somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতি অথবা বউ ছাড়াই যেভাবে বাবা হয়েছিলাম

২০ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশি দিন আগের কথা না। ছয় মাস আগের ঘটনা। সেদিনই প্রথম বাবা হয়েছিলাম। তবে প্রথম বাবা হওয়াটা আমার জন্য মোটেও আনন্দের ছিলো না। বরং ওটা ছিলো অনেক কষ্টের। অনেক হৃদয় বিদারক।



যাই হোক... ঘটনায় চলে যাই।

কলেজের ইয়ার এন্ডিং প্রোগ্রাম। বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে রিহার্সেল শুরু হলো। কেউ গান, কেউ নাচ, কেউ কবিতা প্র্যাকটিস করতে শুরু করলো। আমাকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়া হলো নাটকে। নাটকটা অদ্ভুত। নাম হলো “আকাশ জুড়ে কাউয়ার দল”।

অভিনয় জিনিষটা আমি জীবনেও করিনি। না করলে কি হবে! আমার আবার কোন কিছুতে উৎসাহের কমতি নেই। যার ফলে নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েই রাজি হয়ে গেলাম। আমার উৎসাহ দ্বিগুন বেড়ে গেলো যখন শুনলাম আমি হতে যাচ্ছি নায়ক। আমার বিপরীতে থাকবে সুন্দরী নায়িকা। আমাকে আর পায় কে! আমি আনন্দে বুকডন দেয়ার মুডে চলে গেলাম।



নিদৃষ্ট দিনে রিহার্সেল শুরু হলো। প্রথম দৃশ্যের প্র্যাকটিসের জন্য লাফ দিয়ে মঞ্চে উঠলাম। আরেকটা লাফ দিয়ে চলে গেলাম নায়িকার কাছে। আমার লাফ দিয়ে উঠা দেখে নায়িকাও লাফ দিলো। লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেলো।

নায়িকা তখন কপাল কুচকে আমার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ হাউকাউ শুরু করলো- এই নায়কের সাথে আমি কাজ করবো না। আমি কতো সুন্দর একটা মেয়ে। এই নায়কের সাথে নাচানাচি করবো না।

নায়িকার চোখে মুখে তখন বিরক্তি। বার বার বলছেন “উফ! অসহ্য! রাবিশ!”



নায়িকার এই অবস্থা থেকে পরিচালক পড়ে গেলো বিরাট ঝামেলায়। সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে আমার সাথে কথা বলে আমাকে দিলো ভিলেনের পার্ট।

আমি এইবারও আনন্দে লাফ দিলাম। কারণ ভিলেনের সুন্দরী একটা গার্লফ্রেন্ড থাকবে। তাছাড়া নাটকের একটা দৃশ্যে নায়িকাকে শায়েস্থা করারও চান্স আছে। মুহুহাহাহাহা।



ভিলেনের পার্টে রিহার্সেল করার জন্য মঞ্চে উঠলাম। প্রথম দৃশ্যে আমার সাথে নায়কের ফাইট। আমি ব্যাপক মুড নিয়ে ফাইট দিতে গেলাম।

কিন্তু পরিচালকের ইচ্ছা অন্যরকম। তার ইচ্ছা হলো নায়ক আমাকে কিলিয়ে ভর্তা বানাবে। হাড় বজ্জাত নায়ক পরিচালকের কথা মানতে গিয়ে আমাকে নাটকের মধ্যে সত্যি সত্যি কিলিয়ে ভার্তা বানানো শুরু করলো। এলোপাথাড়ি ঘুষি দিয়ে প্রায় কাবু করে ফেললো আমাকে। আমি যতোই চিল্লাই “বাবা নায়ক। তুই মাইরের অভিনয় কর। তোরে মারতে বলছে কে!” নায়ক আমার কথার কোন পাত্তাই দিলো না।

নাটকের রিহার্সেলেই এতো মাইর খাওয়ার পর আমি সঙ্গত কারনে আর মূল নাটকে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করলাম না।



এবার আমাকে দেয়া হলো নায়িকার বাবার চরিত্র। আমি এবারও হালকা একটা লাফ দিলাম। কারণ মায়ের চরিত্রে আছে সুন্দরী এক সহপাঠি। নাটকের বিভিন্ন যায়গায় “ওগো! অমুকের মা” টাইপের ডায়লগ আছে। তাছাড়া নায়িকার মা আমার হাত ধরছে এমন দৃশ্যও আছে।



নায়কের বাবার রোল কম। তাই আমাকে বলা হলো বাসায় প্র্যাকটিস করতে। নাটকের দিনই আমি মঞ্চে উঠবো। আমি বাসায় জোরেসোরে প্র্যাকটিস চালিয়ে গেলাম। “ওগো!” “এদিকে এসো” “মাথাটা একটু টিপে দাও” টাইপের অংশগুলো একটু বাড়তি সতর্কতার সাথে প্র্যাকটিস করলাম।



অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষন। মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো। এক পর্যায়ে নাটকের সময় আসলো।

এমন সময় আসলো এক ভয়ংকর খবর। নায়িকার মায়ের চরিত্রে যার অভিনয় করবে সে অনুপস্থিত। স্ক্রিপ্ট রাইটার দ্রুত নাটকে পরিবর্তন আনলেন। নায়কের কোন মা থাকবে না। থাকবে কেবল বাবা। অর্থাৎ বিধবা বাবা।

কি আর করা! আমি এক বুক বেদনা নিয়ে সেদিন বউহীন স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।
৪৯টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×