somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাজ্ঞানী পণ্ডিতগণ, চালাও তোমরা শিক্ষাঙ্গন... আমরা গেলাম সুন্দরবনে।

২৩ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি আমার নয়।
অনেক আক্রোশ নিয়ে লিখতে বসেছি। কি লেখা বেরুবে জানি না। তবে সবাইকে জানানো দরকার। ঢাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রকে পুলিশ ডাকাত বানিয়ে, মেরে হাত ভেঙ্গে, পায়ের টেন্ডন ছিঁড়ে দিয়ে, সারা শরীর থেঁতলে দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বিখ্যাত শিক্ষকগণ বারবার অনুরোধের পরও একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারেননি থানায়।

ছেলেটির নাম আব্দুল কাদের। তার বাড়ি কুমিল্লার বুরিচং থানায়। সে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাবির প্রাণরসায়ন থেকে অনার্স শেষ করেছে। সে ফজলুল হক হলের প্রধান ভবন এর ২০২ নং কক্ষে থাকত।

১৬ তারিখ রাত আনুমানিক ১ টার দিকে সে হল থেকে বের হয়। বন্ধুদের ভাষ্যমতে সে তার মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। টহল পুলিশ তাকে দুদক এর প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সে কোন আই ডি কার্ড দেখাতে পারেনি। তাকে সারারাত থানায় মারধর করা হয়। পরদিন তার রুমমেট তাকে দেখতে গেলে দেখা করতে দেওয়া হয় নি বরং আরও শাসানো হয়েছে যে দেখা করতে চাইলে তাকে আরও মারধোর করা হবে। দুপুরে তাকে ডাকাতি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চালান করে ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডের প্রথম দিন তাকে মেরে হাত ভেঙে দেওয়া হয়। পায়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে চামড়া ফাটিয়ে মাংস বের করে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল এ নেওয়া হয়। প্রথমে ওয়ার্ডে পরে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। তার মা, শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে দেখতে গেলে দেখা করতে দেওয়া হয় নি। বলা হয় এরপর যারা দেখা করতে আসবে তাদেরকেও গ্রেফতার করা হবে। সে এখন কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। আমার কথা হচ্ছে যে ছেলেকে কোনোদিন সিগারেট পর্যন্ত খেতে দেখা জেত না। যার সাথে কোনোদিন কারো ঝগড়াঝাঁটি হয় নি। সে কিভাবে ডাকাতি করে ও পুলিশকে দেখে ককটেল ছোঁড়ে টা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

এবার আমাদের বিখ্যাত পণ্ডিতগণ এর কথায় আসি। গ্রেফতার এর দিন সকালে বিভাগের শিক্ষকদের বিষয়টা জানানো হলে তাদের মন্তব্য শুনুন – চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী, “এটা ভার্সিটির বাইরের ঘটনা, এখানে আমার কিছু বলার নেই।“ সিনিয়র শিক্ষক ইশতিয়াক মাহমুদ, “তোমার এত মাথাব্যাথা কেন, নিজের পড়াশোনার দিকে নজর দাও।“ জুনিয়র শিক্ষক সজিব চক্রবর্তী, “তোমরা ব্যাপারটা দেখ।“ প্রোক্টর কে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি। অথচ এদের যে কারো একটা ফোন কল ই কিন্তু যথেষ্ট ছিল কাদেরকে রিমান্ডের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। আমার ভাবতে হতবাক লাগে যে কি ধরনের সুবিধাবাদী আর দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকেরা আমাদের এখানে পড়ায়। পলিটিকাল কেউ হলে তো এক সেকেন্ডও লাগে না পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু কোনোদিন রাজনীতির সাথে না জড়ানো কাদেরের জন্য কিছু করা তো ফাও খাটনি। কেন তারা করতে যাবে।

প্রোক্টর সাইফুল ইসলাম খান সাহেব তো আরও এককাঠি সরেস। তাকে অফিসে, ফোনে কোনোভাবেই খুঁজে না পেয়ে অবশেষে তার ফুলার রোডের বাসার সামনে গাড়ি করে বের হয়ে যাওয়ার সময় পাওয়া যায়। ছাত্ররা কাদেরের কথা বললে তিনি তাদের কাদেরের পক্ষ নেওয়ার জন্য তিরস্কার করেন। ছাত্রদের নাম জিজ্ঞাসা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন। তারপরও ছাত্ররা চাপাচাপি করলে তিনি ছাত্রলীগ এর এক নেতাকে ডেকে বলেন যে কিছু ছাত্র নাকি তাকে ‘ডিস্টার্ব’ করতেসে। সেই নেতা এসে ছাত্রদের ধমকাধমকি করে। তারপরও কিছু করার জন্য চাপাচাপি করলে সে বলে যে পুলিশ নাকি তাকে আগেই ফোন করেছে। কাদেরের বিরুদ্ধে নাকি এন এস আই এর রিপোর্ট আছে। এন এস আই কি আজকাল দাকাত/ছিন্তাইকারি ধরতেসে নাকি? যাওয়ার আগে তিনি বলে যান ছাত্ররা যদি এতই নিশ্চিত থাকে যে কাদের নির্দোষ তাহলে তাদের নাম ঠিকানা সহ ভিসির কাছে দরখাস্ত করতে।

কাদের দোষী নাকি নির্দোষ, দেশের পুলিশগুলো কত বড় হারামজাদা এইসব লিখতে গেলে আরেকটা লেখা লিখতে হবে। লিখবও হয়ত। কিন্তু এইখানে আমার সবথেকে ভয় লাগছে শিক্ষকদের আচরণ দেখে। আমরা ঢাকার বাইরে থেকে আসি পড়ালেখা করতে। এখানে আমাদের তেমন কেউ থাকে না। আমরা থাকি হলে। শিক্ষকেরা হবেন আমাদের অভিভাবকের মত। তারাই যদি এইরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন হন তাহলে এই ঢাবির আই ডি কার্ড নিয়ে ঘোরার মানে কি? তারা তো আমাদের পরিচয়টা পর্যন্ত কনফার্ম করতে উদাসীন। আজকে যে একটি ছেলের ক্যারিয়ার, শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবারের স্বপ্ন, সব শেষ হয়ে গেল তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা জানি কাদের কেমন ছেলে। তারপরও আমরা শিক্ষকদের বলি নাই যে কাদেরকে নির্দোষ বলতে। আমরা খালি বলেছি একটু পদক্ষেপ নিয়ে অন্তত একটা জামিন করাতে। তাহলে অন্তত মার খেয়ে পঙ্গু হওয়ার হাত থেকে সে বেঁচে জেত। তাও তারা করেননি।

আমি কোন ব্লগার না। কোন সংগঠনও করি না। আমার অনেক বড় ফ্রেইন্ডসার্কেল ও নেই। লোকজন বলে ব্লগ নাকি এখন অনেক শক্তিশালী। ফেইসবুক এ নিয়মিত শেয়ার লিংক গুলো পড়ি। অনেকেই অনেক ভালো লেখে। তাদের মত লিখতে পারি না। যতটুকু পারি তাই দিয়ে সবার কাছে বলছি। ঢাবির বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র হয়েও যদি ডাকাত হওয়া লাগে তাহলে আপনারা কেউ ই নিরাপদ নন। আবার বলছি সবার জানা দরকার। সাংবাদিক ভাইরা যদি পড়েন তবে প্লিজ একটা স্টোরি করেন। আমরা আমাদের বন্ধুদের মাঝে আরেকটা লিমন দেখতে চাই না। প্লিজ।
লেখকের নামটা বের করতে পারি নি বলে নামটা দিতে পারি নি। লেখক তার এই লেখাটা শেয়ার করার কথা জনলে অবশ্যই অভিমান করবে না বলেই আমার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকেই শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৩৭
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×