somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের আনন্দে বর্ষার গান গাই: একান্ত সাক্ষাৎকারে কোলা ব্যাঙ

২২ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্ষাকালে ব্যাঙ ডাকছে। একটা কোলা ব্যাঙ ডেকেই চলেছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। ব্যাঙ ডাকছে আর বৃষ্টি নামছে। আর এই বৃষ্টিতে বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে বিশাল এক লাফ দিলো একটি কোলা ব্যাঙ। তারপর লাফাতে লাফাতেই চলো এলো কিডজের অফিসে সাক্ষাৎকার দিতে। বললো, কিডজ ভাইয়া, আমিও কিন্তু নিয়মিত কিডজ পড়ি। আর সাক্ষাৎকার পড়তে তো আমার ভীষণ ভালো লাগে। সবাইকেই তো সাক্ষাৎকারে ডাকো। কোনোদিন কোনো ব্যঙের সাক্ষাৎকার তো নিলে না। তাই আমি আজ নিজে থেকেই চলে এসেছি। তা শুনে তো আমিও ভীষণ খুশি। অনেকদিন যে তোমাদের জন্য কারো সাক্ষাৎকার নেয়া হয় না! তোমাদের জন্য তাই কোলা ব্যাঙের পুরো একটা সাক্ষাৎকারই নিয়ে নিলাম। তো চলো তাহলে কোলা ব্যাঙের সাক্ষাৎকারটা শুনে আসি �খন।

: তা ভায়া কোলাব্যাঙ, আপনি এলেন কোথা হতে? মানে আপনার বাসাটা কোথায় তা জানতে চাইছিলাম।

: আমাদের প্রিয় থাকার জায়গাটি হলো ডোবা, নালা। পানি জমে যেখানে, সেখানেই আমরা বাস করি। তবে, আমরা যেখানে ভালো খাবার পাই তার আশেপাশেই বাসা তৈরি করি।

: আপনারা কি সবাই ডাকাডাকি করতে পারেন?

: না-না, সবাই কি আর ডাকতে পারে! আমাদের মধ্যে যাদের বয়স কম, যাকে বলে তরুণ, তারাই কেবল ডাকতে পারে। আর মেয়েরা তো মোটেই ডাকতে পারে না।

: আপনারা যে সবাই এভাবে তারস্বরে ডাকেন, মানে তখন কি একটা ভীষণ শোরগোল পড়ে যায় না?

: তা হবে কেন! এ তো আমাদের গান। আমরা বৃষ্টি শুরু হলেই একসঙ্গে গান গাই। মনের আনন্দে বর্ষার গান গাই।

: আপনারা এরকম উঁচুস্বরে গান গাইতে পারেন কিভাবে?

: আমাদের মুখের ভেতর একধরনের পর্দা আছে। আমরা যখন বাতাস মুখ থেকে ছেড়ে দিই তখন এই পর্দাটা ফুলে ওঠে। আবার আমরা শ্বাস নিই। তারপর আবার নিশ্বাস ছেড়ে দেয়ার সময় পর্দাটা আবার ফুলে ওঠে। এভাবেই তালে তালে গান চলতে থাকে।

: তো এবার আপনাদের জীবন সম্পর্কে বলুন।

: ছোটোবেলায় আমাদের নাম থাকে ব্যাঙাচি। অবশ্য নামটা মানুষেরই দেয়া। মজার কথা কি জানো? আমাদের না ছোটোবেলায় একটা লেজও থাকে। আর যখন বড়ো হই তখন আমাদের লেজটিও হারিয়ে যায়। তারপর যখন আরো বড়ো হই, তখন শিকার করতে শিখি। পানিতে ঘাড় ডুবিয়ে বসে থাকি। আবার মন চাইলে লাফ দিয়ে একটু ডাঙায় ঘুরে বেড়াই। আমাদের সবকিছুতেই বেশ মজা।

: আপনাদের প্রিয় খাবার কি?

: আমরা মুলত ছোটো পোকামাকড় খাই। এ ছাড়া জ্যান্ত কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ আর তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ সবজি, তখন খাওয়াটা যা জমে! সুযোগ পেলে লাল পিঁপড়া, কালো পিঁপড়া, মশা, মাছি আর আর সব পোকাও সাবাড় করে দিই। তবে কি, আমাদের খাবারের ৮০ শতাংশই আসে সবজি থেকে। বাকি ২০ শতাংশ হলো জীবন্ত কীটপতঙ্গ।

: যেভাবে পোকামাকড় আর পিঁপড়া-মাছি খাওয়ার কথা বলছেন, আপনারা তো মনে হচ্ছে বেশ ভয়ংকর প্রাণী! আকারে বড়োসড়ো হলে তো মনে হয় আপনারা আমাদেরও খেয়ে ফেলতেন!

: ছি ছি, মোটেও তা নয়! আমরা মোটেও ভয়ংকর প্রাণী নই। বরং বেশ নিরীহ একটা প্রাণী। কারো কোনো ক্ষতিই করি না আমরা। উল্টো মানুষের অনেক উপকার করি।

: আচ্ছা, আপনারা যে মজা করে পোকামাকড় খান, অন্য কোনো প্রাণী আপনাদের খায় না?

: তা আবার খায় না! আমাদের প্রধান শত্রু হলো সাপ। এছাড়াও কিছু কিছু দেশের মানুষও আমাদের খায়। এভাবেই কিন্তু আমাদের অনেককে শিকার করে ফেলা হচ্ছে আর আমাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

: আপনাদের সবার দেহের আকার-আকৃতিও কি একই রকম নাকি?

: নাহ। মেয়ে ব্যাঙ পুরুষ ব্যাঙের চেয়ে আকারে বেশ বড়ো। আর আমাদের হাত-পায়ের আঙুল দেখে ভেবো না, সব ব্যাঙের আঙুলই আমাদের মতোই। অন্যান্য ব্যাঙেদের হাত-পায়ের আঙুলগুলো আবার পাতলা চামড়ায় জড়ানো থাকে।

: আচ্ছা, ঐ ছাতার মতো দেখতে যে ঘর, ওটা কি আপনারাই তৈরি করেন? সবাই যাকে বলে ব্যাঙের ছাতা।

: না-না! যাকে ব্যাঙের ছাতা বলা হয় ও তো মাশরুম। মাশরুম তো মানুষরা আলাদা করে চাষও করে। আবার কিছু মাশরুম এমনিতেই পঁচা কোনো কাঠ বা আবর্জনার স্তুপেও জন্ম নেয়। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এমন সুন্দর একটা মাসরুম দেখে তার মধ্যেই বাসা বানিয়ে নেয়। তাই সবাই মনে করে এটা বুঝি আমাদেরই তৈরি।

: এবার একটু অন্য প্রশ্ন করি, রূপকথার গল্পে অনেক ব্যাঙকে রাজপুত্র সাজানো হয়। আপনি আবার কোনো দেশের রাজপুত্র নাতো?

: না-না ওই গল্প তো পুরোটাই কাল্পনিক। এখন পর্যন্ত সত্যিকার কোনো রাজপুত্রও ব্যাঙ হয়ে যায়নি বা কোনো ব্যাঙও রাজপুত্র হয় নি। আমরা আমাদের শিশুদের এমন কোনো আষাঢ়ে গল্পও বলি না। ওরা কেবল লাফাতে শেখে আর কিভাবে পানির ওপরে বা ডাঙায় চলতে হবে সেটা শেখে। আর শেখে কিভাবে জিভ দিয়ে পোকামাকড় ধরে ধরে মজা করে খেতে হয়।

: তো অনেক কথা হলো, কোলা ভায়া, এখন তবে আজকের মতো সাক্ষাৎকারটা শেষ করি, কেমন? যাওযার আগে কিডজ বন্ধুদের কিছু বলবেন?

: তা তো বলবোই। শোনো কিডজ বন্ধুরা, বর্ষা এলেই আমরা ব্যাঙেরা, বিশেষ করে কোলাব্যাঙেরা ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে বর্ষার গান গাই। সেই গান তো তোমাদেরও শুনতে বেশ লাগে। কিন্তু যেভাবে সব মাঠ-ঘাট আর খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে, কয়েকদিন পর তো আর আমাদের থাকারই জায়গা থাকবে না। তখন তো আমরা আর ডাকতেও পারবো না। তাই, তোমরা যখন বড়ো হবে, তখন কিন্তু এসব ব্যাপারে ঠিক ঠিক খেয়াল রেখো।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×