somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ প্রসঙ্গঃ ঘটনার আড়ালের ঘটনা

২১ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

by Kaniz Fatima Chhanda on Tuesday, 19 July 2011 at 22:38

‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ প্রসঙ্গ' বহু পুরনো এই ইস্যু। ব্লগে এবং ফেসবুকে এতবার লেখালেখি হয়ে গেছে যে ইস্যুটি এখন পুরনো মনে হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও কিছুটা বাধ্য হয়েই হাতে কলম তুলে নেয়া। ঘটনার সামনে-পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘটে যাওয়া অদৃশ্য-অজানা দৃশ্যাবলী উপস্থাপনের জন্যই এই লেখা।



শিক্ষক নিয়োগে এ যাবৎকালে ভিকারুননিসায় চলে আসা অলিখিত নিয়মাবলীঃ

১. প্রত্যেক শাখায় নারী ও পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের হার ৯৯:১ হতে হবে।

২. নিয়োগপ্রাপ্ত পুরুষ শিক্ষকের ‘Marital Status’ বিবাহিত হতে হবে (সাধারণত ধরে নেয়া হয়, বিবাহিত পুরুষ শিক্ষকের অভিভাবকমূলক আচরণের দরুণ তার সাথে ছাত্রীদের একটি যৌন হয়রানিবিহীন নিরাপদ সম্পর্ক বজায় থাকে)।

৩. অধ্যক্ষ নির্বাচনে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বয়োঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে করে অনেকগুলো বছরের লব্ধ অভিজ্ঞতা পুরো প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চালনায় সহায়ক হবে।

আগেই বলেছি যে এগুলো অলিখিত নিয়মাবলী। শুরুতেই উল্লেখ করে নিলাম কারণ পরের প্রসঙ্গগুলোতে এটা কাজে আসবে।



অধ্যক্ষ পদে রোকেয়া আক্তারের অপসারণ ও হোসনে আরার আসন গ্রহণঃ

সবার চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া একটি কথোপকথন (প্রকৃতপক্ষে একটি উক্তি) তুলে ধরছি। কথোপকথনের ব্যক্তিদ্বয় তৎকালীন অধ্যক্ষ রোকেয়া আক্তার এবং গভর্নিং বডির প্রধান রাশেদ খান মেনন।

রোকেয়া আক্তারের প্রতি মেননের বক্তব্য, “বেটি তুই যাবি নাকি তোর চুলের মুঠি ধরে নামাবো?”

(নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রকৃত বক্তার নাম এখানে প্রকাশ করলাম না কিন্তু ভিকিরা অনেকেই এটা জানলেও মুখ খুলছে না)



ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করে আসা রোকেয়া আক্তার এই প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ফেয়ারওয়েলও নিয়ে যাবার সময় পান নি। তার আগেই তাকে অধ্যক্ষের আসন থেকে সরে গিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হয় এবং তার পরিবর্তে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান আজিমপুর গার্লস স্কুলের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম। ভিকারুননিসায় এসেই হোসনে আরার গর্বিত বক্তব্য, “আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বান্ধবী।“

প্রশ্ন ওঠে, অলিখিত নিয়মাবলী ৩ ভঙ্গের জন্য মেনরের এত তাড়া ছিল কেন? প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী বলেই কি রোকেয়া আক্তারের দ্রুত অপসারণ খুব জরুরী হয়ে পড়েছিল?



অধ্যক্ষ হোসনে আরার সময়কালে ঘটে যাওয়া অনিয়ম ও দুর্নীতিঃ

১. প্রতিষ্ঠানের নাম ও ড্রেস্ কোড পরিবর্তনের ব্যর্থ চেষ্টা।

২. স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি পরীক্ষার বদলে লটারি ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম চালু করা হয় যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিমুক্ত ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। কিন্তু নিয়মটি যে নিঃসন্দেহে চরমভাবে লংঘিত হয়েছে তার প্রমাণ পেতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশীষ এন্তাজ রবির লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।

৩. বসুন্ধরা শাখায় ৬০:৪০ অনুপাতে নারী-পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে যেখানে অবিবাহিত সত্ত্বেও পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন (পরিমল জয়ধরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, তিনি তার Marital Status তখনও প্রকাশ করেন নি)। সুতরাং অবধারিতভাবেই প্রথম দুটি নিয়ম ভঙ্গ হয়।

৪. নিয়োগপ্রাপ্ত পুরুষ শিক্ষদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, কর্মরত অবস্থায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার এবং ধর্ষণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা প্রদানের অভিযোগ আনা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ নির্বিকার ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি অভিযোগকারী মেয়েটিকে বহিষ্কার এবং ধর্ষকের মদতদাত্রী হিসেবেও শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন।



১৬ হাজার ছাত্রীর চাওয়া-আমাদের দাবীঃ

১. যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক পরিমল জয়ধরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

২. তদন্ত সাপেক্ষে দোষী অন্য আসামি ও অপরাধীদের দৃষ্টানমূলক শাস্তি

৩. অধ্যক্ষের অপসারণ

৪. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যনে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন

৫. জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষদের মধ্য থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ

৬. বিভিন্ন শাখায় যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে আচরণগত সমস্যার উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

৭. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা







১৬ হাজার ছাত্রীর চাওয়া-আমাদের দাবী...



আমাদের প্রাপ্তিঃ

১৬ হাজার ছাত্রীর মাত্র ৭ টি দাবীর বিপরীতে প্রাপ্তির তালিকাটি নেহাৎ ছোট নয়। পরিমল জয়ধরের গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তির পর বিচারের ব্যাপারটি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবার পরেও আমাদের আন্দোলন চলেছে। আমরা চেয়েছি সর্বোচ্চ বিচার ব্যবস্থাটি নিশ্চিতভাবে বাস্তবায়ন ও ত্বরান্বিত করতে, চেয়েছি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে, চেয়েছি আমাদের প্রতিবাদী বোনটির পাশে দাঁড়াতে যাতে করে সে হেরে না যায়, পৃথিবীর কিছু অশুভের বিরুদ্ধে যাতে তার পরাজয় না ঘটে। যে কলংক তার জীবনে একটি সীলমোহর হয়ে বসে যেত, আমরা সবাই চেয়েছি সেটি ভেঙে দিতে। বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি?



*কিছু আধুনিকমননা ছেলেদের টিটকারী আমাদের হজম করতে হয়েছে।

“হুহ, দেখব মেয়েরা কতদূর যাইতে পারে। এইটুকু বুদ্ধি নিয়া নামছে, কী আর করতে পারব?”

“মানব বন্ধনে শুধু মেয়েরাই যাইব, আমাগো নিব না, মোটামাথা আর কারে কয়! মানুষ বেশি না হইলে না হইলে পারব কোন কচুটা করতে!”

“চল চল, মজা দেইখা আসি।”

"পরিমলের ভিডিও না দেইখা কেমনে কই যে ঐটা মিউচুয়াল ছিলো না রেইপ ছিল?"

দুর্ভাগ্যজনকভাবে উক্তিগুলো আমার নিজের কানে শোনা। কিছু কিছু অন্যদের মাধ্যমে জেনে নেয়া।



*মিডিয়ার অপপ্রচারের কথা সবাই জানেন এতোদিনে। প্রথম আলোতে 'এমন সম্পাদকীয়' বের হলে রিপোর্টাররা আর 'এই ধরণের রিপোর্ট' করতে দোষ কি! (প্রথম আলো তাদের আর্কাইভ সুবিধাটি এখন বন্ধ রেখেছে কোন একটা অজানা কারণে, তাই এখানে লিংক দুটি দিতে পারলাম না)

দেশ টিভি-এনটিভির সাংবাদিকদের সরাসরি হুমকিও সবাই জেনে গেছেন, সেটা নাই বা পুনরাবৃত্তি করলাম।

মুন্নী সাহার বিশেষ টক শো ও একইভাবে পুরনো হয়ে গেছে।



*সরকারি হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গে আসি।

এতসব ঘটনার পর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর টনক নড়লো তখনই যখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্থানে আম্বিয়া খাতুনের নাম চলে এলো। ছাত্রীরা খুশিতে পাশের ফাস্টফুডের দোকান থেকে কেক এনে কাটলো। সেখানেও বিপত্তি। শিক্ষামন্ত্রীর মতামত, এ নাকি পূর্বপরিকল্পিত রাজনীতির আভাস! তিনি মন্তব্য করলেন যে তিনি নাকি এসবের কিছুই জানেন না এবং তাকে না জানিয়ে নিজেরা নিজেরা এই সিদ্ধান্ত নেবার ফল হলোঃ পর্যালোচনা পর্ষদ বাতিল!

মাননীয় মন্ত্রী কি চোখ বন্ধ করে দেশে বাস করেন? বিএনপি যেমন তেল-গ্যাস রপ্তানি বিষয়ক কিছু জানে না বলে টোকাইদের হরতাল সমর্থন করে নি, ঠিক তেমনি তিনিও কি তাই? ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে যখন পুরো ঢাকা তোলপাড়, মানব বন্ধন, শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভা, আমাদের দাবীতে যখন পত্রিকা আর টেলিভিশন মিডিয়া সবকিছু ছেয়ে গেছে, যখন ভিকারুননিসা পুরো অস্থিতিশীল একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো, যখন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত এবং যখন অধ্যক্ষ নিজে অনুপস্থিত তখন এই নামকরা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবথায় ফিরিয়ে আনতে কোথায় ছিল গভর্নিং বডির বাঘা বাঘা মাথাগুলো? কোথায় ছিলেন তখন মাননীয় মন্ত্রী? কয়েকদিনের অস্থিতিশীলতা, পরিমলের স্বীকারোক্তি আর অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি কিছুই কি তার চোখে পড়ে নি? যখন এই অবস্থা পরিবর্তনে হোমড়া-চোমড়া কেউই এগিয়ে আসছিলেন না তখন বাধ্য হয়েই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য বয়োজ্যেষ্ঠ, নীতিবান আম্বিয়া খাতুনকে ঠেলে দিলেন সামনে আর ঠিক তখনই মাননীয় মন্ত্রীর টনক নড়ল যে এই নিয়োগ অবৈধ! ঠিক তখনই ৩৪ বছরের সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠানের চোখের সামনে তাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো মৌলবাদী হিসেবে! আর লুকিয়ে থাকা হোসনে আরাও সাহস পেয়ে জোর গলায় চেঁচিয়ে উঠলেন! তাকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে পুনর্বহাল করা হলো!

এই ঘটনার পর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী হঠাৎ করেই যেন পেয়ে গেলেন রাজনৈতিক আভাস! ১৪ জুলাই ক্যাম্পাসে পুলিস ফোর্স পাঠানো হল এক্স ভিকিদের হাজতে ধরে নিয়ে যেতে। কলেজ কম্পাউন্ডে দাঁড়িয়ে আমি হতভম্ব! জানতে পারলাম, অসুস্থ রাজনীতির পক্ষে মদতদাতা হিসেবে আমাদের ধরে নিয়ে যাবার জন্য ওয়ারেন্ট এসেছে! যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা, চাকরি বাদ দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে ছুটে এসেছে আমার মত আরো আরো এক্স ভিকিরা শুধুমাত্র তাদের প্রাণাধিক প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে এবং কলেজে দুর্নীতিগ্রস্থ হোসনে আরার অণুপ্রবেশ ঠেকাতে, সেখানে ওয়ারেন্ট এসেছে আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবার! সরকার আসলে কি চায়? প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবীকে বাঁচাতে নাকি দেশে আরো বেশি রেপিস্টদের জন্ম দিতে?

স্মারকলিপি দিতে গেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে উঠলেন যে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, তাই তিনি টেলিভিশনে দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই টেলিভিশন যেখানে মিডিয়ার মিথ্যা-বানোয়াট-দুর্বল সংবাদ প্রচারিত হয়!



তবু সাময়িকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলো যখন হোসনে আরাকে সরিয়ে ইতিহাস বিভাগের মঞ্জু আরাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হলো। কিন্তু কি হল হোসনে আরার? তিন মাসের ছুটির অজুহাতে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই কি তাকে সরিয়ে নেয়া হল লোকচক্ষুর আড়ালে?



*পরিমলের স্বীকারোক্তিতে যখন মেয়েটির পোশাক প্রসঙ্গ উঠে আসলো তখন সমাজের ভদ্রমহল আরেকবার সমস্বরে চিৎকার করে উঠলেন। তাদের মতে, এরকম পোশাক পরিহিতাকে ধর্ষণ করা যেতেই পারে! তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এদেশে সালোয়ার-কামিজ-শাড়ি-বোরখা পরিহিতারা কি কখনোই ধর্ষিত হন নি এর আগে? কখনোই কি তারা যৌন হয়রানির কবলে পড়েন নি ভিড়াক্কার মার্কেটে কিংবা লোকাল বাসে? পরিমলের মত মানসিকতার পুরুষেরা কি শুধু পোশাকের আবরণের তারতম্য দেখেই বেছে বেছে তাদের শিকার নির্বাচন করে?



*কথা উঠেছে ভিকিদের রাজনৈতিকভাবে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে।

জনৈক ভদ্র ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির (আমি তার নাম প্রকাশ করছি না) বক্তব্য, “ভিকিরা কেন বলে যে তারা রাজনীতিমুক্ত উন্নত মম-শির? তারা যদি রাজনীতিমুক্ত হবেই তবে মাননীয় মন্ত্রী কি বলছেন তার সমালোচনায় তারা কেন মুখর থাকে?” তিনি নাকি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় অবস্থান করেছেন এবং শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে বলেছেন যে মাননীয় মন্ত্রী নাকি তার সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাদ দিয়ে শুধু ভিকারুননিসা ইস্যু নিয়েই চিন্তাগ্রস্থ। (যেখানে মন্ত্রী মহোদয় চিন্তায় চিন্তায় সমাধান বের করেন হোসনে আরাকে পুনর্বহালের মাধ্যমে এবং কেক কাটার উৎস খুঁজে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে )

এই ভদ্রলোক এবং তার আশেপাশের সন্দেহপ্রবণ মানুষ ও মিডিয়াকে বলতে চাই, আজ যদি আমি মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভালো চালের ভাত খেতে না পারি (আমার সীমাবদ্ধ আয়ের কারণে), তবে কি আমি কখনো বলতেও পারব না যে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে? নাকি আমার চাল কেনার অক্ষমতার সাথে সাথে সেটুকু বলার অধিকারও আমি হারিয়ে ফেলব? এমন কি সংবিধানে আছে যে, সাধারণ আমজনতা যারা রাজনীতি করে না, তারা কখনো রাজনীতির আলোচনা করতে পারবে না?



*প্রথম আলোতে 'ছাপা হয়েছে' (প্রথম আলো তাদের আর্কাইভ সুবিধাটি এখন বন্ধ রেখেছে কোন একটা অজানা কারণে, তাই এখানে লিংকটি দিতে পারলাম না) অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসা হোসনে আরাকে অধ্যক্ষ নির্বাচিত করায় ছাত্রী এবং শিক্ষকরা আগে থেকেই তার বিরোধী ছিলেন যা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে কাম্য নয়। বলা বাহুল্য, নিয়োগ দেবার পরপরই আমরা ভিকিরা কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ ছিলাম না। আমরা তার বিরোধিতা করেছি তখনই যখন তিনি চূড়ান্তভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

একজন শিক্ষককে অবমাননা করতে কখনোই আমাদেরকে শেখানো হয় নি। শিক্ষককে মায়ের তুল্য বলেই আমরা জেনে এসেছি বরাবর। কিন্তু যখন আমরা সেই আশ্রয়টি হারিয়েছি, তখনই বুঝতে পেরেছি মা হবার যোগ্যতা সবাই রাখে না। আর তখনই আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। সেটা কি অন্যায় কিছু ছিল?



*নারীরাই নারীদের বড় শত্রু-কথাটা বোধহয় তিল পরিমাণ হলেও সত্য। এ কথা হোসনে আরাকে দিয়ে প্রমাণ হয়েই গেছে ইতিমধ্যে। তবু আমি আলাদা করে বাইরের কিছু কথা, কিছু নারীর কথা বলতে চাই (সম্মানহানীর কারণে যাদের নাম আমি প্রকাশ করছি না), যারা ধর্ষিতা মেয়েদেরকেই দোষারোপ করেন। কারণ-

১. ধর্ষিতার পোশাক আপত্তিকর ছিল

২. ধর্ষিতার আচরণ বহির্মুখী

৩. ধর্ষিতার মানসিকতা তথাকথিত ইসলাম ধর্মভিত্তিক নয়



শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা মেয়েদের ধর্ষিত হওয়াকে সমর্থন করেন কিন্তু তারা কি জানেন না যে ধর্ম ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের আব্রু তাদের নিজেদেরকেই রক্ষা করতে বলে দিয়েছে? একজন সত্যিকার ঈমানদারের ঈমান কি অর্ধনগ্ন নারী দেখলেই টলে যায়? উত্তর হ্যাঁ হলে তিনি তো ভন্ড ঈমানদার! প্রমাণ চান? তবে দেখুন!

ধর্মের প্রসঙ্গ বাদই দিলাম। এইসব নারীদের (পুরুষদের কথা বলছি না বলে ভাববেন না যে এই তালিকায় তারা নেই) পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয় যখন দেখি তারা এই ধরণের পেইজ লাইক করে তাদের সমর্থন প্রকাশ করেন। কিছু কিছু নারীরা (বলা বাহুল্য, তারা তথাকথিত ভদ্র ও ধার্মিক নারী) তো আরো ভয়াবহ কারণ তারা একই সাথে দ্বিমুখীতা পোষণ করেন আগেরটির মত পেইজ লাইকের সাথে সাথে এই ধরনের বিপরীত পেইজও লাইক করার মাধ্যমে!

কোন ধর্ষিতার পোশাক আধুনিক এবং ধর্মবিরোধী হলেও তার সর্বনাশটা কি এতটা সহজেই কামনা করা যায়? মানুষ হিসেবে আমাদের মূল্যবোধ কি এতোটাই নীচে নেমে গেছে যে আমারই মা-বোন-সন্তানের সবথেকে খারাপ কিছু হোক এটা মন থেকে অনেক সহজেই আমরা চেয়ে ফেলি? একজন মানুষ হিসেবে কি আমাদের ধার্মিক-অধার্মিক-ভদ্র-পতিতা নারী নির্বিশেষে সবার ভালোটাই কামনা করা উচিত নয়?



বর্তমান পরিস্থিতিঃ

লেখাটা নেতিবাচকভাবে শুরু হলেও শেষটা ইতিবাচকভাবেই করতে চাই। প্রথম প্রথম বুকের মাঝে একটা কষ্ট বাসা বেধেছিলো যখন মনে হত যে আমাদের পাশে কেউ নেই। তবু কিছুটা স্বস্তি যে আমাদের অধিকাংশের প্রিয় প্রথম আলো গত ১৭ তারিখে 'চমৎকার প্রতিবেদন' ও 'সম্পাদকীয়' (প্রথম আলো তাদের আর্কাইভ সুবিধাটি এখন বন্ধ রেখেছে কোন একটা অজানা কারণে, তাই এখানে লিংক দুটি দিতে পারলাম না) প্রকাশ করেছে। এ আমাদের এক বড় পাওয়া! স্বপ্ন দেখি, আমরা এমন করে আরো ভালো ভালো কিছু খবর পাবো। পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে আসবে। স্বপ্ন দেখতে দোষ কি?







স্বপ্ন দেখি, আমরা এমন করে আরো ভালো ভালো কিছু খবর পাবো...


Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×