somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন সময় ডেঙ্গু জ্বরের

২৯ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডেঙ্গু মশাবাহিত ভাইরাসজনিত জ্বর। চায়না মেডিকেল এনসাইক্লোপেডিয়ায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ অব্দে এ রোগকে ওয়াটার পয়জন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ১৭৭৯-৮০ সালে এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকায় এটি মহামারী আকারে দেখা যায় বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। আধুনিক কালে ১৯৫৩ সালে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে এটি মহামারী দেখা দেয়। বিশ্বব্যাপী ২.৫ বিলিয়ন মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন এ জ্বরে আক্রন্ত হয়ে ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৯ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ ভাগ বেড়েছে। দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা ব্যাপক ভাবে জানা যায় ২০০০ সালে। সে সময় এটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এখন সময় ডেঙ্গু জ্বরের। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতি বছর বৃষ্টি শুরু হলেই এ জ্বরে আক্রান্ত হন অনেকেই।
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশাবাহিত এ রোগটি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তের সাথে মশার দেহে চলে যায়। মশার শরীরে এ ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে। ৮-১০ দিন পর ওই মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তার শরীরে ভাইরাস ঢুকে এ জ্বরে আক্রান্ত করে।
ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাস জনিত জ্বর তাই এর লক্ষণও কিন্তু ভাইরাস জ্বরের মতই। হঠা? করেই প্রচন্ড জ্বরে (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) আক্রান্ত হন। সাথে থাকে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা ( চোখ নড়ালে ব্যথা অনুভুত হয়)। শরীরে বা জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় বলে এ জ্বরের অন্য নাম ব্রেক বোন ফিভার। জ্বরের সাথে শরীরে র‌্যাশ বা লালচে ভাব দেখা দেয়। সাধারণত জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকে ত্বক লালচে ভাব ধারণ করে। আমাদের ত্বকে র‌্যাশ এত ভাল বোঝা যায় না। জ্বর সাধারণত ২-৭ দিন পর কমে যায়। জ্বর কমা হওয়া মানেই কিন্তু রোগ মুক্তি নয় বরং তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জ্বর কমার ২-৩ দিন পরের সময় বেশি মারাত্মক। এ সময় জটিলতা দেখা দেয়। রক্তে অনুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময়টাতে বেশি সচেতন থাকতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বার বার বমি বা রক্তবমি করতে পারে, পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভুত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাঢ়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, চোখে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এছাড়াও শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রচন্ড পেটে ব্যথা, আলকাতরার মত কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে, মল ও প্রসাবের সাথে রক্ত পড়তে পারে। একেই বলে ডেঙ্গু হেমোরোজিক ফিভার।
এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। চিকি?সা শুরু করতে দেরি করলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, নাড়ীর গতি ও রক্তচাপ কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হতে পারে এমনকি মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে। প্রতিবছর ৫ লাখ মানুষ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হলেও মারা যান ২.৫ ভাগ মাত্র। সঠিক সময়ে চিকি?সা করালে এ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। চিকি?সা শুরু করতে দেরি হলে মৃত্যুহার ২০ শতাংশ হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকি?সা কিন্তু সাধারণ জ্বরের মতই। বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। তবে দিনে ৪ বারের বেশি নয়। জ্বর কমানোর জন্য বার বার শরীর মুছে বা স্পঞ্জিং করে দিতে হবে। জ্বরে পানিশুন্যতা দেখা দেয় তাই প্রচুর পানি ও পানীয় যেমন ওরাল স্যালাইন, ফলের জুস, শরবত পান করতে হবে। তবে প্যাকেটজাত জুস পান না করাই শ্রেয়। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। শরীর ব্যথা থাকলেও অ্যাসপিরিন বা অন্য ব্যথানাশক ওষুধ একেবারেই সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকি?সার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরণের রোগীদের ইনজেকশন দেয়া যাবে না। এ ধরণের রোগীকেও প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। বমির কারণে অনেকে পানি পান করতে পারে না। তাদের ক্ষেত্রে শিরা পথে স্যালাইন দিতে হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকেই কিন্তু রক্ত দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০ হাজারের কম ও শরীরে রক্তক্ষরণ হলে প্লাটিলেট কনসেন্ট্রেশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। হিমোগ্লোবিন ৫ গ্রাম/ ডেসিলিটার-এর কম, শিরার মাধ্যমে স্যালাইন দেয়া হলেও অবস্থার অবনতি ঘটে, হেমাটোক্রিটের মাত্রা ভাল থাকে তবে হোল ব্লাড দেয়া যেতে পারে। হোল ব্লাড দিলে হেমোকসসেন্ট্রেশন হয়ে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে যেতে পারে। তাই প্রয়োজন না থাকলে হোল ব্লাড দেয়া ঠিক নয়। সিরাম অ্যালবুমিন ২ গ্রাম/ ডেসিলিটারের কম হলে, আক্রান্ত ব্যক্তি শকে গেলে প্লাজমা বা প্লাজমা সাবস্টিটিউ দিতে হয়। রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট ৫০ হাজারের নিচে নামা শুরু করলে রক্ত সংগ্রহে রক্তদাতাদের ঠিক করুন।
প্রতিরোধের সর্বোত্তম চিকি?সা। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজের ঘর ও আঙিনায় মশার উ?স ধ্বংস করুন। এডিস মশার বৈশিষ্ট্য হল এরা পরিষ্কার জমা হওয়া পানিতে বংশবিস্তার করে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে গেলে সে পানিতে এরা বংশবিস্তার করে। প্লাস্টিকের পাত্র, পুরোনো ক্যান বা পাত্র, গামলা, টায়ার, ডাবের খোসা, গাছের কোটরে, ফুলের টবে, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সুইমিং পুলের পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে। কারো অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যোগে বাড়ীর আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। সাধারনত ভোরে সূর্যোদয়ের আধঘন্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘন্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা যেন কামড়াতে না পারে এজন্য মশারি ব্যবহার করুন। কোথাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পেলে আশপাশের সবাইকে তা জানান এবং আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×