২১শে জুলাই, বৃহস্পতিবার
রাত ৯ টা, অর্ণব কেবল মাত্র তার এমবিএ এর ক্লাস শেষ করে বের হল। ক্লাস এ অর্ণব এর সাথে রিমি ও ছিল। রিমি, অর্ণব এর থেকে কয়েক বছরের বড়। অর্ণব এইটা জানে। কিন্তু কিসের টানে বা কিসের জন্য অর্ণব, রিমি কে মন থেকে খুব পছন্দ করে? এইটা সে নিজেও জানে না।অর্ণব মাঝে মাঝে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে তার এই পছন্দ টা কি রিমির প্রতি তার ভালবাসা?অর্ণবের কাছে এইটাই ভালবাসা মনে হয়।কারন সে প্রতিদিন রিমির জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
যাই হোক ক্লাস শেষ করে বের হতেই রিমি,অর্ণবকে পেছন থেকে ডাকল- “অ্যাই অর্ণব তুমি কি এখন ফার্মগেট হয়ে যাবে?” রিমির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অর্ণব যখন রিমির দিকে তাকাল তখন প্রথমেই অরন্নবের চোখ পড়ল রিমির চোখের দিকে।এই দুটি চোখের দিকে তাকালেই অর্ণব কেমন জানি হয়ে যায়।অর্ণব, রিমির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলে যে- “হ্যাঁ আপু, আমি ফার্মগেট হয়ে যাব।” রিমি তখন অর্ণবকে বলল যে “চল আজ একসাথে যাই।” রিমির এই কথা শুনে অর্ণব মনে মনে খুব খুশি হল কিন্তু সে তার সেই খুশি প্রকাশ করতে পারল না। সে রিমিকে ভালবাসে।রিমির সাথে বাসায় যাওয়ার কথা শুনে সে তাই খুশিই হল।
ইউনিভার্সিটি এর মেইন গেইট থেকে রিকশা নিয়ে অর্ণব আর রিমি ফার্মগেট এর পথে রওনা হল। তারা দুইজন ক্লাস এর বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় ফার্মগেট এ পৌঁছে গেল।রিকশার ভাড়া পরিশোধ করে তারা রাস্তার অপর পাশে এসে বাস এর জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু আজ রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড়। এই অবস্থা দেখে রিমি অর্ণবকে বলল যে- “অর্ণব আজ মনে হয় কপালে বাস নাই, চল রিকশা তে যাই।” রিমির এই কথাই অর্ণবের মন অজানা আনন্দে ভরে উঠল।সে খুব খুশি হল এই ভেবে যে সসে যাকে ভালবাসে তার সাথে সে আরও কিছু বেশি সময় থাকতে পারবে।
তারা দুইজন ফার্মগেট থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রিকশা নেয়।রিকশা কিছুদূর যাওয়ার পর শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।রিমি বৃষ্টিতে ভিজতে চায়।অর্ণবেরও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু কয়েকদিন আগেই সে জ্বর থেকে ওঠার কারনে ভিজতে ভয় পাচ্ছিল।কিন্তু সে যখন শুনল যে রিমি বৃষ্টিতে ভিজতে চাচ্ছে তখন সে সিদ্ধান্ত নিল যে জ্বর হোক আর যাই হোক সে আজ বৃষ্টিতে ভিজবেই।রিকশাতে রিমি আর অর্ণব কথা বলছে।কথার মাঝে মাঝে রিমি হাসছে। আর রিমি যখনি হাসছে তখনিই অর্ণবের কানে রিমির হাসি নূপুরের মত বাজতে থাকে।রিমির হাসি অর্ণবের খুব পছন্দ।আসলেই রিমি খুব সুন্দর করে হাসে।রিমির সাথে কথা বলতে বলতে অর্ণবের মনে খুব ইচ্ছা হয় যে সে রিমিকে তার ভালবাসার কথা জানাবে। কিন্তু পরক্ষনেই তার মনে ছিন্তা আসে যে রিমি বিবাহিত, তার বাচ্চাও আছে।রিমি একজন সুখী গৃহিণী।এই চিন্তা করে অর্ণব নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করে।এই সব চিন্তা করতে করতে একসময় তাদের রিকশা রিমির বাসার কাছে চলে আসে।অর্ণব চিন্তা করে এখন রিমি নেমে জাবে।তার খুব ইচ্ছা করে রিমির হাত দুটো ধরে বলতে যে, সে রিমিকে খুব বেশি ভালবাসে।কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সে এইটা রিমিকে বলতে পারে না।
রিমি নেমে যায় রিক্সা থেকে। নামার আগে সে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বিদায় চায়।বিদায় বেলায় রিমির সেই সুন্দর হাসিটা অর্ণবের বুকে তীরের মত বিধে।কিন্তু তারপরেও অর্ণব তাকে হাসি মুখে বিদায় দেয়।রিমি নেমে যাবার পর বাকি পথটুকু অর্ণবের কাছে শবযাত্রার মত মনে হয়।এক গাদা দুঃখ এসে ভর করে অর্ণবের মনে।অর্ণবের মনে শুধু একটা কথাই বার বার মনে হতে থাকে,তার ভালবাসা কি সারা জীবন অব্ব্যাক্তই থেকে যাবে?রিমি কি তার প্রতি অর্ণবের এই ভালবাসা কখনই বুঝতে পারবে না???
আসলে কিছু কিছু মানুষের ভালবাসা কখনই সফল হয় না। এই গল্পে অর্ণবের ভালোবাসাও ঠিক সেই রকমেরই এক ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫৮