somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুহার জন্য মানব বন্ধন: প্রিপারেটরি কাজের বর্ণনা, যারা ভবিষ্যতে করতে চান তাদের সুবিধার জন্য

২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুলাই ১৯, মঙ্গলবার বেলা ১১ টা থেকে মানব বন্ধন শুরু হবার কথা। আগের রাতে একজন বলল পুলিশকে জানিয়ে রাখলে ভাল হয়। সকাল ৮.৩০ এ রমনা থানায় গিয়ে শুনি, প্রেসক্লাবের বিপরীত দিক পর্যন্ত রমনা থানার অন্তর্ভূক্ত; প্রেসক্লাব পড়েছে শাহবাগ থানায়। ছুটলাম শাহবাগ থানায়। দুজন অফিসার সিগারেট খাচ্ছিলেন বারান্দার কোণায় দাঁড়িয়ে; জানালেন থানায় এসব না জানালেও চলে। পরামর্শ দিলেন স্পটে যে অফিসার আছে তাকে একটু ইনফর্ম করে রাখতে।

শাহবাগ থেকে নীলক্ষেত গেলাম লিফলেট গুলো নিতে; জহিরুল (নুহার বাবা) একজনকে পাঠিয়েছে ব্যানার কালেক্ট করতে; ও নিজে হ্যান্ড মাইক আনবে; আমাদের আর্কিটেক্ট বন্ধু নিরু আর হাসিব প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসছে। প্রেস ক্লাবের ভেতরে গাড়ি ঢুকতে দেবেনা বলে চতুরতার আশ্রয় নিতে হল; ব্যাকডালায় যে লিফলেট আর আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র রয়েছে। প্রেসক্লাবের পেছনের গেটে গাড়ি আটকালে পর বললাম সামনেই যে এটিএম বুথ আছে ওখানে যাচ্ছি। গাড়ি ভেতরে চলে গেল, আমি এটিএম বুথের ভেতরে চলে গেলাম; দেড় মিনিট পর সিরিয়াস ভঙ্গি করে বেরিয়েও আসলাম।

এরপর পুলিশ অফিসারের খোঁজ নেয়ার পালা। এস আই রিয়াদকে পাওয়া গেল বাসস্ট্যান্ডের পাশে আরো কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সাথে কাঠের পাটাতনের ওপর বসে পা দোলাতে। সুবোধ বালকের মত হাত বাড়িয়ে দিলাম, নিজের পরিচয় দিলাম আর এক কপি লিফলেট বাড়িয়ে দিয়ে বললাম- 'আগে এটা পড়েন; বাকি কথা পরে বলছি।' মাথা তুলে তাকাতেই বললাম- 'আমরা অরাজনৈতিক একটা ইস্যু নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। সম্পূর্ণ সামাজিক একটা আন্দোলন, সমাজের একজন বাসিন্দা হিসেবে আপনার আমার সবার জন্যই এর আবেদন থাকার কথা।' 'থানায় জানিয়েছেন?' এই প্রশ্ন করার জন্য মুখ খুলতেই নিজে থেকেই বললাম-'শাহবাগ থানায় গিয়েছিলাম, উনারা আপনার নাম বলে দিয়েছন আর আপনার সাথে সরাসরি আলাপ করতে বলেছেন। নেমপ্লেটে নাম দেখেই আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি।'

এত কথা লিখলাম, তার কারণ হল, আমার কাছে মনে হয়েছে, একটা স্মার্ট এ্যাপ্রোচ নিয়ে; পুলিশ কি কি বলতে পারে বা জিজ্ঞেস করতে পারে তা মাথায় রেখে আগেই যদি সেগুলো থ্রো করা যায়, তাহলে ওরা (যে কেউ) কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। আক্রমণই সবচেয়ে ভাল প্রতিরক্ষা। এস আই রিয়াদ অমায়ীক ভঙ্গিতে কতক্ষণ থাকব জানতে চাইলেন আর বললেন, 'কোন সমস্যা হবেনা, যতক্ষণ খুশি থাকেন, নো প্রবলেম'।

এগারটায় মাত্র ৪/৫ জন পৌঁছাল, কিছুক্ষণ পরেই দেখি, মৎস্যজীবি সমিতি তাদের একটা দাবি নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঠিক এই ভয়টাই করছিলাম, অন্য কোন গ্রুপ এসে জায়গাটা দখল করে না ফেলে; আর তাই হল। নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে যে আমাদের তো লোকজন বলতে গেলে আসেইনি, আস্তে ধীরে শুরু করা যাবে। গেটের অন্যদিকের জায়গাটার দিকে লোলুপ নয়নে তাকাচ্ছি এই ভেবে যে আমাদের ছেলেপেলেরা চলে আসলে পর ওখানে অন্তত দাঁড়ান যাবে। হায়! বিধাতা মনে হয় মুচকি হাসছিলেন।

আমাদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দিয়ে আচমকা বিদ্যুতের মত ঠিক ওই জায়গা বরাবর একটা মাইক্রোবাস হার্ড ব্রেক করে থামল। পিপিলিকার সুসংগঠিত সারির মত সুরসুর করে নেমে এলেন নারী অধিকার ফোরাম (বা এই জাতীয় কোন নারী অধিকার সংগঠন)। এক ঝটকায় বাতাসে মেলে সামনে জড়িয়ে চোখের নিমিষে দাড়িয়ে পড়লেন কয়েকজন ব্যানার হাতে করে। মাইক্রোবাসের পেছনের সিট থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে দৃপ্ত পায়ে পেছনে এসে দাঁড়ালেন অন্যান্য কর্মীবৃন্দ। এতক্ষণে নজরে এলো, দশ মিনিট আগে ঠিক ওই জায়গার পেছনেই একটা ভ্যানে করে মাইকম্যান এসে মাইক পরীক্ষা করছিল। এক মিনিটও লাগলনা পুরো ঘটনা ঘটে বক্তব্য শুরু হয়ে যেতে। অবশ্য তার চেয়েও কম সময় লাগল সাংবাদিকদের মৎস্যজীবি সমিতির মানব বন্ধন থেকে তীরবেগে নারী অধিকারের মানব বন্ধন কভার করতে ছুটে আসতে।

ঈশ্বরকেও মনে হল নারীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। মৎস্যজীবি সম্প্রদায় যখন অসহায় দৃষ্টিতে নারী অধিকারের মানববন্ধন দেখছে; দেখতে দেখতে বক্তব্য এবং শ্লোগান দেয়াও শেষ হল পুরো প্রফেশনাল ক্ষীপ্রতায়। আর তা শেষ হতে না হতেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। নারী অধিকার ফোরাম যেমন দ্রুততায় মাইক্রোবাস থেকে নেমেছিলেন, তেমন দ্রুততায়ই আবার মাইক্রোবাসে করে চলে গেলেন। সাংবাদিকরাও ক্যামেরা বাঁচাতে বাঁচাতে ছুটলেন প্রেসক্লাবের ভেতরে। মৎস্যজীবি ভাইয়েরা কিছুক্ষণ বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে মাছের মতই ভিজে গিয়ে শেষে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। নুহার জন্য বিচার চাইতে আসা আমরা ৪/৫ জন উৎকর্ণ মনোযোগ দিয়ে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলাম আমাদের কারো ছাতা আর কারো রেইনকোটের আরামদায়ক আশ্রয়ে।

মানববন্ধন শেষ পর্যন্ত দারুণভাবে সফল হয়েছিল। কিভাবে, সেই বিত্তান্ত জানতে হলে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। এই লেখাটা অপরিকল্পিতভাবে লম্বা হয়ে গেল; এর পরের পোস্টে জানাচ্ছি।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×