somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ "লাল ঘুড়ি ( The red kites ) "

২১ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রাফিক জ্যাম। রেলক্রসিং চলছে। লাল সাদায় মোড়ানো একটা পিলার দিয়ে পথ অবরোধ করা। এইতো ট্রেনটা এসে পড়লো। পাশে মোটরবাইকে একজন অফিস ফেরত ভদ্রলোক অধৈর্যের মত উঁকি দিচ্ছেন কখন ট্রেন যায় বলে। রিকশায় বসা তরুন তরুনীর ঝুটি মানিয়েছে বেশ। ওদের দেখে মনে হচ্ছে দুজনের মাঝে মান অভিমানের পালা চলছে। ফুটপাতের ছোট ছোট টং দোকানগুলো জমজমাট। পড়ন্ত বিকেল। মহাখালী ফ্লাইওভারের ছায়া পড়েছে কালো পিচে। একটা শব্দ আমার কানে এসেছে। নির্ঘাত কোন রিকশা চালক আমার গাড়িতে স্ক্র্যাচ করেছে। মাঝে মাঝে এই রিকশা চালকদের উপরে জেদ চাপে খুব। এখন অনেক কিছুই সহজে মেনে নেই। তিন বছর আগে একজন মনের মাঝে স্ক্র্যাচ করে চলে গেছে। তাকে নিঃস্বার্থ ও নিঃশর্ত ক্ষমা দিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে নিজেকে অনেক বেশি উদার মনে হয়। কিন্তু আমি উদার নই। অভিনয় করে যাই উদারতার। অবাক হই আমার অভিনয় গুণে। লাল সাদা পিলারটি উপরে উঠে যাচ্ছে। পাশের মোটরবাইক চালক স্টারটার চাপছেন। এক... দুই... স্টার্ট।


বারিধারার এই কাশ বন আমার ভীষন প্রিয়। কাশবনের মাঝে দিয়ে চলে গেছে বড় একটি পিচঢালা পথ। প্রায়শই মাঝামাঝি যেয়ে গাড়ি থামিয়ে একাকী বসে থাকা হয়। কখনো ব্যাকডালার উপরে বসে থাকা আবার কখনো পথিমধ্যে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা। এফ এম রেডিও অন , সময় কাটানোর ভালো একটা ওয়ে। বিকেলের প্রগ্রাম আর জে জেনিফার ভালোই জমিয়ে রাখে,


" হ্যাল্লো লিসেনার্স, দিস ইজ আর জে জেনিফার, এন্ড ইউর লিসেনিং..... এখন প্লে করবো গান, আর তোমাদের জন্য থাকছে রেডিও একটিভের গান স্বপ্ন কথা, সো এনজয় ।"

" যদি কখনো রোদ হাসে, তোমার আকাশে
যদি কখনো বৃষ্টি ভেজায়, তোমার চুল....."


জনমানবশূন্য এই পথে আমার কিছু সংঙ্গী আছে। লাইটার, সিগারেট আর কে এফ সি-র বার্গার।


কিছুদিন হলো বাবা মা বেশ জাকিয়ে ধরেছেন বিয়ের জন্য। পাত্রীও তাদের পছন্দ করা। আরো আঠারো বছর আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছেন। আমারই কাজিন হৃদি। সরল একটা মুখ। দেখলে লজ্জায় মুখ লুকোয়। চোখে চোখ রাখতে দেখিনি কখনো। ভয়ে নাকি লজ্জায় সেটা জানি না। ইদানিং বেশ কেয়ার করে আমাকে। মেয়েটার ছেলেমানুষি দেখলে খুব করে হাসি পায়। অনেক কিছুই ওর পরিসীমার বাইরে। তারপরেও আমাকে সেই ব্যাসার্ধে বেধেঁ নিতে চায়।


সূর্য পশ্চিমে হেলান দিয়ে মেঘের গায়ে রক্তিম আল্পনার সৃষ্টি করেছে। ঝিঝি পোকারা ইতমধ্যে হাক ডাক শুরু করেছে। মৃদু বাতাস ঢেউ খেলছে সারিবদ্ধ শুভ্র কাশফুলের উপরে।কবুতরের দল নীড়ে ফিরছে। উত্তর বাড্ডার কোন এক ছাদ থেকে একটি ঘুড়ি সুতা ছিঁড়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিনও একটি লাল ঘুড়ি পাশে দাঁড়িয়েছিল, রিচি যেদিন শেষ বারের মত চলে গিয়েছিল,


তুমি আমার সাথে আর কখনো যোগাযোগ করোনা, আমি আর তোমাকে চাইনা।

আমার অপরাধ কি রিচি? আর হঠাৎ তুমি এমন করছো কেন?

অপরাধ আমার, আমি তোমাকে বিলিভ করেছি।

তোমার বিশ্বাস নষ্ট হওয়ার মত কি করলাম আবার?

দেখো রিক, সিমির সাথে তোমার যে রিলেশন আছে সেটাতো তুমি আমাকে কখনো জানাও নি ! ওর সাথে তুমি ঘুরে বেড়াও আর আমি সেদিন ফোন করলাম তুমি রিসিভ করলে না। খুব ভালো। সুখি হও তোমরা। আমি সরে যাচ্ছি তোমার পথ থেকে।

পাগলের মত কথা বলছো কেন? সিমি আমার ভালো ফ্রেন্ড, আর তুমি সেটা ভালো করেই জানো। আর সেদিন সিমির মা হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওদের ফ্যামিলিতে ও আর ওর ছোট ভাই ছারা কেউ নেই। তাই বন্ধুত্বের প্রয়োজনেই হাত বাড়াতে হয়েছে।

বন্ধুত্বের হাত না অন্য কিছু সেটা আমি জানি। এর আগেও অনেকে সিমিকে নিয়ে আমাকে সাবধান করেছিল। ভুল করেছি তোমাকে বিলিভ করে। আমাকে ভুলে যাও। আমি মুক্তি চাই তোমার কাছ থেকে।


সেদিন চলে যাওয়া দেখেছি। কেউ মুক্তি চাইলে তাকে মুক্তি দেয়াটাই শ্রেয়। অন্যথায় বিদ্রোহ অনাকাঙ্খিত নয়। স্মতিগুলো চোখের সরু নালা বেয়ে কানের পাশের চুল ভিজিয়েছে প্রতি রাতে। দিনের পর দিন বসে থাকা এই কাশ বনে। সেই অভ্যেসটা আজও বদলায়নি। কাজের শেষে মাঝে মাঝে এখনো আসা হয় তাই। খালি পায়ে এই পথে রয়ে যাওয়া স্মৃতি মাড়িয়ে যাই। কখনো আনমনে একটি কাশফুল ছিঁড়ে খুঁজে ফিরি। অবশেষে কাশফুলটি যত্ন করে পথের পাশেই রেখে দেই।

শোন, যতদিন ভালো কিছু করতে না পারছি ততদিন তোমাকে কাশফুল দিতে হবে, কোন অবজেকশন আছে তোমার?

অবজেকশন থাকবে কেন? ভালোবেসে দেয়া নীলপদ্ম আর কাশফুল দুটোই এক। এই দুইয়েই ভালোবাসা মিশে থাকে।

নীল পদ্ম দেখতে চমৎকার। অপ্রাপ্য বটে। তাকে পাওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে।

আমার কাশফুল ভালো লাগে। আর কাশফুলকেই আমি অনেক বেশি ভালবাসি। কাশফুলের নরম স্পর্শ কি নীলপদ্ম দিতে পারবে?

ধীরে ধীরে কাশফুল বাতাসে হারিয়ে যায়।

দেখো রিক, এসব আতেল মার্কা কথা আর কখনো বলবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা তুমি জান। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি। আর কখনো যদি এসব কথা বলে আমার মন খারাপ করিয়ে দাও তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে আর কথা বলবো না। আমি তোমার পাশেই থাকতে চাই সারাজীবন। তোমার হয়ে।


কাশফুল এখনো বাতাসে হারায়নি। হারাবে না। কিন্তু যার হাতে নিজেকে সপে দিয়েছিল সে হারিয়ে গেছে। সেদিন দুধারের এই কাশবনের পথ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় একটি বারও ফিরে তাকায়নি। ফিরে তাকাবেই কেন আবার? নীলপদ্ম যদি হাতে আসে তাহলে সস্তা কাশফুলের কি কোন অস্তিত্ব কেউ ধরে রাখতে চায়?


ভাইয়া, আপনি তো জানেন রিচি কেমন অভিমানী মেয়ে। আপনার সাথে রাগ করে ও ফ্যামিলি থেকে আসা প্রোপোজাল এক্সেপ্ট করেছে। আর ছেলেও অনেক ভালো ফ্যামিলি থেকে। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর প্রধান।

আমার কথা কি কিছু বলেছে? কেন আমার সাথে এমন করলো? আমি শুধু আমার ভুল জানতে চাই।

ফ্যামিলি থেকে অনেক দিন ধরেই চাপ আসছিল। আর আপনার সাথে সিমির সখ্যতা ও সহজ করে নিতে পারেনি। সেজন্যই হয়ত এমন করেছে। আর.....

আর?

আপনার এখনো স্ট্যাব্লিশ হতে সময় লাগবে। ওর ফ্যামিলিও এতটা সময় ওকে দেবে না। আর ও ফ্যামিলির বাইরে যাওয়ার মত মেয়ে না। সেজন্যই সবকিছু মেনে নিয়েছে। আর সিমির ব্যাপারটা ছিল শুধুই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটা বাহানা মাত্র। কাল ওর বিয়ে। আমি আসলে এই কথাগুলো বলতে চাইনি। আপনাকে যে বলেছি সেইটা প্লিজ কাউকে বলবেন না।


সবকিছুই বুঝতে পেরেছিলাম। নিজের প্রতি ধিক্কার ছিল। চাপা আর্তনাদ আর ক্ষোভে নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। নিজের একটা ব্যাবসা হলো। স্বল্প সময়ে প্রসার ঘটিয়ে এখন খুব ভালোই আছি। অন্তত এই অবস্থানে মিথ্যে ভণিতা দেখিয়ে কেউ ছেড়ে যায় না। এতকিছুর পরেও সবকিছু এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিজেকে স্বান্তনা দিয়েছি, যে চলে যাবার সেতো যাবেই। কিন্তু মানুষের মাঝে মন বলে একটি অপার্থিব অনুধাবন আছে।


রাত অনেক হয়েছে। ঘুড়িটি এখনো আমার হাতে। লাল সেই বেওয়ারিশ ঘুড়ি। পুরনো স্মৃতির এতটাই গহীনে প্রবেশ করেছিলাম যে কখন রাত হয়েছে বুঝতে পারিনি। কিছু কিছু বর্ণের ঘুড়ি কিছু কিছু মানুষের এত আপন হয় জানতাম না। চাঁদের আলো আজ ভালোই লাগছে। আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে চাপা কিছু বুক থেকে নেমেছে। চলে যাচ্ছি, ঘুড়ির উপরে চার লাইন কবিতা আর একটি কাশফুল চাপা দিয়ে, পীচ ঢালা পথে স্মৃতিগুলো ঢেলে দেয়ার বৃথা চেষ্টা করে।


"এই পথে আর ফিরিবনা আমি,
সম্ভাবনার মৃত্যুদিবশে নিমন্ত্রন
ভালো থেকো স্মৃতিপথ,
ভালো থেকো ভালবেসে।"

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:২১
৮৯টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×