমেঘগুলো ঝড়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে।
একটা কান্ড হয়েছে ফেরবার পথে। আমার উলটো দিক থেকে একটা বাস আসছিল, আর সেটি আসতে আসতে এসে থামলো আমার একটু সামনে একটা স্টপে। বাসে থেকে নেমে এল এক মহিলা। তো নেমে সে যখন তার কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ এ কাঁধ থেকে ও কাঁধে নিচ্ছিল তখন দূর থেকে দেখলাম কিছু একটা তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল। লক্ষ্য করলাম মহিলা বুঝতে পারেনি। আমি যখন কাছে আসলাম তখন দেখি বস্তুটা চাবি। নিশ্চই মহিলার বাসার চাবি। আমি নীচু হয়ে সেটি কুড়িয়ে নিলাম। সামনে দেখি মহিলা দাঁড়িয়ে পড়েছে। নিশ্চই বুঝেছে যে চাবি খোয়া গিয়েছে। সে তার জামা আর ব্যাগ হাতড়াচ্ছিল যখন তখন আমি তার পাশে গিয়ে চাবিটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। আহ্! তার সেই সময়কার প্রতিক্রিয়াটা যদি এই লেখার সাথে যোগ করে দিতে পারতাম। তার মুখ দেখে মনে হল এমন খুশী সে অনেকদিন হয়নি। হড়বড় করে সে যা বললো তাতে বুঝলাম, সে ভেবেছে চাবি বাসেই ফেলে এসেছে। আর আমাকে ধন্যবাদ দিতে থাকলো। আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেই আবার হাঁটা ধরেছিলাম। যতদূর শুনতে পাচ্ছিলাম বুঝলাম মহিলা তখনো ধন্যবাদ দিয়েই যাচ্ছে :-)
এমন একটা ভালোলাগায় ছেয়ে গেল সমস্ত প্রাণ। বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও তখন মনে হচ্ছিল যেন আমার সেই আনন্দের সাথে যোগ দিয়েছে আর নাচছে টিপ টুপ টাপ ছন্দে।
একটা গান শুনছিলাম। নীচে দিলাম সেটি। আমার প্রাণের গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীত।
বাদল-মেঘে মাদল বাজে গুরুগুরু গগন-মাঝে॥
তারি গভীর রোলে আমার হৃদয় দোলে,
আপন সুরে আপনি ভোলে॥
কোথায় ছিল গহন প্রাণেগোপন ব্যথা গোপন গানে--
আজি সজল বায়ে শ্যামল বনের ছায়ে
ছড়িয়ে গেল সকলখানে গানে গানে॥
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:০৯