বেচে আছি... কিন্তু একে কি বেচে থাকা বলে? মৌলিক চাহিদা তো দূরে থাকুক বেচে থাকা নিয়েই যেখানে মানুষ হিমসিম খায় সেখানে আমার বেচে থাকাটা আসলেই অবাক করা বিষয়। মাঝে মাঝে নিজের মনে প্রশ্ন জাগে আমি কতো ভাগ্যবান, এখনো এই দেশে বেচে আছি। রাজনৈতিক কোন বড় ভাইয়ের কোপানলে পড়তে হয়নি। ঢাকার রাস্তায় কোন দূর্ঘটনায় পড়তে হয়নি। এখনো জিনিসপত্র কিনি খাবার মতো সামর্থ্য আছে (কয় দিন থাকবে জানি না !!!)। মাঝে মাঝে দাম দিয়ে নামি দোকানে খেতে পারার সামর্থ্য আছে। এখনো মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার মত টাকা আছে। এই কথা গুলি বলার মতো মানসিক শক্তি আছে। কিন্তু যখনি বাচ্চা ওই মেয়েটার মুখটা চোখে ভেসে উঠছে তখন আর নিজের মাঝে থাকতে পারছিনা। আমার আপন কোন বোন নেই। সবচেয়ে কাছের বোনটি হচ্ছে আমার কাজিন - খালাতো বোন। সারা জীবন নিজের ছোট বোনের মতোই দেখেছি। ওর জন্য ভাই হিসেবে হয়তো খুব বেশি কিছু করতে পারিনি, কিন্তু ওর ছোট দুই একটা আবদার অনুরোধ তো রেখেছি। ক্লাস + টিউশনি থেকে বাসায় ফিরেছি রাত ৮টায়। তখন ওর ফোন , ভাইয়া আজ তো ছোট ভাইয়ার জন্মদিন ছিলো , আমরা একটা সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করেছি , আপনি একটু আসেন না। ঢাকার জ্যাম + গরম সহ্য করে গুলিস্তান থেকে টঙ্গি আমি ঠিকই গিয়েছি। আমাকে দেখে বোনটা আমার যে কেমন খুশি হয়েছিলো তা ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। ওর S.S.C রেজাল্ট পেয়ে মনে হচ্ছিলো আমিই যেনো নতুন করে পাশ করলাম। ওর বন্ধু বান্ধবীদের কাছে আমাকে গর্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, আমার ভাইয়া ... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
একটা ছেলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয় তাঁর মা আর বোন। বোন তাঁর ভাইয়ের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানে। বাবার হাতে পিটুনি যেমন বোনই বেশি খাওয়ায় তেমনি বাচায়ও সবচেয়ে বেশি।
টিভিতে যখন মেয়েটাও কান্না দেখছি তখন আমি নিজেও কাঁদছি। মেয়েটা শুধু তাঁর ভাইকে না তাঁর একজন বন্ধুকেও হারালো। কিন্তু এর দায় কার????
দায় আমাদের সবার।
আমরা পারিনি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে মানুষকে নিজের নিরাপত্তার জন্য আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে হয়।
আমরা পারিনি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য নিরাপরাধ মানুষকে অপরাধী করেনা।
আমরা পারিনি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানরা মানুষের বেচে থাকার যুদ্ধে সামিল হয়।
আমরা পারিনি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে শিক্ষকরা পান সর্বোচ্চ মর্যাদার আসন।
আমরা পেরেছি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে মানুষ চরম মাত্রায় আত্বকেন্দ্রিক। আমিই সব, আমি ছাড়া বাকিরা গোল্লায় যাক আমার কিছুই যায় আসেনা।
আমরা পেরেছি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে আদালতের রায়ের বিপক্ষেও কিছু বলা যাবেনা। তা হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
আমরা পেরেছি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে নিজেদের শাসন ব্যবস্থা নিয়েও কিছু বলা যাবেনা। বললে আমার ফাসিও হতে পারে।
আমরা পেরেছি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে কয়েক জন যুবকের একত্রে থাকাটাই অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি একটাই মেরে ফেলো। কিছু জিজ্ঞাসাও করা লাগবেনা। পুলিশ ?? সে তো তোমার পক্ষই নেবে। তার আর কোন উপায় আছে ??
আমরা পেরেছি এমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে মিডিয়া সত্যের পক্ষ না নিয়ে স্বার্থের পক্ষ নেয়। নিরীহ ছাত্রকে ডাকাত বানায়। সত্যের পথে থাকা ছাত্রীদের হুমকি দেয়।
অনেক হয়েছে, কান্না পাচ্ছে। প্রস্তুতি নিতে হবে। লেখাটা সরকার, মিডিয়া , পুলিশ, আদালতে চোখে পড়লে কোন অপরাধে গ্রেফতার হতে হয় তার ঠিক নেই। প্রস্তুত হয়ে থাকাটাই ভালো।
পরিশেষে ওই ছোট্ট বোনটিকে বলতে চাই , “আপু কেঁদো না। তোমার একজন ভাই হয়তো আজ মারা গেছে, কিন্তু সারা দেশে তোমার আরো হাজার হাজার ভাই আছে। তারা তোমার ভাইয়ের ইনসাফের জন্য লড়ে যাবে।”
(লেখাটি ফেসবুকে নোট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।)
ধন্যবাদ,
জ়িএম. আকতার হোসেন বাপ্পি
[email protected]