somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিতুমির যে কারণে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন…

০১ লা আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





তিতুমিরের নাম শোনেননি এমন ব্যক্তি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। তাঁর সাথে আমাদের Formal পরিচয় হয় ক্লাস ছেভেনে… সামাজিক বিজ্ঞান নামক বিরক্তিকর একটা সাবজেক্টে। সেই আমলের একটা খুব ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন ছিল “তিতুমির কেন বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছেন?”। আজও এই প্রশ্নের কথা মনে পরলে কচি বাঁশের কথা মনে পরে। তবে এর আগে তিতুমিরের জীবন ও তাঁর স্বাধীন চিন্তাচেতনার কিছু ক্ষুদ্র বর্ণনা শুনে আসি…

মীর হাসান আলী এবং আবিদা রোকেয়া খাতুনের পুত্র তিতুমিরের আসল নাম মীর নিসার আলী। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তাঁর বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। কিন্তু এতো কিছু থাকতে তিনি কেন কেল্লা বানাতে বাঁশের উপর ভরসা করলেন তাই আমাদের আলোচ্য গবেষণার বস্তু।

সেই আমলে 9mm, AK47, shotgun ইত্যাদি অস্ত্রের সাথে বাঙ্গালিরা পরিচিত ছিল না। গ্রামের পথেঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঁশই ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। তাই ইংরেজদের কামানগোলার বিরুদ্ধে বাঁশই বাঙ্গালিদের বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, দেখিয়েছিল এক স্বাধীন দেশের স্বপ্ন যেখানে থাকবে না কোন বাঁশাবাঁশি, থাকবে শুধু হাসাহাসি, কাশাকাশি আর মানুষের পাশাপাশি বসবাঁশ ছরি বসবাস।

তিতুমির ছিলেন দূরদর্শী। বাঙ্গালিদের একত্র করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সচেতন করার জন্য তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে নিজহস্তে বাঁশ তুলে নেন ও সবার হাতে বাঁশ তুলে দেন। যখন বাঙ্গালিরা হাতে বাঁশ ধারন করত তখন তাদের কাছে মনে হত যে তাদের হাতে আছে পারমানবিক বোমার রিমোট কন্ট্রোলার। যে কোনো সময় শুধু বাটন প্রেস করবে আর ইংরেজ জাতি হয় মাটির তিনহাত নিচে চলে যাবে, নয়তো সরাসরি ঊর্ধ্বগগণে। এই বাঁশের কারণেই তিতুমীরের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে এক সময় ৫,০০০ গিয়ে পৌঁছে।

তিতুমির ছিলেন জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান ও পালোয়ান হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুনাম ছিল। আর এই লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান অস্ত্র ছিল বাঁশ। তাই বাঁশের ক্ষমতা যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। তাই গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের উপর জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি বাঙ্গালিদের সংঘবদ্ধ করেন এবং হাতে বাঁশ তুলে নেন।

তিতুমিরের বাঁশের অনুপ্রেরনায় বহু বাঙালি হাতে বাঁশ তুলে নেয় ও ইংরেজদের বাঁশ দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। তখন তিনি বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। সেই প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধকে মহাপ্রলয়ঙ্করী রূপ দেয়ার জন্য এবং তাঁর বাহিনীর নিরাপত্তা, অস্ত্রশস্ত্র (মানে বাঁশ) মজুদ ও বাহিনীকে রণকৌশল প্রশিক্ষণের জন্য ১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বারসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই অপূর্ব কেল্লা নির্মাণ করেন তিনি।

তিতুমির যখন বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন তখন সেই বাঁশের কেল্লা দেখে ইংরেজরা কেল্লাফতে যান এবং ইংরেজ বাহিনীতে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে যায়। অনেক কিলাকিলি-মারামারি হওয়ার পরও যখন ইংরেজরা তিতুমিরের হাতে বারবার বাঁশ খাচ্ছিল তখন বাঁশের কেল্লার দিকে মুখ তুলে তাকালেই তাদের আত্মা অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠত ও গত যুদ্ধে খাওয়া কাঁচাপাকা বাঁশের কথা মনে হত।

অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও কামানগোলা নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের অক্রমন করে। তিতুমির তাঁর অনুসারীদের নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, কিন্তু কামানগোলার আঘাতে তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। যেই যুদ্ধে বাঁশের বিরুদ্ধে ইংরেজদের কামানগোলা ব্যবহার করতে হয়, সেই যুদ্ধে বাঁশ কত বড় একটা অস্ত্র ছিল তা বলা বাহুল্য। অবশেষে ১৯শে নভেম্বর তিতুমীর নিহত হন। তাঁর বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করে দেয়া হয়।

এই বাঁশ যদি না থাকতো তাহলে বাঙালি অনুপ্রেরণার অভাবে তিতুমির এতদূর আসতে পারত না, পারত না ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে। তিতুমিরের এই বিদ্রোহ পরবর্তীতে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। অপর কথায় বলা যায় বাঁশই আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা, আমাদের একমাত্র অস্ত্র যার প্রতিটি গিঁটে গিঁটে রয়েছে পরাধীনতার শিকল ভাঙার উচ্ছ্বাস। তাই আজ যেকোনো আপদে-বিপদে আমরা বাঁশকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ও অত্যাচারীকে বাঁশ দেয়ার হুমকি দেই। তাই বাঁশ থাকুক আমাদের জীবনে-মরণে, সয়ন-স্বপনে, ঘুম কিংবা জাগরণে…

২৮টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×