বাংলা আমাদের মাতৃভাষা , প্রিয় এ ভাষাটির মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের অনেক ভাই ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে অকাতরে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের প্রিয় এ ভাষাটির উৎপত্তি কিভাবে হলো । তাই আমি আজ থেকে তিনটি পর্বে সংক্ষিপ্ত রুপে আপনাদেরকে বাংলা ভাষার ইতিহাস ও উৎপত্তি সম্পর্কে মোটামোটি একটা ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো । এখানে উল্লেখ্য যে এটা আমার মৌলিক লেখা নয়, কারন বুঝতেই পারছেন আমি এখনো ছাত্র তাই মৌলিক লেখা লেখার মতো অভিজ্ঞতা ও সাহস অথবা পর্যাপ্ত জ্ঞান ভান্ডার এর কোনটাই আমার হয়নি । বাংলার একজন ছাত্র হিসেবে যতটুকু বিভিন্য লেখকের বই থেকে জেনেছি তার সারমর্ম নিয়েই আমার এই লেখা । তাছারা এই লেখায় আমি আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সাহায্য নিয়েছি । এই লেখায় কোন ভুলত্রুটি থাকলে অভিজ্ঞরা যদি কেউ থাকেন তবে দয়া করে ভুল গুলা শুধরে দেবেন বলে আশা রাখি তবে আমি চেষ্টা করেছি লেখাটিকে নির্ভুল রাখতে । এ ছাড়া আপনারা আরোও বিশদ ভাবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত "বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত , সুকুমার সেনের "ভাষার ইতিবৃত্ত" , SK Chaterjee রচিত "Origin and Development of the Bengali Language (Volume 1-3) "ইত্যাদি গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন । এই বইগুলো আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স বাংলা বিভাগের সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে অনুমোদিত ।
(পর্ব - ১)
বাংলা ভাষার সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে কোন ভাষা বংশ হতে এই ভাষাটির উৎপত্তি । ঐতিহাসিক ভাষাবিদদের মতে ইন্দো ইউরোপিয় ভাষা বংশ হতেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি । জেসাসের জন্মের আগ থেকে এখনো পর্যন্ত এ ভাষা বংশের ভাষাগুলোই পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে । নিদৃষ্ট ভৌগলিক এলাকার উপর ভিত্তি করে সাধারনত যেকোন ভাষা বংশের নাম করণ করা হয় আর এই নামকরণের পদ্ধতিটা হলো বিশেষ একটি ভাষা বংশ যে এলাকায় বিস্তৃত তার দুই দূরতম প্রান্তের নামের সমাস করে সাধারনত ভাষা বংশটির নামকরণ করা হয় । ঠিক তেমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের অন্তর্গত এলাকা সমূহের পূর্বপ্রান্তে ভারত এবং পশ্চিম প্রান্তে ইউরোপ থাকার কারনে বাংলা ভাষার ভাষা বংশটির নাম হয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় । আরো কয়েকটি নামে এই ভাষা বংশটিকে ডাকা হতো যেমনঃ- জর্মন ভাষাবিজ্ঞানীরা এই ভাষা বংশটিকে বলতেন ইন্দো-জর্মনীয় ভাষা বংশ । আবার প্রাচীন কালের ভারতীয় ও কেলটীয় লেখকেরা নিজেদের আর্য নামে অবিহিত করতেন বলে এই ভাষা বংশটিকে অনেকে আর্য ভাষা বংশও বলে থাকে । তবে বর্তমানে এই আর্য ভাষা বংশ নামটি এক প্রকার পরিত্যক্ত বললেই চলে । তাই বর্তমানে এই ভাষাবংশটির নাম হিসেবে ইন্দো-ইউরোপীয় নামটিই সকলের কাছে বেশি পরিচিত । আরা এখানে উল্লেখ্য যে এই ইন্দো-ইউরোপীয় নামটি রেখেছিলেন ফরাশি ভাষাবিজ্ঞানীরা ।
এখন আমরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো । বাংলাদেশের অধিবাসিরা আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলতোনা । আমরা জানি যে বাঙালি জাতি হলো একটি সঙ্কর বা মিশ্র জাতি ঠিক তেমনি বাঙালি জাতির মতই বাংলা ভাষাও একটি সঙ্কর বা মিশ্র ভাষা । অনেক ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানী বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছেন এবং তারা তাদের মতের পক্ষে জোরালো যুক্তিও উপস্থাপন করছেন । তার মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা অন্যতম । ড. মুহম্মদ শহীদুল্লার মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠির অস্তিত্ত ছিল । আনুমানিক আড়াই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে মূল ভাষা থকে যেসব প্রাচীন শাখার সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম হল আর্য ভাষা , আর্য ভাষার তিনটি শাখা আছে এগুলো হলোঃ ইরানীয়,দারদীয় ও ভারতীয় । এ থেকেই ভারতীয় আর্যভাষার সৃষ্টি । কালের বিবর্তন ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় আর্য ভাষাকে আবার তিনটি স্তরে ভাগ করা যায় যেমনঃ
(১) প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা ।
(২) মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা ।
(৩) নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা ।
ভারতীয় আর্যভাষার এই তিনটি স্তরের মধ্যে নব্যভারতীয় আর্যভাষা থেকে গৌড়ী প্রাকৃতের পরিণত অবস্থা গৌড়ী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম । আবার , ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় জর্জ গ্রিয়ারসনকে অনুসরন করে বলেছেন, মাগধী অপভ্রংশ থেকেই বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে ।
আজ এই পর্যন্তই ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাতাত্বিকের মতামত সংক্ষিপ্তরুপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো । সে পর্যন্ত ভাল থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ ।
আসুন জেনে নেই বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও উৎপত্তি । ( পার্ট-১)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার
এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।
আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন