somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভাবে চলে গেলি বোন আমার?পারলি এভাবে চলে যেতে লক্ষী বোনটি আমার?

২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।একটি জাতির ভাগ্য বদলে দিতে পারে সুশিক্ষিত একটি জাতি।সু-শিক্ষিত জাতি গঠনে পরিবার এবং শিক্ষকের ভূমিকার বিকল্প কিছু নেই।হাটিঁ হাটিঁ পা বয়সের শিশুটি ঘর থেকে স্বাধীন ভাবে যায়গার প্রথম যায়গাটি হচ্ছে স্কুল।এই স্কুল থেকেই শিশুটি আস্তে আস্তে আশপাশ সম্পর্কে সচেতনতা লাভ করে।বাইরের দুনিয়ার সাথে শিশুটি কিভাবে মানিয়ে নিবে তা শেখার প্রধান যায়গা প্রাইমারী থেকেই শুরু হয়।প্রাইমারী,হাইস্কুল,কলেজ,ভাসির্টিতে গিয়েই সেটা শেষ হয়।একটি গাছ বপনের পর সেটিকে যতটা যত্ন করা লাগে বড় হয়ে গেলে কিন্তু সেই যত্ন করা লাগেনা।বড় হওয়ার পর গাছটি শিকড় দিয়ে যাবতীয় চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারে।ঠিক তেমনি করে একটি শিশুর জন্য প্রাইমারি থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত অনেক যত্নের প্রয়োজন হয়। মা-বাবার পর এই যত্নের অন্যতম চরিত্র হচ্ছে শিক্ষক।আচার-আচরণে নম্রতা,সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা,ধর্মীয় মূল্যবোধ,নৈতিকতা,ভাল-খারাপের ব্যবধান ,দেশপ্রেম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একজন শিক্ষক যতটা শিখাতে পারে তা আর কেউই পারবেনা।কিন্তু এই শেখার যায়গাটি অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বেশ প্রশ্নের সম্মুখীন।

কেন শিক্ষকতা পেশাটা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন?যারা ছেলেদের শিখাবে কিভাবে নারীদের সম্মান করতে হয়;যারা ইভটিজিং,ধর্ষনসহ হরেকরকম নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার নাগরিক গঠনের দায়িত্বে আছে; যারা শিশু-কিশোর-কিশোরীদের নৈতিকার শিক্ষায় শিক্ষিত করে আগামীদিনের সৎ আদর্শবান দেশপ্রেমিক নাগরিক উপহার দিবে জাতিকে কেন তারাঁ আজ ধর্ষকের ভূমিকায়,রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের ভূমিকায়?কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেইযে আজ থেকে ১০বছর আগেও স্কুলে শিশু-কিশোর/কিশোরী নির্যাতন ছিলনা।ছিল।কিন্তু তা খুবই সামান্য।তা কখনো কোচিং করাতে গিয়ে জোর করে ধর্ষন পর্যন্ত গড়ায়নি।কিন্তু এখন কেন হচ্ছে?কারণ,শিক্ষকতা পেশাটাকে আমাদের দেশসেবকরা চূড়ান্ত রাজনীতিককরণ করে ফেলেছে।গত আড়াই বছরে জাবিতে ১৬০জন শিক্ষোক নিয়োগ পেয়েছে শুধু দলীয় বিবেচনায়।একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ফেল করা ব্যাক্তিও শিক্ষক হয়েছে।শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নয় প্রাইমারি,হাইস্কুল,কলেজ নিয়োগ পরীক্ষায় চলছে দলীয় ভাবে নিয়োগ।যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র অবস্থায় বিভিন্নরকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।

দলীয় ভাবে নিয়োগের পাশাপাশি প্রাইমারি,হাইস্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ এখন বিক্রি হয় লাখ দুয়েক টাকায়।ঘুষ দিয়ে যারা চাকরিতে ঢুকছে কি শিখাবে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের।যারা নিয়োগ কিনেছে টাকা দিয়ে তাঁরা কোচিং বানিজ্য করবে এটাই কি স্বাভাবিক না?যারা নিয়োগ পাচ্ছে দলীয় বিবেচনায় তারা দেশের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাবে এটাই তো চরম বাস্তবততা।

বছর দুয়েক আগেও ধর্ষন,ইভটিজিং,নারী নির্যাতন,শিশু নির্যাতন এসব নিয়ে যেসব খবর পত্রিকার পাতায় আসত তার বেশীরভাগই বখাটে,সন্ত্রাসী,দলীয় ক্যাডার বাহিনী,স্বামী/পাড়াত/চাচাত/মামাত ভাই দ্বারা ।কিন্তু,গত কয়েকমাস ধরে সে চিত্র রীতিমত পাল্টে গেছে।পত্রিকা,বিভিন্ন বাংলা ব্লগ,অনলাইন নিউজ সংস্থাগুলোর পাতা দখল করে আছে শিক্ষক।অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে শিক্ষকতা পেশাটায় এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।গত কয়েকমাস ধরে নির্যাতনের প্রতীক হয়ে গেছে শিক্ষক।একটু আগে বাংলা নিউজ২৪ এর শিরোনাম হায় ! শিক্ষক দেখে পুরোটা পড়া শুরু করে স্তব্দ হয়ে গেলাম।এতদিন বখাটেদের অত্যাচারে কিশোরীরা রাগে,ক্ষোভে,অপমানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটার খবর পড়েছি।কিন্তু এর আগে কখনো পড়িনি পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বকুনি খেয়ে কোন কিশোরী আত্মহত্যা করেছে।পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কচুয়া গ্রামেরর হতদরিদ্র নজু প্রামাণিকের মেয়ে কচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী বিলকিস খাতুন ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফি’র টাকা জমা না দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে যাওয়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম পরীক্ষার হলে সহপাঠীদের সামনেই বিলকিসকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।চরম অপমানে পরীক্ষা না দিয়েই কাদঁতে কাঁদতে বাড়ি এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।টের পেয়ে পরিবারে লোকজন দরজা ভেঙে বিলকিসকে উদ্ধার করে পাবনা ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়।কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ হয়ে গেছে।বিলকিস চলে গেছে না ফেরার দেশে।শিক্ষিত হয়ে হতদরিদ্র বাবার মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্নকে নিজেই খুন (?) করেছে বিলকিস।এভাবে চলে গেলি বোন আমার ।যে দেশে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত সে দেশে না হয় তোকে কয়েকটা (!) গালি দিয়েছে বোন আমার।তাই বলে তুই চলে যাবি?একবারও ভাবলিনা তোর হতদরিদ্র বাবা-মায়ের কথা?

জানিস,তোর মত অনেকেই আছে যারা প্রতিনিয়ত কোন না কোন ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।জানিস আমি এমন একজনকে চিনি যাকে ক্লাস সিক্সে থাকতে আদরের নামে শিক্ষক বুকে হাত দিয়েছিল।সে আত্মহত্যা করেনি।সে সকল বাধাঁ উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।সে যদি শারিরীক নির্যাতন সহ্য করেও এগিয়ে যেতে পারে তুই কেন পারিসনি বোন আমার?যে দেশের সংসদে পর্যন্ত একজন আরেকজনকে গালি দেয় সে দেশে তোকে না হয় একজন শিক্ষক দু’চারটি গালি (?) দিয়েছিল তাই বলে তুই চলে যাবি?যে দেশের নেতাদের মানুষ সুযোগ পেলেই গালাগালি করে সে দেশের নেতাদের যেখানে কোন বিকার নেই সেই দেশে কেন তোর এত অপমান?না তোকে আমি ক্ষমা করতে পারিনা ।তুই ক্ষমার অযোগ্য ক্ষমা করেছিস।আমি রাষ্ট্রপতির ক্ষমাহীন ক্ষমাকে ক্ষমার চোখে দেখতে পারি কারণ উনি দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন কিন্তু আমি তোর এই চলে যাওয়াকে ক্ষমা (!) করতে পারবনা!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১:৩০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×