somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটা কোন ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। আপনারা চেপে যান...ভিকারুন্নেসা ট্রাজেডির টাইমলাইন...

২১ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



>>> ২৮শে মে আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার পাশে ‘এফ’ ব্লকে ৬ নম্বর রোডের ৩৫৯ নম্বর বাসায় একতলা ভবনের একটি কক্ষে ওই স্কুলের ১০ম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে হাত বেঁধে, মুখে ওড়না গুঁজে সম্ভ্রমহানি করে পরিমল। এবং প্রথমে মেয়েটির নগ্ন ভিডিও মোবাইলে ধারন করা হয়।

>>> ঐদিন ছাত্রী ব্যাপারটা তার পরিবারকে জানালে পরিবার সেটা জানায় বেইলি রোডের মুল ক্যাম্পাসে হোসনে আরাকে। ছাত্রী ও তার অভিভাবকদের ডেকে তিনি তাদের বলেন, এটা কোন ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। আপনারা চেপে যান। অধ্যক্ষ আরো বলেন, কিছু শিক্ষক এটা নিয়ে ইন্ধন দিচ্ছেন। আপনারা বরং ওইসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বলেন।

>>> ১৭ই জুন কোচিং সেন্টারে পড়তে গেলে আবার পরিমল সে ছাত্রীটিকে নির্যাতন করে। সেদিন ওই ছাত্রী প্রতিবাদ করলে পরিমল তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

>>> এরপর অভিভাবকরা মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ জানানো হয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও অধ্যক্ষ হোসনে আরাকে জানান। কিন্তু কেউ পাত্তা দেননি।

>>> স্কুল এবং রাষ্ট্র যন্ত্র থেকে কোন সাড়া না মিলায় ১৯ জুন তারিখে ঘটনাটি ছাত্রী তার ক্লাসের মেয়েদের জানায়, মেয়েরা সবাই মিলে তা শাখা প্রধান লুতফুর রহমানকে জানায়। আশ্বাস মিলে কিন্তু কোন কাজ হয়নি সেখানেও। অধ্যক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা না নিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনা সবাইকে জানানোর কথা বললে পরিমল সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলেছে, ‘তোমরা আমার কলা করবা! ’

>>> ২৮শে জুন ছাত্রীর দাদা মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে ফোনে বিষয়টি অবহিত করেন স্কুলের গর্ভনিং বডি চেয়্যারম্যান রাশেদ খান মেনন এমপিকে। তারপর আবার ৫ই জুলাই আবার বিষয়টি জানালে রাশেদ খান মেনন গালভরা আশ্বাস ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেননি। উল্টো তাকে বলেন, লিখিত অভিযোগ সবাইকে দিয়েছেন কেন?

>>> তখন দ্বিতীয় দফায় ঘটনা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হন অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধান লুৎফুর রহমান।

>>> ২৮শে জুন বিকালে নির্যাতনকারী শিক্ষক পরিমল জয়ধর স্ত্রীকে নিয়ে লুৎফুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন।

>>> এরপর ব্যাপারটি গত ২ জুলাই প্রথম মিডিয়ায় চলে আসে আর এর পরই মূলত বিষয়টি সবার কাছে ছড়িয়ে পরে।

>>> মিডিয়ায় চলে আসায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন হোসনে আরা। যার কারনে ৩রা জুলাই ওই ছাত্রীকে ডেকে অধ্যক্ষ হোসনে আরা ‘চরিত্রহীন’ বলে গালিগালাজ করেন। তার অভিভাবকদের সামনেই বলেন, ১৮ হাজার ছাত্রীর মধ্যে একজন চরিত্রহীন হলে তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেবো।

>>> ৪ঠা জুলাই হোসনে আরা প্রতিষ্ঠানটির বেইলী রোডে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও তিনি পরিমলের পক্ষে সাফাই গান।

>>> স্কুল কর্তপক্ষ এবং গভনিং বডি ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না করায় গত ৫ জুলাই ছাত্রীর বাবা মাহমুদুল হক বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় পরিমল জয়ধর, হোসনে আরা বেগম ও লুৎফুর রহমানকে আসামি করে মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়।

>>> এরপর আভিভাবক-ছাত্রীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,ব্লগ আর টুইটারে ব্যপক প্রতিক্রিয়ার মুখে ৬ জুলাই কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় আলোচিত নরপশু পরিমলকে। তাকে রিমান্ডে নেয়া হলে সে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেই। কিন্তু মামলার অন্য আসামীরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাহিরে। স্কুল কর্তপক্ষ লোক দেখানো কাজ হিসেবে স্কুল থেকে পরিমলকে বহিষ্কার করে।

>>>> যখন এই অবস্থা পরিবর্তনে কেউই এগিয়ে আসছিলেন না তখন বাধ্য হয়েই ৯ জুলাই রোজ শনিবার প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা নেমে আসে রাস্তায়। আর এর আগে বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে অভিভাবকরা করেন প্রতিবাদ সমাবেশ। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। স্কুলের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও মৌন মিছিল করেন মেয়েদের দাবির প্রতি একাত্নতা জানিয়ে।


>>> এরপর পরিমলকে শুরু থেকে প্রশ্রয় দানকারী হোসনে আরার অপসারণ এবং বিচার দাবীতে ছাত্রীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঘটনা যখন দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছিল তখন স্কুলের মান মর্যাদার স্বার্থে গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য ১৩ জুলাই বয়োজ্যেষ্ঠ, নীতিবান এবং জনপ্রিয় শিক্ষক আম্বিয়া খাতুনকে অধ্যক্ষ্য হিসেবে নিয়োগ দেন। আর ঠিক তখনই সরকারের টনক নড়ে। এরপর মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীরও টনক নড়ল এবং তিনি এই নিয়োগ অবৈধ বলে ঘোষণা করলেন!! এত দিন এ নিয়ে শিক্ষাবোডের্রও কোন তৎপরতাই ছিল না। অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের অপসারণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর হঠাৎ বোর্ডের ইউটার্ন।

>>> ১৪ জুলাই সরকার স্কুলের ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদ বাতিল বাতিল করে এবং আম্বিয়া খাতুনের স্থলে মঞ্জুয়ারা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ্য হিসেবে নিয়োগ দেয়।

>>> পুরো ঘটনায় দেশের সুশীল সমাজ এবং তাদের মুখপাত্র মিডিয়ার ভুমিকা ছিল খুবই রহস্যজনক। তবে বেলা শেষে তাদের অনেকের হুশ ফিরে যা ছিল খুবই হতাশাজনক।

বর্তমানে পরিমলে এবং তার দোসরদের বিচার দাবীতে বিভিন্ন সংগঠন এবং দেশবাসি প্রচণ্ড সোচ্চার হয়ে উঠেচেন। তাই অবিলম্বে পরিমলের বিচার করে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করা হোক এবং তাদের মনে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হোক যে পরিমল যতই প্রভাবশালী হোকনা কেন তার উপযুক্ত বিচার করা হয়েছে।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:৪৫
২৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×