somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আছে জল (২০০৮) {হুমায়ুন আহমেদরা একবারই জন্মায়। এর পরে আবার কোন এক হুমায়ুন আহমেদ কবে জন্মনেবে তার প্রতিক্ষায় আছি}

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুমায়ুন আহমেদ, এক অসামান্য গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার সহ এমন অনেক বিশেষণে বিশেষিত করা যায় এমন এক নাম। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অসামান্য অবদান অতুলনীয়। তার নির্মিত অনেক সিনেমা বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক দূর্যোগপূর্ন সময়ে দর্শক ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। শেষ পর্যন্ত করে গেছে। অনেককেই বেশ অভিযোগ করতে দেখা যায় হুমায়ুন আহমেদের লেখা সস্তা টাইপের লেখা। কোন গুরু-গাম্ভীর্য নেই বলেই হয়তো। কিন্তু অনেক অসামান্য এবং অসাধারণ চরিত্রের স্রষ্টার সকল সৃষ্টি তারা সকলেই এক সময়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বলেই ধারণা। শুধু ধারণা নয়, দৃঢ় বিশ্বাস। সকলেই একটি বয়সে হুমায়ুনের উপন্যাস পড়েনি এই কথা দাবী করলে তবে আমার না কারোই কিছু বলার নেই।



“আমার আছে জল” উপন্যাসটি পড়া হয়েছিল অনেক আগে। আর সিনেমাটির নাম করন শুনেই তাই দেখার আগ্রহও জাগে। বসে যাই দেখতে। উপন্যাসটির চিত্রায়ন যথেষ্টই ভাল ছিল। হুমায়ুন আহমেদ তার নিজস্ব ঘড়ণার একটা আলাদা ধরণ তৈরী করেছিলেন যা এই সিনেমাটিতেও বেশ ভাল ভাবেই ফুটে উঠেছে। তার নিজস্ব ধরণের মেকিং, পরিচালনা এবং চরিত্রগুলো সবারই কখনো হাসি, কান্না এবং কখনো বিরক্তির কারণ হিসেবে দাড়াতে পারে।

সিনেমাটির শুরু হয় সোহাগী রেল স্টেশন নামের একটি স্টেশনে। রিটায়ার্ড আইজি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাথে স্ত্রী মুনমুন, দুই কন্যা শাওন ও বিদ্যা সিনহা মীম, শাওনের শিশুকন্যা, দুই যুবক জাহিদ হাসান, প্রবাসী ফটোগ্রাফার ফেরদৌস এবং দু’জন কাজের মানুষ। এদের সাথে যোগ দেন সোহাগী থানার ওসি।


একটি ডাক বাংলোতে আইজি সাহেবের পরিবারের ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যেই আসেন। জাহিদ হাসানের প্রতি মীমের গভীর ভালবাসা। মা মুনমুন এই ব্যাপারটি নিয়ে খুব বিরক্ত। মুনমুন আবার ফেরদৌসকে সাথে নিয়ে এসেছেন ফেরদৌস যেন শাওনকে পাত্রী হিসেবে পছন্দ করেন। একসময় জানা যায়, শাওনের সাথে জাহিদ হাসানের সম্পর্ক ছিল। শাওন ট্রেনে করে পালিয়ে গিয়েছিলেন জাহিদের সাথে। কিন্তু পরে তিনি ট্রেন থেকে ফেরত চলে আসেন। ঘটনা চরম নাটকীয়তায় পৌঁছে যখন মীম এই ঘটনা জেনে ফেলেন। এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের সিনেমা অথবা নাটক গুলোতে যেই ধরণের ভাড়ামী দেখে থাকি তার প্রায় সবই উপস্থিত সিনেমাটিতে। কখনো ছোট বাচ্চার পাকামো, কখনো কাজের লোকদের মাধ্যমে হাস্যরস, সবই আছে। তার তৈরী ধরণ থেকে বেরিয়ে আসেননি সিনেমাতে।

সিনেমা দেখার পরে কিছুটা খোজ খবর করা আমার স্বাভাবিক কাজের একটি। কিছুটা খোজ খবর করতে গিয়ে জানলাম যে ছবির শ্যুটিং চলাকালে নাকি ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কর্তৃপক্ষ আর্থিক বিষয়ে অতিরিক্ত নজরদারী করছেন মর্মে পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন। ইমপ্রেস কর্তৃপক্ষও পাল্টা বক্তব্য দিয়েছিল। এইটা প্রোযোজকদের স্বভাবগত কাজ। এইধরণের কথা প্রায়ই শোনা যায়।
এছাড়াও ছবিটির শুটিং হয়েছে সিলেট, শ্রীমঙ্গল, লাউয়াছড়া, চট্টগ্রাম ও কুলাউরার অনেক মনোরম স্থানে। ছবির শুটিং এর সময় নানা মজার মজার সব ঘটনা ঘটেছে। যেমন, শুটিং এর প্রয়োজনে একটা হাতি নিয়ে আসা হয় এক দিন।

অভিনেতা অভিনেত্রীদের সকলকেই চেনা। সবাই প্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ স্থানে। তাই তাদের অভিনয় নিয়ে তেমন কোন কথাই বলার নেই। সবাই সাবলীল অভিনয় দিয়ে যে কাউকে মুগ্ধ করবে। শুধু মীমের অভিনয় কিছুটা খাপ ছাড়া মনে হলেও প্রথম কাজ হিসেবে এটুকু ছাড় দেওয়াই যায়। এছাড়াও ব্যাক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের অভিনেতাদের মাঝে আমার সবচেয়ে পছন্দের হুমায়ুন ফরীদি আর তার পরেই আছে জাহিদ হাসান। জাহিদ হাসানকে এই সিনেমাতেও তার অভিনয়ের মাধ্যমে সবাই মনে রাখবে।

এই সিনেমাতেই প্রথমবারের মতন হাবীব কে দিয়ে বেশ কয়েকটি গানের কাজ করান। তার মাঝে ১ টা আমার খুবই পছন্দের। “চলো ভিজি বৃষ্টিতে” এইগানটির কথা হুমায়ুন স্যারের লেখা। অসাধারণ কথা আর হাবীবের সুরে গানটি যে কাউকেই স্পর্শ করে যাবে। একবার শুনে থেমেথাকা যায় না, বেশ কয়েকবার না শুনে।

তবে হুমায়ুন আহমেদের সিনেমাগুলোতে একটা ব্যাপার সবসময়েই থাকে বলে হয়তো অনেকেই পছন্দ করেন না যেটা আমাকেও বেশ বিরক্ত করে, তা হল যে কোন এক চরিত্রকে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল চরিত্রের কেউ) মৃত্যুর পরিণতি। এই ব্যাপারটা তার উপন্যাসেও যেমন আছে সেই প্রতিচ্ছবি হিসেবে সিনেমাতেও চলে আসছে। সিনেমার শেষে সকল দর্শকের একটা সিম্প্যাথি আকর্ষণ করাটা ভাললাগে না। এইটা তার নির্মিত প্রায় সকল সিনেমাতেই দেখা যায়। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, ঘেটু পুত্র কমলা সহ আরো অনেক সিনেমাতেই এই একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে দর্শকরা বেশ বিরক্ত হলেও হুমায়ুন আহমেদরা একবারই জন্মায়। এর পরে আবার কোন এক হুমায়ুন আহমেদ কবে জন্মনেবে তার প্রতিক্ষায় আছি।

সিনেমাটি সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

পরিচালনাঃ হুমায়ুন আহমেদ
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ
প্রযোজনাঃ ইম্প্রেস টেলিফিল্ম
চলচ্চিত্রায়নঃ মাহফুজুর রহমান খান
শ্রেষ্ঠাংশেঃ মীম, জাহিদ হাসান, ফেরদৌস, শাওন, ডাঃ এজাজ, মুনমুন আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, পীযূষ বন্ন্দোপাধ্যায় সহ আরো অনেকেই
সঙ্গীত পরিচালনা: হাবীব ওয়াহিদ ও এস আই টুটুল

হুমায়ুন আহমেদের পরিচালিত আরো কিছু সিনেমাঃ
• আগুনের পরশমণি
• দুই দুয়ারী
• শ্রাবণ মেঘের দিন
• চন্দ্রকথা
• শ্যামল ছায়া
• ঘেটু পুত্র কমলা

লেখাটি প্রকাশিত হয় মুখ ও মুখোশ সিনে ম্যাগাজিনে


✘✘✘ দয়া করে কোন বাংলাদেশী মুভির ডাউনলোড লিংক শেয়ার করবেন না। বাংলা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে অথবা অরিজিনাল ডিভিডি কিনে দেখুন। দেশের চলচ্চিত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×