somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনজীবীদের কাইজ্যা, প্রতিকার কোথায়?

০৩ রা আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদালতকক্ষের ভিতর হাতাহাতি-ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়েছেন দু’দল প্রতিপক্ষ আইনজীবী । বিচারকদের উদ্দেশে প্রিন্টারের অংশ, প্লাস্টিকের ট্রে ছুঁড়ে মেরেছেন একজন নারী আইনজীবী!

এসব উদ্বিগ্ন অপেক্ষার সময়ে রূঢ় একটি ছবি রিলিজ করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম! হাইকোর্টের মামলার বিষয়বস্তু মুফতি আমিনীকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন একদল আইনজীবী! তাদের সবার মুখে বিজয়ের হাসি! আদালতে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারাতে সংবিধান ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলার কথা বলা সত্ত্বেও আদালত তার আদেশ দিতে পারেনি। আদালতকে জব্দ করতে পারার বিজয়!

দেশের পার্লামেন্টে অনেক কাহিনী করে বিরোধীদল। কথায় বা রুলসে না পারলে স্পিকারকে মারতে তেড়ে যায়! ফাইলসহ নানাকিছু ছুঁড়ে মারা হয় স্পিকারের উদ্দেশে। এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে যখন বিরোধীদলে থাকে সে করে। সুপ্রিমকোর্টের সরকার সমর্থক আইনজীবীরা তখন এসবের নিন্দা করেন। সংবিধানের অভিভাবক-রক্ষক হিসাবে একটি ভূমিকা নেবার অনুরোধ করেন সুপ্রিমকোর্টকে। অথবা আমরা সাধারণ মানুষের কথাবার্তায় যদি আদালতের বিরুদ্ধে কোনও বেয়াদপি হয়, অথবা আমাদের লেখার কোনও একটি বাক্য বা সংলাপে যদি আদালত অবমাননা হয়ে যায়, তাহলে সেখানকার প্রায় সব ঘরানার আইনজীবীরাই একজোট হয়ে কোর্টে দাঁড়ান।

বিষয়টি আদালতের নজরে এনে বলেন, মহামান্য আদালত যদি বিষয়টা আমলে না নেন তাহলে দেশের বিচার-ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। আদালত তখন আমাদের আম-জনতাকে তলব করে এজলাসের সামনে দাঁড় করিয়ে নানা নসিহত করেন। মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সামনে যা কিছু ঘটেছে, এর প্রতিকারে আদালত কি ব্যবস্থা নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আদালত যদি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে আমার রিপোর্টার বন্ধুদের ভবিষ্যতে কিছু অনুরোধ করবো।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে কেন্দ্র করে চলতি বিবাদের সূত্রপাত। সামরিক শাসকদের করা সংবিধানের পঞ্চম-সপ্তম সংশোধনী বাতিল করেছে দেশের সুপ্রিমকোর্ট। বিএনপি যেহেতু ওই সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দল, তাই তারা ক্ষমতাসীন দলের সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে। বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়া ওই সংশোধনের পরপর বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে এই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। এরপর আরেক কদম এগিয়ে মুফতি আমিনী বলেন, এই সংবিধান ছুঁড়ে ফেলা হবে ডাস্টবিনে! কিন্তু সংবিধানের পাহারাদার দাবিদার বিজ্ঞ আইনজীবীদের কেউ বিষয়টি আদালতের নজরে আনেননি। নজরে এনেছেন একজন সাংবাদিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

মঙ্গলবার আদালতে আইনজীবীদের কাইজ্যার সময়ে তাঁর ওপরও হামলা হয়েছে। আদালতে আমরা আমজনতা-সাংবাদিক-বাদী-বিচারপ্রার্থী বা অভিযুক্ত হিসাবে যে যখন যাই তারা আদালতের রক্ষা-কর্তা, বিচারক-বারের সদস্য, আদালতের কর্মকর্তা-স্টাফদের মেহমান। আরেকটু সোজা কথায় আমরা মানি, সম্মান করি বলে উনারা মান্যিগন্যি সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা কোর্ট ফিসহ আইনজীবীদের পেমেন্ট দেই বলে উনারা কেতাদুরস্ত!

এখন আমরা সেখানে যাবো আর আমাদের কথাবার্তা পছন্দ না হলে উনারা আমাদের মারবেন, মেহমানদের ওপর হামলা চালাবেন, এটা কি সহ্য করা হবে? না এড়িয়ে যাওয়া হবে? আশা করছি, শাহরিয়ার কবিরের ওপর হামলার বিষয়টিও বিচারকদের বিবেচনায় থাকবে।

এখন মূল ঝামেলার কথায় আসি। সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার বিষয়ে খালেদা জিয়া কথাটি বলেছেন অনরেকর্ড। মিডিয়ার সামনে। আবার বিএনপি যখন বুঝতে পারে তাদের দলনেত্রীর এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি, তখন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিডিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেছেন, ম্যাডাম কথাটা এভাবে বলেননি (আমাদের কামিল (!) রাজনীতিকরা এমন সব সময়ই করেন)।

আমাদের দেশের নেত্রীদের বক্তব্যের গাইড লাইনে অনুসারী নেতারা গরম দেন আরও কয়েক ডিগ্রির! নেত্রীরা এতে খুশি হন! আমিনীর বক্তব্যেও তেমন সুর ছিল! খালেদা যেহেতু সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন, আমিনী এক ডিগ্রি এগিয়ে বলেছেন তা অর্থাৎ সংবিধান ফেলে দেবেন ডাস্টবিনে! কোর্টে তার পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি বলেছেন, ‘এভাবে আলোচনা-সমালোচনা করলে দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।’

সত্যি কি তাই? তাহলে কি ‘গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে এমন যা খুশি বলার বা লেখার স্বাধীনতা আমাদের সাংবাদিকদেরও দিতে আদালতকে অনুরোধ করবেন খোকন সাহেব?’, আদালতের বিবেচনায় এ প্রশ্নটিও রাখা হচ্ছে।

মঙ্গলবার আদালতে আমিনীর বিষয়ে আদেশ দেবার সময় খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়টি আসার পরই আপত্তি-হইচই-হাতাহাতি-ছোড়াছুড়ি সব হয় এজলাসের সামনে। বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে, খালেদা জিয়া বিরোধীদলের নেত্রী, জাতীয় নেত্রী, তাই তিনি সংবিধানসহ যেকোনও বিষয়ে ফ্রি-স্টাইল যেকোনও কিছু বলার ক্ষমতা রাখেন, আদালত বা কারোরই বিষয়টি আদালতের এক্তিয়ারে নেবার কোনও সুযোগ নেই!
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, বারের বর্তমান সভাপতি ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন কি এ বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে পারেন না! এতকিছু পারেন, এটা কেন পারবেন না মাহবুব সাহেব! সংবিধান সংক্রান্ত বক্তব্যটির মঙ্গলবার আদালতের মন্তব্যে খালেদা জিয়ার দেশপ্রেমের ঘাটতির উল্লেখ করা হয়েছে। মাহবুব সাহেবরা কি বলবেন, খালেদা যা বলেছেন তাতে আদালতের বলা উচিত ছিল যে ‘এতে ম্যাডামের দেশপ্রেম বেড়েছে’?

এ ব্যাপারে খোলাখুলি একটা কথা ক’ন মাহবুব সাহেব। আপনাদের বিচার-সভাতেতো রেফারেন্স-কনভেনশন বলেও কিছু বিষয় আছে। আপনারা আদালতকে এমন একটা কনভেনশন সৃষ্টির প্রস্তাব দিন যে দেশের দুইনেত্রী (শুধু খালেদার নামে প্রস্তাব করলে আপনাদের ভদ্রতায় বাঁধতে পারে। আপনারাতো আবার ভদ্রলোক, মাঝে মাঝে হঠাৎ এক-দু’বার কোর্টে একটু ব্যায়াম করেন আর কি!), যা ইচ্ছা বলবেন, আদালত তা আমলে নেবে না বা নিতে পারবে না! তাহলে সেই রেফারেন্সটি নিয়ে আমরাও আমাদের দেশপ্রেম বাড়ানোর জন্য সংবিধানসহ আপনাদের আদালতপাড়ার অনেকের বিষয়ে একটু ফ্রি স্টাইল কথাবার্তা বলি। লিখি। সংশোধিত সংবিধান নিয়ে আমাদেরও অনেক কথা আছে। ওখানে আপনাদের ধর্ম ব্যবসার উপকরণ ‘বিসমিল্লাহ’, রাষ্ট্র ধর্ম ধরে রেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিট্রে করা হয়েছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি না দিয়ে প্রতারণা-প্রবঞ্চনা করা হয়েছে তাদের সঙ্গে।

বিএনপি সমর্থক একজন আইনজীবী আমাকে বলেছেন, আদালত খালেদা জিয়ার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলাতে তাদের সমর্থকরা বিক্ষুদ্ধ-আউট অব অর্ডার হয়ে যান। তাহলে কি খালেদা জিয়ার ব্যাপারে কোর্ট কিছু বলতে পারবে না? এই হাইকোর্টই একবার আরেক নেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ বলেছিল না? মঙ্গলবার কোর্টে যারা হাতাহাতি, বিচারকদের গালিগালাজ, ছোড়াছুড়ি করেছেন, তারা সেদিন খুব উৎফুল্ল হয়েছিলেন না? ওই বিষয়টা নিয়ে অনেকে এখনও বক্তৃতা দেন, তাই না? তা সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে দেবার মতো অভাবিত-অস্বাভাবিক বক্তব্য দেওয়ায় খালেদা জিয়াকেও হাইকোর্টের ‘রং হেডেড’ বলা উচিত ছিল নাকি? এটা না করাতেই কি বিক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধান-আদালতের সম্মান রক্ষার্থে ওই কান্ডকীর্তি কোর্টে এজলাসের সামনে করা হয়েছে? সবমিলিয়ে উকিল সাহেবদের বলছি, দেশটাকে আপনারা কিন্তু খুব বিপজ্জনক অন্ধকার এক ব্ল্যকহোলের পথে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×