somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চির সবুজ ২৫
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! ছবি আমার বুকে বেঁধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি, সাগর আকাশ বাতাস চিরি' যেদিন আমায় খুঁজবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কান্না

২২ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফারুক আহমেদ আবির, দিদারুল আলম, নাসির উদ্দীন মোর্শেদ, মনোয়ার হোসেনr
জাহিদুল ই
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কত কষ্ট না করেছি। রাতদিন খেয়ে না খেয়ে পড়া। তবু শঙ্কা ছিল চান্স না পাওয়ার... না বিমুখ করেনি জগন্নাথ, নিজের বুকে আপন করে নেয় আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আনন্দে কী যে উন্মাদনা, তা এক সাগর কলমের কালিতে লিখে বোঝানোর মতো নয়। ভর্তি হওয়ার পর দেখলাম জগন্নাথের চারদিকে শুধু নাইয়ের ফিরিস্তি। শুধু নাই আর নাই। তবু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ভাঙাগড়ার স্মৃতি।
আমাদের ক্লাস করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণীকক্ষ নেই, শ্রেণীকক্ষ সঙ্কট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নির্বিকার। গত দুয়েক বছর ধরে তারা বলে আসছে, আগামি কয়েকদিনের মধ্যে ক্লাস সমস্যার সমাধান হবে।
নতুন ভবনের ৬ তলায় এক রুমের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। যেন দুঃসহ বেদনা নিয়ে দাঁড়িয়ে। শিক্ষার্থীদের সমব্যথি অসহায় গ্রন্থাগার। তেমন কিছু নেই তার মধ্যে। রেকগুলো প্রায় ফাঁকা। যেসব রেকে বই আছে সেগুলোও তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিদ্যুত্ চলে গেলে অন্ধকারে বসে থাকতে হয়। নেই জেনারেটরের ব্যবস্থা। লাইব্রেরি রুমটিতে বড়জোর ৩০-৩৫ জন একসঙ্গে বসে পড়তে পারে। তাই প্রতিদিন দুপুরে পড়তে এসে ফিরে যায় অনেক শিক্ষার্থী। লাইব্রেরিতে কোনো ফিল্টার নেই। নেই কপিয়ার মেশিন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, পুরো জগন্নাথজুড়ে চলছে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার। ছেলেরা মেস থেকে পানি খেয়ে আসে, আবার মেসে গিয়ে খায়। বার বার কর্তৃপক্ষকে পানির সমস্যার কথা জানালেও কোনো লাভ হয় না। জবির রেফারেন্স রুমের অবস্থা সব থেকে করুণ। ভিসি এসব সমস্যার সমাধানে পূর্বাপর এত বেশি আশ্বাস শুনিয়েছেন যে, এসব আশ্বাস এখন হাসি নয় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। অনেক ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষ নেই। অধিকাংশ ডিপার্টমেন্ট তাদের জন্য বরাদ্দ অফিস রুমের এক অংশ সেমিনার কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর বসতে কষ্ট হয় এসব রুমে। বড়জোর ৮ কি ১০ জন বসা যায়। অথচ একটি ব্যাচেই শিক্ষার্থী সংখ্যা সর্বনিম্ন ৫০। কোনো বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের উল্টা রোষানলে পড়তে হয় ।
আমরা কোথায় পড়ব, কীভাবে পড়ব জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকদের সোজা উত্তর—ভর্তি হয়েছ কেন নতুন ডিপার্টমেন্টে; তোমাদের তো আমরা ডেকে আনিনি। ভালো না লাগলে চলে যাও। দরজা খোলা। আর থাকতে চাইলে এভাবেই মুখ বন্ধ করে থাকতে হবে। পড়াশোনার পরিবেশ নিয়ে কিছু বলতে পারবে না। কিন্তু আর কতদিন? জগন্নাথের প্রতিটি বিভাগে চলছে শিক্ষক সঙ্কট। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কলেজ থাকাকালীন শিক্ষকদের দ্বারা। গত ছয় বছরে জবিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে অতি নগণ্য। যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। দেশের ইতিহাসে পলিটিক্যাল ফরমালিটি রক্ষার সর্বোত্তম উদাহরণ হচ্ছে জগন্নাথ। পলিটিক্যাল নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা ক্লাস লেকচার দিতে এসে নিজেরাই নোংরা রাজনীতি শুরু করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাত্র ক্যান্টিন। বর্তমানে তাও বন্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট এ ক্যাম্পাসটির একটা বিশাল অংশ জুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এটি অপসারণের দাবি জানালেও অদৃশ্য কারণে অপসারণ হচ্ছে না ব্যাংকের এ শাখাটি। প্রশাসন নির্বিকার। তাদের যেন এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। বিএনপির প্রথম আমলে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন এ শাখাটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জবির যাত্রা শুরুর পর তিনি আবার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও একাধিকবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দুটি। কথাটি শুনতে কেমন যেন করুণা উপচে পড়ে। আর সিকিউরিটি গার্ডের কথা নাই বা বললাম। জবির দক্ষিণ গেটটিকে ঘিরে চলে বিশাল চাঁদা বাণিজ্য, তাই গেটটি কখনও খোলা হয় না। গেটটির সামনে বানানো হয়েছে গাড়ির গ্যারেজ। জবি ক্যাম্পাসে বিকাল পাঁচটার পর ঢুকতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন এক্ষেত্রে সরব হলেও বিকালে ক্যাম্পাসে মাদকের আড্ডা নিয়ে একেবারেই নীরব তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ নিয়ে বর্তমান প্রশাসন এতটাই সচেতন যে গত ক’বছরে তারা বেদখল হওয়া জবির ১২টি হল উদ্ধার তো দূরের কথা, এগুলো উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই করেনি। একটি হলের অবস্থানও তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমাদের প্রশাসনের বদান্যতায় সম্প্রতি এক কথিত শহীদ পরিবারের নামে শহীদ আজমল হোসেন হল আবার দখল করা হয়েছে। হল উদ্ধারে একটি কমিটি আছে; কিন্তু তাদের কোনো কাজ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধারের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে নামলে তাদের দমনে প্রশাসন বেশ পারঙ্গম। লেলিয়ে দেয়া হয় পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় প্রত্যেক বিভাগের রাজনৈতিক শিক্ষকদের। গত তিন বছর ধরে প্রশাসন বলে আসছে, কেরানীগঞ্জে ১০১ একর জায়গা রাখার কাজ প্রক্রিয়াধীন। তা এখনও প্রক্রিয়াধীনই রয়েছে। কোনোদিন তার বাস্তব রূপ দেখা যাবে কিনা কে জানে। শহীদ আজমল হোসেন হল নতুন করে বেদখল হওয়ার খবরে সম্প্রতি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটা আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রশাসন তড়িঘড়ি করে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যনারে মানববন্ধনের আয়োজন করে। প্রগতিশীল ছাত্র জোট দীর্ঘদিন ধরে হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন করে এলেও তাদের এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। আন্দোলনের ব্যাপারে কিছুই জানে না হল উদ্ধার আন্দোলনের নেতারা। গত ছয় বছরে হল উদ্ধার তো হয়ই-নি, প্রশাসন এক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ, উল্টো হলগুলো নতুন করে দখলে নিল ভূমিদস্যুরা। মেস জীবনের ঘানি টানতে টানতে জীবন শেষ, মেধা চর্চার সময় কোথায় জবি শিক্ষার্থীদের? তবু পড়তে চাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আমাদের বাবার টাকা নেই। চাইলেই আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন নিতে পারি না। পারলে হয়তো এত কষ্ট করে ভর্তিযুদ্ধে লিপ্ত হতাম না। কিন্তু এসব কী হচ্ছে আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে? দু’দলের সংঘর্ষ যেন প্রতিদিনকার ব্যাপার। প্রশাসন-পুলিশ তখন শান্ত দর্শক। সবশেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শুরু হয় পুলিশের অ্যাকশন। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হই আমরা। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তবু শান্তি নেই। আদুভাইদের মারামারির ফলে বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস। ক্লাস বন্ধ থাকে। তারপর সেশনজটের ফিরিস্তি না বললেও চলে। একবার ভাবি, শিক্ষকদের কথা শুনে শুধু ডিপার্টমেন্ট নয় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু তাদের কথা ভেবে থমকে দাঁড়াতে হয়, যে মুখগুলো আমাদের পানে তাকিয়ে আছে। তারা আমাদের সাফল্য দেখার জন্য ব্যাকুল অপেক্ষায় আছে। আমাদের মা-বাবা-শুভাকাঙ্ক্ষী। আমাদের কাছে তাদের চাওয়া তো আমরা শিক্ষা আর সাফল্য নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বেরুই। কিন্তু জগন্নাথে সে সুযোগ কই। আমাদের প্রশাসন পাথরসম কঠিন। তারা আমাদের দুঃখ বোঝে না। আমাদের আহাজারি তাদের কানে পৌঁছায় না।
লেখকগণ : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী
[email protected] Click This Link
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×