somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোডশেডিং, ১ টাকার বাস, ১২ টাকার ভাত এবং ঘুমন্ত বিপ্লবীরা

০৩ রা আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোমবার (১ অগাস্ট) সকাল থেকে ভীষণ রোদ এবং গরম। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মারাত্মক লোডশেডিং। আধাঘন্টা পরপরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। সকাল,দুপুর এভাবেই কাটলো। শেষ বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি আফম কামালউদ্দিন হলে বিদ্যুৎ ছিলোনা। রাত নয়টার দিকে পুরো ক্যাম্পাসেই আবার লোডশেডিং। আবার সেই ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলেনা’ টাইপ অবস্থা। এদিকে মসজিদে তারাবির নামাজ চলছে ভীষণ গরমের ভেতর অন্ধকারে। রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অবণর্নীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে পার করেছেন।

রাত দেড়টার দিকে কিছু ছাত্র (অর্ধশতাধিক হবে) স্বপ্রণোদিত হয়ে একটা মিছিল বের করলো লোডশেডিংয়ের মধ্যে। মিছিলটা উপাচার্যের বাসার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করতে লাগলো। ততক্ষনে অবশ্য আবার বিদ্যুৎ এসেছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা উপাচার্যের বাসার সামনে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে লাগলো। তারা চাইলো তাদের দাবি নিয়ে সরাসরি তাদের অভিভাবকের (অন্তত চামচারা যা বলে তোষামোদ করে) সাথে কথা বলতে। কিন্তু কলাপসিবল গেট, গার্ড, ক্যাম্পাসের সিকিউরিটি অফিসার এবং আশুলিয়া থানা পুলিশের প্রটোকল পেরিয়ে অভিভাবকের দেখা না পাওয়ায় তারা বিক্ষোভ করতে করতে চলে যেতে থাকে।

এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আরজু মিয়া ঘটনাস্থলে আসেন এবং উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। আমার দেখা মতে এসব বিষয় সামলানোর ক্ষেত্রে প্রক্টর স্যার অত্যন্ত পারদর্শী এবং সাহসী। কিন্তু সারাদিনের বিদ্যুতের ধকলে ছাত্ররা সবাই তখন অনেকটাই উত্তেজিত, কারও কারও আবার পরদিন সকালে ফাইনাল পরীক্ষা। তারা প্রক্টরের সাথে মুখে মুখে তর্ক করলেন এবং শেষে একরকম প্রক্টরকে পাত্তা না দিয়েই মিছিলটি নিয়ে চৌরঙ্গীর দিকে রওনা দিলেন।

এই সময় প্রক্টর উত্তেজিত হয়ে সেখানে উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের বলতে লাগলেন, ‘এরা ১ টাকায় ঢাকায় যায়, ১২ টাকায় ডাইনিংয়ে খায়। দেশের বিদ্যুতের অবস্থা তো বুঝতে হবে। ভোগান্তি তো সবারই হচ্ছে। বেয়াদব, সবগুলা বেয়াদব। ’

১ টাকার বাস, ১২ টাকার ভাত এবং কাঁচাবাজারের মাইক্রোবাস:

মিছিল নিয়ে আসা উত্তেজিত ছাত্ররা বলতে গেলে প্রক্টর স্যারকে পাত্তাই দেয়নি। কথা বলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কিংবা প্রক্টর হিসেবে আরজু স্যারের যে সম্মানটা প্রাপ্য ছিলো তা তারা দেয়নি। কিছুটা বেয়াদবি তারা করেছে এটা ঠিক। কিন্তু তার বদলে প্রক্টর স্যার যেভাবে বাস এবং ভাত নিয়ে খোটা দিলেন সেটা খুবই শ্রুতিকটু। ক্যাম্পাসের কোন ছাত্রই প্রক্টরের বাসে ঢাকা যায়না কিংবা প্রক্টরের টাকায় ভাত খায়না। তারা যাই খায় বা যাতেই চড়ে সেটা এই দেশের মানুষের টাকায়, তাদের বাপ-মা’র রক্ত পানি করা টাকায়। তাই কোনমতেই একজন প্রক্টর এধরনের কথা বলতে পারেন না। তবুও তিনি যখন রাগের মাথায় বলেই ফেলেছেন এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে তখন তার জন্যও কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়।

প্রক্টর ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে থেকে কয় টাকা বাড়ি ভাড়া দেন? উনি যে কয় বর্গফুটের বাসায় থাকেন, ঢাকা তো দূরে থাক ক্যাম্পাস সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকায় সেই বাসার ভাড়া কত আর উনি ক্যাম্পাসকে কত দেন??
ছাত্ররা যদি ১ টাকায় ঢাকা যায় তাহলে কাঁচাবাজার করতে উনি যখন ক্যাম্পাসের মাইক্রোবাস নিয়ে সাভার বাজারে যান তখন গ্যাসের খরচটা কি নিজের পকেট থেকে দেন? ভাতের খোটাটা প্রক্টর স্যারকে না হয় নাই দিলাম।

আর উনি যেহেতু তার ছাত্রদের সম্পর্কে এই কথাগুলো কতর্ব্যরত পুলিশ অফিসারদের সামনে বলে তার ছাত্রদের ছোট করতে পারলেন তখন কথা প্রসঙ্গেই প্রশ্ন চলে আসে, উনি যখন ছাত্র ছিলেন তখন কয় টাকায় ভাত খেয়েছেন? কয় টাকার বাসে ঢাকা গিয়েছেন এবং কার টাকায়??

ছাত্রলীগের ধাওয়া:


মিছিলটা যখন চৌরঙ্গী ছাড়িয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে তখনই হঠ্যাৎ অন্ধকার থেকে ১০/১৫ জন ছাত্র ছুটে বেরিয়ে আসলো। কারন ইতিমধ্যেই ওহী নাজিল হয়েছে ‘অভিভাবক আক্রান্ত’, মুঠোফোনে ওহী নাজিলের সাথে সাথেই দেবদূতের মত রড, লাঠি, জিআই পাইপ এবং দা, রামদা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাজির। এবং তাদের ধাওয়া খেয়ে ভয়ে মিছিল নিয়ে আসা ছাত্ররা যে যেদিকে পারে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। যদিও ছাত্রলীগের ধারণা ছিলো বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল সংগঠিত করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে কিন্তু সেখানে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের কেউই ছিলোনা। জাবি ছাত্রলীগকে অনেকদিন ধরেই কোন এ্যাকশন দৃশ্যে দেখা যাচ্ছেনা। অন্তত ২/১টা বাম পেটাতে পারলে জ্যাম হয়ে যাওয়া হাতের মুঠিটা একটু আলগা হতো, নেতাকর্মীদের আগ্রাসী মনোভাব দেখে তাই মনে হচ্ছিলো।

ঘুমন্ত বিপ্লবীরা:

সন্ধ্যায় মুক্তমঞ্চে বামপন্থী এক ছাত্রসংগঠনের আলোচনা সভা এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ছিলো। সেখানে আলোচকরা বিপ্লব নিয়ে অনেক কথা বললেন। সর্বশেষ বক্তা সর্বশেষ কথাটা বললেন, ‘বিপ্লব জিন্দাবাদ’। তথ্যচিত্র চলার সময় লোডশেডিং হলে কমন শ্লোগান তুললেন মুক্তমঞ্চে থাকা মৌখিক বিপ্লবীরা। কিন্তু সাধারন ছাত্রদের ন্যায্য দাবিতে তাদের মিছিলে পাওয়া গেলোনা। হয়তো তাদের উদ্যোগে মিছিল হয়নি, পরে গিয়ে মিছিলে যোগ দিলে পুরো কৃতিত্বটা পকেটে ভরা যাবেনা ভেবে বিপ্লবীরা ঘুমাচ্ছিলেন। অথবা ছাত্রলীগের রডের বাড়ি পিঠে পড়লে পরদিন সকালে ‘খুনি-ধর্ষক প্রতিরোধ দিবস’ এর মিছিলে সোজা হয়ে দাড়াতে পারবেন না, বিপ্লব জিন্দাবাদ বলতে পারবেন না এই ভয়ে তারা মিছিলে আসেন নি।

তাই আশা করেছিলাম হয়তো সকালে ‘খুনি-ধর্ষক প্রতিরোধ দিবস’ এর মিছিল থেকে তারা বড় কোন কর্মসূচীতে যাবেন। ন্যায্য দাবির আন্দোলনে ধাওয়া দেয়ার প্রতিবাদ করবেন, অভিভাবকের অফিসে গিয়ে চা খেতে খেতে তর্ক করবেন। কিন্তু শুনলাম তারা নাকি শহীদ মিনারে সমাবেশে শুধুমাত্র নিন্দা জানিয়েই ক্ষান্ত দিয়েছেন।

ছেড়া স্যান্ডেল, ছেড়া জিন্স এবং পাঞ্জাবির হাতা ভাজ করে বটতলায় চা, সিগারেট খেয়ে দুদিন বকর বকর করে যারা নিজেদের অনেক বড় বিপ্লবী ভাবছেন তাদের বলতে চাই, ‘ভাইসব উঠুন, সেহরীর সময় হয়েছে। ন্যায্য দাবির মিছিলে না যান, অন্তত সেহরী খান!’
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×