somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজান মাসে খাবার হোক সুষম

০১ লা আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজার সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টে যায়। এ সময় খাবার খেতে হয় তিনবার। যেমন-ইফতার, সন্ধ্যা রাতের খাবার এবং ভোররাত বা সেহ্‌রির খাবার। অর্থাৎ অন্যান্য সময়ের চার বা পাঁচবারের বদলে তিনবার খাওয়া হয়। এই তিনবারের খাবারে ক্যালরির পরিমাণ হতে হবে সাধারণ সময়ের পাঁচবারের সমান। দেখা যায়, সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে অনেকে মনে করেন ইফতারে বেশি করে না খেলে শরীর টিকবে না। আসলে শরীর ঠিক থাকবে পরিমিত ও সুষম খাবারের মাধ্যমেই। বেশি খাওয়ার মাধ্যমে নয়।

প্রয়োজনের তুলনায় যত বেশি খাবার খাওয়া হবে, ততই এর কুফল ভোগ করতে হবে। কারণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইফতারি ও সেহ্‌রির খাবার খেলে ক্ষুধার ভাব বেশি লাগে। যদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে ক্ষুধাটা অত তীব্র হয় না। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, শুধু পেট খালি থাকার জন্যই ক্ষুধা অনুভূত হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকস্থলীতে চর্বির উপস্থিতিই এর কারণ। পেটে চর্বির স্তর বেশি থাকলেই ক্ষুধা বেশি টের পাওয়া যায়। অপরদিকে চর্বি কম থাকলে ক্ষুধাও কম লাগে। আসলে চর্বিযুক্ত খাবারই আমাদের ক্ষুধাবোধ বাড়িয়ে দেয়। পেট খালি থাকলে দেহে ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এই ফ্যাটি এসিড আসে আমরা যেসব খাবার খাই তার চর্বির অংশ থেকে। অর্থাৎ ক্ষুধার সঙ্গে চর্বির একটি নিবিড় যোগসূত্র আছে। এ কারণে ইফতার ও সেহ্‌রিতে খুব বেশি পরিমাণে খেলে দিনের বেলায় ক্ষুধার তীব্রতা বাড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে বমি, পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, পেট ফাঁপা, মাথা ধরা প্রভৃতি।

সারা দিনে চাহিদামতো যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করা দরকার, তার তিন-চতুর্থাংশই ইফতারিতে গ্রহণ করা হয়ে যায়। কারণ, ইফতারির পদগুলোতে ক্যালরি বেশি থাকে এবং আইটেমও অনেক থাকে। হিসাব করে দেখা যায়, ২৫ গ্রাম ছোলা ভাজা ৯২ ক্যালরি, বেগুনি মাঝারি সাইজের একটি ৮০ ক্যালরি, শরবত এক গ্লাস গড়ে ৬০ থেকে ৭০ ক্যালরি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ ক্যালরি, পিঁয়াজু দুইটা বড় ১০০ ক্যালরি, হালিম এক কাপ ২০০ ক্যালরি, কাবাব একটি ১০০ গ্রামের ১৭০ ক্যালরি, জিলাপি (বড়) একটি ২০০ ক্যালরি, মুড়ি এক কাপ ৬০ ক্যালরি, খেজুর দুটি ১৪৫ ক্যালরি, ফল দুটি ৪০ থেকে ১০০ ক্যালরি।

সারা দিন রোজা রাখার পর এত সব ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি খেলে যেমন শরীরের ওজন বেড়ে যায়, তেমনি হজমেও গোলমাল হতে পারে। ইফতার ও সেহ্‌রির প্রধান খাবারগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো-

শরবত
ইফতারির প্রধান আকর্ষণ শরবত। এবারের রমজান মাস পালিত হচ্ছে গরমের দিনে। তাই অতিরিক্ত ঘামের কারণে তৃষ্ণা বেশি অনুভূত হবেই। দেহে পানিশূন্যতার একটা ভয় থেকে যায়। তৃষ্ণা ও পানিশূন্যতা রোধের জন্য পানি ও পানীয় খুবই প্রয়োজন। বিভিন্নভাবে শরবত করা যায়। যেমন-স্কোয়াশ, ফলের রস, ইসবগুল, তোকমা, বেল, দুধ, দই, কাগজিলেবু ইত্যাদি দিয়ে। পুষ্টিমানের দিক থেকে শরবতের গুরুত্ব অনেক। ইসবগুল ও তোকমার শরবত বেশ ঠান্ডা। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র, পাকস্থলীতে প্রদাহ ইত্যাদিতে প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। বেলের শরবতও ভালো। এতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি রয়েছে। লেবুতে আছে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। ডাবের পানিও শরবত হিসেবে পান করা যায়, যা স্মিগ্ধ ও শীতল।

ছোলা ও মটর
এগুলো প্রোটিন-জাতীয় খাদ্য। এতে খাদ্যশক্তি ও শর্করা রয়েছে। ছোলা বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। যেমন-কাঁচা ছোলা আদা, পুদিনা পাতা ও লবণ দিয়ে সিদ্ধ ও ভাজা এবং আলু দিয়ে ভুনা করে। তার ওপর টমেটো, শসা ও পেঁয়াজ কুচি দিলে সত্যিই মজাদার হয়। মটর দিয়ে চটপটি-ঘুঘনি করে
খাওয়া যায়। বয়স্কদের যাঁদের দাঁতের সমস্যা এবং যাঁদের আলসার রয়েছে তাঁদের ছোলার বদলে ঘুঘনি খাওয়া ভালো।

ডাল, বেসন ও ময়দা
ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। ময়দা শর্করার উৎস। ডাল ও ময়দা একসঙ্গে করে নাশতা তৈরি করলে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেড়ে যায়। ডাল, বেসন ও ময়দা দিয়ে তৈরি হয় পেঁয়াজু, বেগুনি, শাকের ফুলুরি, দইবড়া, আলুর চপ, সবজির চপ, বিভিন্ন ধরনের রোল, পুরি ইত্যাদি। যাঁদের ডাল খাওয়া নিষেধ, তাঁরা ময়দা ও চালের গুঁড়া দিয়ে নাশতা তৈরি করে নেবেন।

হালিম
এটি বেশ পুষ্টিকর ও ক্যালরিযুক্ত খাবার। কারণ, এতে থাকে চাল, ডাল, গম, মাংস, তেল, ঘি ও বিভিন্ন রকম মসলা। এত সবকিছু মিশ্রিত হয় বলেই এর খাদ্যগুণ অনেক বেড়ে যায়। হালিম বেশ উপাদেয়। চাল ও গমের অ্যামাইনো এসিড এবং মাংস ও ডালের অ্যামাইনো এসিড মিথাওনিন, ট্রিপটোফ্যাল ও সিসটাইলের সংমিশ্রণে এর পুষ্টিমান সমৃদ্ধ হয়।

মুড়ি-চিঁড়া ও ছোলা-মুড়ি
মনে হয়, একটি ছাড়া অন্যটি একেবারে মানায় না। মুড়ি সহজপাচ্য এবং সহজেই ক্ষুধা মেটানো যায়। দামেও সস্তা। এ ছাড়া চিঁড়া-কলা, চিঁড়া-নারিকেল ইফতারির জন্য ভালো। এগুলো বেশ সহজপাচ্য। বয়স্ক ও আলসারের রোগীদের জন্য উপকারী। মুড়ি ও চিঁড়া শর্করাবহুল খাদ্য।

ফল
ইফতারিতে ফল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ফলে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ফল ত্বক সুন্দর রাখে, পরিপাকে সহায়তা করে। লৌহ থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতায় উপকারী। আপেল রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে ইত্যাদি। সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ডুবোতেলে ভাজা খাবার অনেক সময় পাকস্থলীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তাই ভাজা খাবার কমিয়ে সহজপাচ্য ও জলীয় খাবার খেতে পারলে ভালো হয়। রোজার সময় অনেকের মধ্যে পানিশূন্যতা দেখা যায়। এ জন্য ভিজানো চিঁড়া, মুড়ি, দই, দুধ, সেমাই, পায়েস, নরম খিচুড়ি, শসা, ফলের রস বা যেকোনো রসাল ফল খেতে পারলে ভালো হয়।

শেষ কথা
অন্যান্য সময় আমরা যতটুকু ক্যালরি প্রতিদিন গ্রহণ করি, রমজানেও ততটুকু ক্যালরিই থাকবে। সন্ধ্যারাতের খাবার হবে সাধারণ সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ এবং সেহ্‌রির খাবার হবে সাধারণ সময়ের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ। তবে সেহ্‌রিতে খুব বেশি গুরুপাক খাবার না খাওয়াই ভালো। এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। আবার খুব কম খাওয়াও ঠিক হবে না।

শারীরিক কোনো অসুস্থতা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখবেন এবং নিষিদ্ধ খাবারগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন। রোজার সময় প্রধান তিনটি আহারই হতে হবে যথেষ্ট জলীয়, সহজপাচ্য, হালকা মসলাযুক্ত ও সর্বোাপরি সুষম।


**************************
আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
প্রথম আলো, ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৯।

Reference: Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×