somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারা দুজন....

২১ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





হুমম...তারা দুজন। তাদের দুজনের আগমনের কাহিনী তো আগেই বলেছি। আজ তাদের দুজনের সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু হাসি-কান্না, কিছু ভালো-মন্দ মুহুর্তের কথা বলি।







তারা দুজন...আমার সব আদর আর শাসনের একমাত্র প্রয়োগক্ষেত্র...আমার ছোট্ট দুটি ভাই।

প্রথম যেদিন ওদের দেখতে গিয়েছিলাম, সেদিন হসপিটালে প্রচুর আত্মীয়স্বজন এসেছিল ওদের দেখতে। আমি ছোট্ট একটা মানুষ এতো মানুষের ভীড়ে দেখতেই পারছিলাম না। তখন নানু আমাকে ডেকে নিয়ে বললো, “দেখো, আল্লাহ তোমাকে সুন্দর দুইটা ভাই দিয়েছে।“ সেদিন আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ছোট্ট নিষ্পাপ দুটো মুখের দিকে।


ঘরের সবাই ওদের কোলে করে নিয়ে হাঁটতো, শুধু আমাকে দিতো না। আমি কোলে নিতে চাইলেই খাটের একদম মাঝখানে বসিয়ে তারপর কোলে নিতে দিতো। প্রচুর মন খারাপ হত তখন। আমার ভাইদেরকে আমি ছাড়া সবাই কোলে নিত। আর আমি তখন রাজ্যের অভিমান নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকতাম। কখনো এক মুহুর্তের জন্যও যদি সুযোগ পেতাম দৌড়ে গিয়ে কোলে নিতাম।


ওরা একটু বড় হওয়ার পর থেকে ওদের ঘুমের দায়িত্ব পড়লো আমার ঘাড়ে। কারণ আমি ঘুম না পাড়ালে ওরা ঘুমাতো না। বেবী সাইকেলের পিছে বসিয়ে ওদের কত যে ঘুম পাড়িয়েছি। ছোট্ট ছোট্ট হাতদুটো দিয়ে ওরা শক্ত করে আমাকে ধরে রাখতো। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো ঠিক নেই। তারপর একজনকে খাটে শুইয়ে আরেকজনকে ঘুম পাড়াতাম।


ওদের বয়স তখন ২/৩। একদিন আমরা তিনজন মিলে রান্না-বান্না খেলছিলাম। তো সকাল হয়েছে আমি ঘুম থেকে উঠে ওদেরকে বললাম, “যাও তোমরা মুখ-হাত ধুয়ে এসো। আমি নাস্তা দিই।“ ওয়াশরুম বানানো হল টেবিলকে। তো একজন গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে আসলো। এবার আরেকজনের পালা। সে গিয়ে সত্যি সত্যিই ফ্রেশ হয়ে আসলো। ;) আমার তো দেখে পুরো আক্কেলগুডুম।:-* প্রচন্ড চেচামেচি শুরু করলাম আর আমার ভাইটা কেঁদে দিল। চেচামেচি শুনে আম্মু ছুটে এসে দেখে যে আমার ভাইটা কাঁদছে আর আমি ওকে ঝাড়তেছি। আম্মু জিজ্ঞেস করলো কি করেছে। তখন ও কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আপুনি আমাকে বলছে হাত-মুখ ধুয়ে বাথরুম করে আসতে। এখন আমি বাথরুম করছি দেখে আমাকে বকতেছে।:((


নিহানের এক্সিডেন্টের কথাটা ভাবলে এখনো আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। তখন ওর ছ’বছর হবে। আব্বুর অফিস থেকে আমরা সবাই পিকনিকে গিয়েছিলাম। সবাই যে যার মত ঘুরছে, গল্প করছে। আমি আমার একটা বিশাল গ্রুপ নিয়ে তখন গল্পে মশগুল। হঠাৎ শুনি কে যেন চিৎকার করে আমাকে ডাকছে আর বলছে নিহানের জানি কি হয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি নিহান পুরো রক্তাক্ত হয়ে আছে। দোলনার সাথে বাড়ি খেয়ে চোখের কোনা কেটে গেছে। নিহানকে গিয়ে ধরলাম। ও আমাকে ধরে অনবরত কেঁদে যাচ্ছিল। আমি যে কাউকে ডাকবো সেই ভাষাটাও যেন হারিয়ে ফেলেছিল্লাম। আম্মু দেখে সেন্সলেস হয়ে গেল। কি যে একটা মুহুর্ত ছিল সেটা বলে বুঝানো যাবে না। সেদিন ওর চোখে ৩টা স্টিচ পড়েছিল। আর পিকনিকের কথা নাই বা বললাম। বাইরের মানুষজন আগে ওদের চিনতোনা। আর স্টিচটার কারনে নিহান মার্কড হয়ে গেল।


সে বছর ওদেরকে বাসার পাশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হল। তারা দুইভাইই মহাখুশি। বেশকিছুদিন পর আমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, “স্কুলে তোমাদের কয়টা বন্ধু হল?” তো অরা দুজনই নাম বলছিল। হঠাৎ নিশান নিহানকে বললো

নিশান : এই তুই মিতুর কথা বলিস নাই।
নিহান : ও আমার বন্ধু না। (খুব রাগ হয়ে)
আমি : কেন? কি হয়েছে?
নিহান : ও শুধু আমাকে আদর করে।
X(
=p~ =p~ =p~


ক্লাস ওয়ানে ওদেরকে ভালো স্কুলে ভর্তি করানো হবে। সুতরাং ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা। আম্মু বাসাতেই তেমন প্রিপারেশন নিচ্ছিল। যেদিন ভর্তি পরীক্ষা হল, সেদিন বাসায় ফিরে

আম্মু : সব পারছো?
নিশান : গণিত পারি নাই।
আম্মু : কেন? কঠিন হয়েছে?
নিশান : আমার মনে হয়েছিল আমি পারি। কিন্তু করি নাই।
আম্মু : পারলে কর নাই কেন?
নিশান : অংকের সাথে মিল ছিল গণিতের। কিন্তু তুমি তো আমাদের অংক করাইছো, গণিততো করাও নাই।
/:) B:-)



এই হল তারা দুজন...:P



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:২৮
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×