somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীকান্ত আচার্য্যরে গানে জেন্ডার সংবেদনশীলতা - রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে

০১ লা আগস্ট, ২০১১ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে -গানটি বাংলাদেশের এবং কলকাতার খুব জনপ্রিয় একটি গান। মূলত চরমভাবে আকাঙ্খিত কোন এক নারীর বেদীতে অপূর্ণ কোন প্রেমিক পুরুষের নিবেদন এটি।

গলার মধু ঢেলে বেশ দরদ দিয়েই -আবার কোথাও কোথাও বেশ চটক দিয়ে- গানটি গেয়েছেন দুই বাংলার অন্যতম বিখ্যাত ও জনপ্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য্য ।

এ গানে প্রেমের আকুলতা বুঝিয়ে পছন্দের নারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে খানিকটা না পাওয়ার হাহাকার।

মূলত গানটিকে বলা যায় - না পাওয়া নারীর প্রতি ব্যর্থ প্রেমিকের কিছু কথা । সোজাকথায়- গানটি একটি প্রেমমূলক বিরহী গান , যেখানে প্রেম এবং বিরহ সমান্তরালে চলে।

আমি গানটি সম্পর্কে বলতে চাই- না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস থেকে পিছু না ফিরে , আশার বালুচরে স্বপ্নের জ্যোস্না ছড়িয়ে - কাছে আসার আশা প্রকাশ করে- ব্যর্থ প্রেমিকের তীব্র প্রেমাকুতি এ গানটি।।


শ্রীকান্ত আচার্য্যরে গান - রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে
(মূল গানের গীতকিথা বা লিরিকস নিম্নরূপ)

রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার
কাছে কেউ না এলে আর
মনের ওই এতো মধু কেন জমেছে
যদি কেউ না থাকে নেবার
রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার


ও নুপূর না বাজালে কারো বাঁশিতে
ও হাসি না মেশালে কারো হাসিতে
ও নুপূর না বাজালে কারো বাঁশিতে
ও হাসি না মেশালে কারো হাসিতে
তোমার ওই সোনার ফাগুন কি দাম পাবে
যদি কেউ না থাকে দেবার

রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার
কাছে কেউ না এলে আর
মনের ওই এতো মধু কেন জমেছে
যদি কেউ না থাকে নেবার
রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার

এ জীবন না জড়ালে কারো জীবনে
এ স্বপন না ছড়ালে কারো স্বপনে
রঙিন ওই দিনগুলি কি এমন রবে
সারা কেউ দেবে না যে আর

রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার
কাছে কেউ না এলে আর
মনের ওই এতো মধু কেন জমেছে
যদি কেউ না থাকে নেবার
রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার

গানের কথায় জেন্ডার সংবেদনশীলতা:

কথা ও সুর মিলিয়ে গানটি শুনতে বেশ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের খুব জনপ্রিয় গান এটি। তবে তারুণ্যের আড্ডার ও আমোদের তীব্রক্ষণে কিংবা কোন রূপসীকে পাশ দিয়ে যেতে দেখলে অনেক সময়ই মজা করে কিংবা অন্যকিছু ভেবে হঠ্যাৎ করেই হয়তো গেয়ে ওঠা হয়- ‘রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে...’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ আরো বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি আমার চোখে পড়েছে বলেই গানটিকে আমি জেন্ডার সংবেদনশীল গান হিসেবে নির্বাচিত করে তা অসংবেদনশীল করে পুনরায় নির্মানের একটি চেষ্টা করেছি।

আপত্তিকর কোন শব্দ না থাকলেও শুধুমাত্র বাক্যের ব্যবহার গানটিকে জেন্ডার সংবেদনশীর করে তুলেছে বলেই আমি মনে করি।

উপরন্তু গায়কের গান গাওয়ার ধরণটিও গানটিকে আরো চটক করে তুলেছে।

গানটিতে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি। নিচে গানটির মধ্যে জেন্ডার সংবেদনশীলতাগুলো আমার দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করেছি।

গানটিতে চরমভাবে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রকাশ পেয়েছে। সম্পূর্ণ গানটিই একটি জেন্ডার সংবেদনশীল গানে পরিণত হয়েছে।

নারীকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া এ গানটিতে প্রধানত সংবেদনশীলতার তিনটি বিষয় প্রধাণ্য পেয়েছে :


 একটি হলো নারীকে তুলে ধরা হয়েছে শুধুই রূপ সর্বস্ব হিসেবে। নারী এখানে শুধুই রূপওয়ালী -রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে, মনের ওই এতো মধু, - ও হাসি না মেশালে কারো হাসিতে, তোমার ওই সোনার ফাগুন কি দাম পাবেÑ, এসব চরণে নারীকে শুধু রূপ সর্বস্ব এবং পুরুষের উপর নির্ভরশীল এক অর্ধ প্রাণী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গানটি গাওয়ার ধরণ শুনলে , গলার টোন ও সুরের কম্পন পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়।


 আরেকটি হলো নারীর জন্য পুরুষের অবশ্যিকতা। নারী এখানে অসম্পূর্ণ। নারীর রূপের স্বীকৃতির জন্য এখানে একজন পুরুষের অপরিহার্যতা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ কোন পুরুষ যদি নারীকে রূপবতী না বলে তাহলে নারীর সে রূপের কোন মূল্যই নেই-এমনটাই বলা হয়েছে । পুরুষ ছাড়া নারী অচল- এমনটাই বোঝানো হয়েছে এখানে।

‘ ও নুপূর না বাজালে কারো বাঁশিতে / ও হাসি না মেশালে কারো হাসিতে /
তোমার ওই সোনার ফাগুন কি দাম পাবে / যদি কেউ না থাকে দেবার ’

মানে কি!! মানুষ হিসেবে জীবনের বসন্ত-ফাগুনের স্বীকৃতিও পুরুষের কাছ থেকে নিতে হবে নারীকে!! পুরুষের বাহুডোরে নিজেকে সঁপে না দিলে এখানে নারী জীবন মূল্যহীন। পুরুষ এখানে দাম দিয়ে কিনতে চাচ্ছে নারীর বসন্তহারা সৌন্দর্যকে।

অবশেষে নারীকে শঙ্কিত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে একথা বলে যে- নারী যদি দাম নিয়ে তার সেীন্দর্যের পেখম মেলে না আসে পুরুষের কাছে তাহলে পুরুষ মুখ ফিরিয়ে চলে যাবে এবং তখন নারীর ওই সৌন্দর্য নিরর্থক হয়ে যাবে।

‘ মনের ওই এতো মধু কেন জমেছে
যদি কেউ না থাকে নেবার
রূপের ওই প্রদীপ জ্বেলে কি হবে তোমার ’

নারীর মনে সাধ-আহ্লাদ-ভালোলাগা সবকিছুকেই মূল্যায়িত করার জন্য পুরুষের আবশ্যিকতাকে প্রকাশিত করা হয়েছে এখানে। নারীর মনে কি পুরুষ ছাড়া ভালোলাগা অনুভ’তিও সৃষ্টি হতে পারবে না ! সেই অনুভীতিকেও মূল্যহীন বলা হয়েছে পুরুষের উপস্থিতি ছাড়া। প্রশ্ন তোলা হয়েছেÑ কি সেই কারণ মনের সুখের এবং কি হবে এই সৌন্দর্য দিয়ে যদি পুরুষ না থাকে ? !!



 আরেকটি বিষয় হলো নারীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাকে দূর্বল আখ্যায়িত করে। ভবিষ্যতে যখন রূপ থাকবে না তখন নারী আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে এমন ধারণা দিয়েই নারীকে শুধুই রূপ সর্বস্ব একটা বিনোদিনী প্রাণী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে।

‘ এ জীবন না জড়ালে কারো জীবনে
এ স্বপন না ছড়ালে কারো স্বপনে
রঙিন ওই দিনগুলি কি এমন রবে
সারা কেউ দেবে না যে আর ’

নারীকে ধমক দেয়া হয়েছে তার জীবন ও স্বপ্নকে পুরুষের সাথে জড়ানোর জন্য। নারীর একান্ত কিছু সুখ স্বপ্নতেও এখানে থাবা বসিয়েছে তীব্র পুরুষতান্ত্রিকতা।

অর্থাৎ নারী এখানে পুরুষের মনোরঞ্জনাকারী। নারীকে বিশেষিত করা হয়েছে তার রূপ দ্বারা। আর নারীর এই রূপ কার জন্য! –গানের কথা অনুসারে অবশ্যই পুরুষের মন মাতানোর জন্যই। পুরুষের তারিফ ছাড়া এখানে নারীর রূপ মূল্যহীন।

গানটির নতুন গীতকথা বা লিরিকস:

না পাওয়ার হাহাকার ও নারীর রূপের প্রশংসা সহ গানটির বিরহী প্রেমমূলক ভাব ঠিক রেখে জেন্ডার অসংবেদনশীল করে নতুনভাবে উপস্থাপন করার জন্য আমার প্রস্তাবিত একটি নতুন গীতকথা বা লিরিকস আছে।
-আলীম হায়দার
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×