somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এত শোক সইবে কেমনে? কাঁদছে হাতিমারা গ্রাম! আসুনসেই অবোধ শিশুদের শোকে আমরাও সহমর্মী হই!!

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এত শোক সইবে কেমনে?
কাঁদছে হাতিমারা গ্রাম!

অন্য দিনগুলোর মতো সকাল হয়নি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার হাতিমারা গ্রামের। যে শিশুদের কোলাহলে গ্রামের ঘুম ভাঙত, সেই শিশুদের জন্যে কাদঁছে গ্রাম।

রোববার সকালে পূবের সূর্যের সঙ্গে বেরিয়েছে হাতিমারা গ্রামবাসীও। তবে আজ সুর করুণ, ফুটফুটে শিশু সন্তানদের হারিয়ে গ্রামটি কাদঁছে।

শনিবার মনোহরগঞ্জের নাথুরপেটুয়া বাজারের পাশেই এক ঘাতক ট্রাক কেড়ে নেয় এ গ্রামের ৮টি কোমল প্রাণ। বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় স্কুল ভ্যান উল্টে সেখানে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছে গ্রামের নিষ্পাপ শিশুরা। এরা সবাই নাথুরপেটুয়া মডার্ন একাডেমির শিক্ষার্থী ছিল।

ভোর ছ’টায় নাথেরপেটুয়া বাজার থেকে মাত্র দেড়শ’ মিটার দূরেই জমির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো ভগ্ন হৃদয়ের গ্রামবাসী। নোয়াখালি রোডের পশ্চিম পার্শ্বে জমিতে পড়ে থাকা ট্রাকটিতে তখনো আগুন জ্বলছে। শোভা, হৃদয়, শুভ’র খেলার সাথীরা দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখ ছলছল!



অনেকে স্থির দৃষ্টিতে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে পোড়া ট্রাকটির দিকে, ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া স্কুল ভ্যানটির দিকে। আবার বিলাপ বকছেন অনেক গ্রামবাসী। কিভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা একজন ট্রাক চালক কিভাবে ঘটায়?! তাদের আকুতিঝরা প্রশ্ন। সঙ্গে ট্রাক চালককে বকাঝকাও করছেন তারা।

হাতিমারা গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছরের আবু জাফরও দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছছিলেন।

কথা বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তারা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “যে শিশুগুলো গতকাল হাসতে হাসতে স্কুলে গেলো, তারা আজ কবরে। এই কষ্ট গ্রামবাসী কেমনে সয়।”


আবু জাফর বলেন, “বাদশা মিয়া ফোরম্যান বাড়ির তিনটি শিশুই আজ নেই। নেই ভূঁইয়া বাড়ির ১ শিশু, মজুমদার বাড়ি ১ শিশু, সেয়ার বাড়ি আর আইয়ুব আলী মাস্টারের বাড়িতেও সন্তান হারানোর কান্না।”

গ্রামের সব বাড়িতেই আজ কান্না আর কান্না।


নোয়াখালী রোড ধরে উত্তর দিকে আরো দু’শ মিটার এগোলেই হাতের বামে হাতিমারা পূর্বপাড়া ঈদগাহ, রয়েছে ঈদগাহ সংলগ্ন মসজিদ।

এ মসজিদের পাশ দিয়ে একশ’ হাত গেলেই মজুমদার বাড়ি। মসজিদের পাশের কবরস্থানে নতুন একটি কবর। আগের সন্ধ্যাতেই দেওয়া হয়েছে বড়ই গাছের ডাল।

‘মাবুদ, ও মা, ও মা, আইঁও মরি যাইয়াম’ (আমিও মারা যাব) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ঢুঁকরে কাঁদছেন সবুজ পাঞ্জাবি পরা শোভার বাবা জহুরুল ইসলাম।


পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মোছেন জহুরুলের চাচাতো ভাই শাহ আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “জহুরুলের ২ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ছিল জান্নাতুল মাওয়া শোভা। সাত বছর বয়সী শোভা নার্সারিতে পড়তো।”

বাক্য শেষ না হতেই ঢুঁকরে ওঠেন তিনিও, “এতো সোন্দর মাইয়্যারে মারি হালাইছে।”

তিনি জানান, “শোভার বাবা জহুরুল সৌদি প্রবাসী। এক মাস হলো ছুটিতে এসেছেন।”

জহুরুলকে বাড়ির ভেতরে নিতে চেয়েছেন চাচাতো ভাই শাহ আলম আর তাজুল ইসলাম বাবুল। মেয়ের কবর থেকে যেতে ইচ্ছে করে না জহুরুলের। কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে মোনাজাত করেন বারবার।

জহুরুল গাছে মাথা ঠোকায়। কবরের পাশে বসে পড়ে আবারো, “আব্বারে...!’ বলে মেয়ের ডাক শুনতে চান।

ঈদগাহ মাঠের পাশের দেয়ালে বসে কাজ করছিলাম। শনিবার এ ঈদগাহে পড়া হয়েছে নিহত শিশুদের জানাযা। রাস্তা ধরে উদভ্রান্তের মতো ছুটছে আর কান্না করছে লাল শার্ট আর লুঙ্গি পড়া এক যুবক। গ্রামবাসী বলেন, যুবকের নাম সেলিম মিয়া, চতুর্থ শ্রেণীর সুলতান আহমেদ স্বাধীনের বাবা। স্বাধীনকে হারিয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন তিনি।

কিছু দূর গেলে চাচাতো ভাই বাবুলকে ধরে হাউমাউ করে কাদঁতে শুরু করেন সুলতান। চাচাতো ভাই বাবুল বলেন, ‘হিজ্যা (সে) বিশ্বাস কইরতো চায় না, স্বাধীন মরি (মারা) গেছে।”

শোভা আর স্বাধীন ছাড়াও এ গ্রামের আরো নিহত শিক্ষার্থীরা হলো নাথেরপেটুয়া মডার্ন একাডেমির প্লে গ্রুপের ছাত্র হাসিবুল হাসান নিহাদ (৭), একই শ্রেণীর রাকিব হোসেন শুভ (৭), মোক্তাকিম হাসান হৃদয় (৭), আতিকুর রহমান আল আমিন (৭), তৃতীয় শ্রেণীর নাসির উদ্দিন (১০) ও ফাহাদুল ইসলাম মিথুন (১০)।

আহাজারিই চলছে এখন হাতিমারা গ্রামে! বাবা-মার সন্তান ছাড়াও দুর্ঘটনায় নিহত শিশুরা এ গ্রামের কারো নাতি-নাতনি, কারো ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, কারো ভাই-বোন আবার কারও খেলার সঙ্গী। তাই পুরো গ্রামজুড়েই শোক। এই শোকে কাদঁছে পুরো হাতিমারা গ্রাম!


এইরকম অকালমৃত্যু কারো কাম্য নয়। নিরাপদ সড়কের জন্য আরো কঠিন আন্দোলন চাই। সচেতনতা চাই। অপরাধীর কঠোর শাস্তির বিধান চাই।
দু:খজনক আমাদের মন্ত্রীরা মূর্খদের লাইসেন্স দেবার জন্য সমাবেশ করে।

এই গণমৃত্যুতে সরকারের শোকবাণী চাই। নিহতদের পাশে কি গেছেন যোগাযোগ মন্ত্রী!!!!!!!

আসুন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমাদের অবোধ শিশুদের কথা ভেবে যে যার স্থা থেকে তাদের জন্য এবং ভবিষ্যতের এইরকম ফুটফুটে শিশুরা যাতে নিরাপদে স্কুলে যেতে পারে, সড়কে চলতে পারে সেই ব্যভস্থার জন্যও কঠোর সচেতনতা, আন্দোলন, মিডিয়ার ভুমিকা আরও জোরদার করা সহ প্রযোজ্য সকল কাজে সকলেই আরও আন্তরিক হই।

হে আল্লাহ, এই অবোধ শিশুদের জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব কর।


সংবাদ সূত্র-কৃতজ্ঞতা: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×