somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষামানবী ও একটুকরো পৃথিবী

০২ রা আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিটা,
সেদিন তোমাকে এত সাধ করে চিঠি নামক প্রাচীন প্রক্রিয়ায় মনের কথা লিখে জানালাম, অথচ তুমি তার উত্তরে আমার মস্তিষ্কে পিকোসেকেন্ডে একগাদা কথা বলে দিলে! আশ্চর্য..তুমি কি করে এত পানশে ও একঘেয়ে প্রক্রিয়ায় আমাকে উত্তর দিতে পারলে বলতো!
এরজন্য তুমি অবশ্যই শাস্তি পাবে..এখানে এলে তোমাকে কমপক্ষে কয়েক সেকেন্ড বাইরে দাড়িয়ে থাকতে হবে! এই আমি বলে রাখছি, এই চিঠির উত্তরে তুমি কিন্তু চিঠি পাঠাবে।
জানো বিটা, এই মাসের শেষের দিকে আমাদের গ্যালাক্সিতে দুই ঘন্টার জন্য বৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে..আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে! তুমি তো জানোই কত কষ্টে এই শতাব্দীর বৃষ্টির অনুমোদন পেতে হয়েছে আমাদের সবার! তুমি কিন্তু তার আগেরদিনই এখানে চলে আসবে, আমরা অবশ্যই একসাথে ভিজবো।
আসার সময় কিছু পিরোল ও ন্রিয়োতা ফুল এনো.. তোমাদের গ্যালাক্সিতে যে মরা হলদে ও কালচে বাদামী ফুল আছে ওইগুলো নয়, নীলচে গোলাপি পিরোল আর গাঢ় সোনালী ন্রিয়োতা চাই আমার। মনে থাকে যেন!
আরো কথা আছে, এলে বলবো!
দি এন্টিনিই ডাবল গ্যালাক্সীর চেয়েও তোমার বেশী জানার কথা আমি তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি।
তোমার আর্থ

চিঠিটা পড়া শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালো বিটা..গত পাঁচ সেকেন্ড সময়ের পুরোটাই ব্যয় হয়েছে এটা পড়তে! ভাবাই যায়না.. তার মত একজন প্রথম শ্রেনীর গ্রাফিনিওবোট সেই কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন মানুষের মত চিঠি পড়ছে এতগুলো সময় নষ্ট করে! তার এই ভালোবাসার সত্যিকারের মানবীটা আসলেই অদ্ভুত, কত যে তার পাগলামী! হাসলো বিটা, সময় পেলেই আবার আর্থের জন্য চিঠি লিখতে হবে। আর্থ নামের সাথেও জড়িয়ে আছে তার খামখেয়ালিপনা। ওর নাম আসলে লিক্রিওনিটা, যা আর্থের নিজেরই খুব অপছন্দের! তাই তার সবচেয়ে প্রিয় নামটিকেই সে নিজের করে নিয়েছে। বলতে গেলে ওই গ্রহটার অস্তিত্ব এখনো আছে কিনা এটা নিয়েই সন্দিহান বিটা, অথচ আর্থ নিজে না দেখেই গ্রহটির নামসহ সবকিছুই ভালোবাসে।
বৃষ্টি নিয়েও তার আরেক পাগলামী.. আর্থ অথবা তার, কারো গ্যালাক্সিতেই বৃষ্টির বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। অথচ আর্থ ও তারমতো কিছু প্রাচীনত্বপ্রিয় মানুষের জোরালো দাবী, বছরে একটা দিন হলেও তাদের গ্যালাক্সিতে বৃষ্টির অনুমোদন দিতে হবে..শেষপর্যন্ত শতাব্দীতে একদিন বৃষ্টির অনুমোদন নিয়েই অবশ্য সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আর্থকে! তাই এই মাসের শেষদিনে যে বৃষ্টি হবে তার গুরুত্ব বিটার কাছে না থাকলেও আর্থের কাছে অনেক।

মাসের শেষদিন কাল। বিটা ঘর থেকে বের হলো। আর্থের কাছে যেতে হবে তাকে। তার কাছে অনেক কিছুরই গুরুত্ব নেই, কারন সে রোবটের উন্নত সংস্করণ। কিন্তু আর্থ নামের মেয়েটির গুরুত্ব আর সবকিছুর চেয়ে বেশী.. কারন তাকে সে ভালোবাসে। ভাবতে ভাবতেই টি-ট্রাভেল লেখা ঘরে ঢুকে গ্যালাক্সি অন্ট্যারো বাটন স্পর্শ করলো বিটা। তিন সেকেন্ড পার হতেই ঘরের দরজা খুলে গেলো। নিজের হাতের খানিকটা উঠিয়ে মনিটরে আর্থের বাসার একটু দুরের অবস্থান লিখে গো বাটন চাপলো, এভাবে যাওয়াটা আর্থ একদম পছন্দ করেনা বলেই তার বাসার একটু দুরে পৌছাল সে। তারপর এগোলো আর্থের বাসার দিকে..। হাতে কয়েক তোড়া পিরোল ও ন্রিয়োতা সম্মোহিত করার মত সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
দরজা খুলতে প্রায় দশ সেকেন্ড সময় নিলো আর্থ। বিটা বুঝলো তার শাস্তি প্রক্রিয়া চলছে!
তারপর খোলা দরজায় আর্থের ভেজা হাসিমুখ..চুল ও পোষাক প্রায় ভেজা।
'বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগবে একটু দেখছিলাম! অনেকদিন ভেজা হয়নাতো তাই' আর্থের লজ্জামাখা কথা শুনে হাসলো বিটা। বললো, 'আমি অবশ্য দেখতে পাচ্ছি ভেজা তোমাকে অনেক ভালো লাগবে। অন্তত তোমাকে দেখে কাল বৃষ্টির দু'ঘন্টা পার করতে পারবো আমি!'
'না! তুমিও বৃষ্টিতে ভিজে শুধু বৃষ্টিই দেখবে' কপট রাগ দেখাতে গিয়ে হেসে ফেললো আর্থ। তারপর বিটার হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে হাসিমুখে তাকে ভেতরে টেনে নিলো সে।

আর্থের পরনে খুব সাধারন ঢিলেঢালা নরম পোষাক, যার আনাচে কানাচে আর সব পোষাকের মত ইলেকট্রিক আলোর মৃদু ঝলকানি নেই। খোলা চুলের এককোনায় কয়েকটা পিরোল ও ন্রিয়োতা ফুল শুধু.. তাতেই আর্থকে অসম্ভব মায়াবী লাগছে..।
'আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলতো?' জানতে চাইলো আর্থ।
'অপ্সরী যেন.. এককথায় বর্ষামানবী' মুগ্ধ দৃষ্টিতে আর্থকে দেখতে দেখতে বললো বিটা। বাইরে তখন কেবল কয়েক ফোটা করে বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষাপ্রেমীদের সংকেত দিয়ে ভেজার আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে দি এন্টিনিই থেকে। আর্থ একদৌড়ে বাইরে ছুটে গেলো.. দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে সমস্ত দেহ দিয়ে সে যেন বর্ষাকে অনুভব করতে চাইছে, এমনটাই মনে হলো বিটার। ধীরপায়ে আর্থের বাগানের বিশাল গাছটার নীচে দাড়ালো সে। দেখতে লাগলো অসম্ভব ভালোবাসা নিয়ে বৃষ্টির জলকনায় ভিজতে থাকা আর্থকে। কেন যেন নিজেকে অন্যকরম মনে হতে লাগলো বিটার, সে যেন গ্রাফটন নামের রোবট গ্যালাক্সির অধিবাসী গ্রাফিন দিয়ে তৈরী কোন উন্নত ধরনের রোবট নয়.. সে যেন এই মুহূর্তে পৃথিবীর এক সাধারন মানব, যে তার ভালোবাসার মানবীকে নিয়ে বর্ষার জলে ভিজতে এসেছে। আর এই যে চারপাশ, ঠিক যেন পৃথিবীর কোন নির্জনতম উঠোন..
আর্থের দিকে তাকালো সে। কিশোরীর মত হাসছে আর্থ তার দিকে তাকিয়ে। দেখতে দেখতে হঠাত্‍ বিটা বুঝতে পারলো তার কি করা উচিত্‍। সে জানে প্রতিটা মুহূর্তে তাদের গতিবিধি ও কার্যকলাপ দেখছে দি এন্টিনিও ডাবল গ্যালাক্সির ওরা.. যারা তাদের মত অজস্র রোবট ও মানুষের একমাত্র নিয়ন্ত্রনকারী। এখন সে যা করবে তার জন্য জবাবদিহি করতেই হবে তাকে, তারপর অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু এই মায়াময় বৃষ্টি তাকে সব ভুলিয়ে দিলো, সে এগিয়ে গেলো বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা আর্থের দিকে। হাটুগেড়ে বসলো তার সামনে। তারপর তাকে বললো,
'বর্ষামানবী, আমি কি তোমাকে নিয়ে আরো অজস্র শতাব্দী বৃষ্টিতে ভিজতে পারি? তুমি যদি তাই চাও তবে তোমার ভেজা আঙ্গুল এগিয়ে দাও!' হাসলো আর্থ, তারপর নিজের অনামিকা এগিয়ে দিলো। আর পরমুহূর্তে মুগ্ধ হয়ে দেখলো, তার আঙ্গুলে বিটার পরানো আংটি...যার ঠিক মাঝখানে পাথরের বদলে অসম্ভব সুন্দর একটুকরো নীলচে সবুজ পৃথিবী। আর্থের অনামিকায় ঘুরতে থাকা সেই ছোট্ট পৃথিবীটাও জলের স্পর্শে ভালোবাসা খুঁজে নিতে চাইছিলো!
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×