somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়তু বিপ্লবী হেনা’দি: শেখ রফিক

২০ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয়তু বিপ্লবী হেনা’দি। লাল সালাম হেনা’দি। ‘বিপ্লবীদের কথা’র পক্ষ থেকে তোমার স্মৃতি ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
হেনা দাস। একটি নাম। একজন মানুষের নাম। আর মানুষ কখনো মরে না। মানুষ মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মাধ্যমে। চিরদিন বেঁচে থাকে। যেমন বেঁচে আছেন সক্রেটিস, হ্যানিমান, লালন, কার্ল মার্কস, লেনিন, মাও সে তুং, পাবলো নেরুদা, চে গুয়েভারা, আলেন্দ্র. হো চি মিন, কিম ইল সুন, হুমায়ুন আজাদসহ লক্ষ মানুষ। তেমনি হেনা দাসও বেঁচে থাকবেন। থাকবেন আমাদের আদর্শ-চেতনায়। মানুষ মানুষের মধ্যেই বসবাস করে। মানুষ ছাড়া মানুষের আর যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই।
শুধু হেনা দাস বললে নামটি অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়। এই নামটির পূর্বে বিপ্লবী শব্দটি একান্তভাবে অপরিহার্য। তাতে বুর্জোয়া থেকে শুরু করে সুবিধাবাদী, অসুবিধাবাদী ও নানান রঙের বামপন্থীরা কোনো আপত্তি তুলবেন না, একথা আমি জানি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, যে মানুষের মধ্যে হেনা দাস-রা বেঁচে থাকবেন, সেই মানুষ কি আমরা হতে পেরেছি বা হওয়ার চেষ্টা করছি?
মানুষ বা বিপ্লবী কখনো মরে না। তার যৌক্তিক কারণ হলো-মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কৃতকর্ম ও সৃস্টিশীলতার মাধ্যমে। কোনো সৃষ্টি ধবংস হয় না। সৃষ্টি যুক্ত হয় নতুন সৃষ্টির সাথে। এভাবে সকল সৃষ্টি সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করে। যার কারণে সভ্যতার চাকা সবসময় সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অনেকে মানুষ আর বিপ্লবী এই শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্য টানেন। কেউ কেউ এই শব্দ দুটিকে ভিন্ন ভিন্ন দুটি বিষয় বলেন। আবার কেউ কেউ সমার্থক বলেও মত দেন। তবে সরদার ফজলুল করিমের মতে--‘একজন মানুষ সবসময়ই কমিউনিস্ট এবং বিপ্লবী’। কারণ কমিউনিস্ট বা বিপ্লবী সেই হতে পারে, যে মানুষ হয়ে উঠে বা মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকে। সে মানুষ কখনো কোনো অসঙ্গতি, অসাম্য, শোষণ-বৈষম্য মেনে নিতে পারে না। সে প্রতিনিয়ত লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের সমাজ, মানুষের পৃথিবী গড়ার তোলার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম করে যায়।
হেনা দাস যে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন, তারা কোথায়? অনেকে আমাকে হতাশাবাদী বলার সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়ে ফেলেছেন। বলুন, আপত্তি নেই। কারণ অমানুষতো আর বলেন নি। আমার ভয় এইখানেই। কেননা আমি মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি এবং চেষ্টাও করছিনা। তারপরও আপনারা আমাকে মানুষ বলছেন। লোভ, ভোগ, লাভ ও প্রকাশইজম আমার অস্থি-মজ্জায়। আমার মধ্যে আমি(মানুষ) নেই। শুধু আছে ভোগ আর সুবিধাবাদ। ব্যাখ্যা দেবেন হয়তো এর উর্ধ্বে কেউ নয়। একথা আমি মানি না। কেননা হেনা দি এর উর্ধ্বে ছিলেন। কারণ তিনি মানুষ ছিলেন। সরদার ফজলুল করিম, কমরেড জসীম উদ্দিন মণ্ডলসহ অনেক মানুষ এখনোও বেঁচে আছেন। মানুষ হয়ে বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন মানুষের মাঝে চিরদিন। সাম্য ভালবাসার পৃথিবী গড়ার জন্য, মানুষের পৃথিবী গড়ার জন্য।
বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু সৈনিক, শিক্ষক ও নারী আন্দোলনের নেতা এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য ছিলেন হেনা দাস। ৮৫ বছর জীবনের ৭২ বছরই হলো সংগ্রাময় জীবনের গৌরবোজ্জল ইতিহাস।
কমরেড হেনা দাস ১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট শহরের পুরান লেনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সতীশচন্দ্র দত্ত। তিনি একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন। মা মনোরমা দত্ত। তিনি ছিলেন চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের জমিদার জগত্চ ন্দ্র বিশ্বাসের বড়ো মেয়ে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হেনা দাস সর্ব কনিষ্ঠ।
মাত্র সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত হন। হেনা দাস শিশুশ্রেণী থেকে দশম পর্যন্ত সিলেট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৪২ সালে সিলেট মহিলা কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষায় ১ম বিভাগ অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালে সিলেট মহিলা কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বি.এড পাশ করেন। ১৯৬৬ সালে এম.এ পাশ করেন।
১৯৪৭ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ছাত্র ফেডারেশন থেকে শুরু করে সুরমা উপত্যকা গার্লস স্টুডেন্ট কমিটি, সুরমা উপত্যকা মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি, সিলেট জেলা গণনাট্য সঙ্ঘ, লেখক ও শিল্পী সংঘ, শিক্ষক সমিতি এবং মহিলা পরিষদে কাজ করেছেন তিনি।
১৯৪৮ সালে আত্নগোপন থাকা অবস্থায় তিনি বিয়ে করেন কমিউনিস্ট কৃষক নেতা রোহিনী দাসকে। ১৯৪৮-৫৯ সালের 'নানকার বিদ্রোহে' কমরেড হেনা দাস নানকার নারীদের সংগঠিত করেন। চা-বাগানের কুলি মেয়েদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সংগঠিত করেন ট্রেড ইউনিয়ন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় তিনি সিলেটের ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ভাষার দাবিতে ছাত্রদের মিছিল-মিটিং ও লিফলেট বিলিতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে এই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন। ১৯৫৮ এ হেনা দাস ঢাকায় এসে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং বহু শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে ত্রাণ কাজ চালান।
১৯৭৮ থেকে টানা ১৪ বছর তিনি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন ড. কুদরতি খোদা শিক্ষা কমিশনের অন্যতম সদস্য। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর তিনি পরিষদের নারায়নগঞ্জে জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নেন। স্বাধীনতার পর সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। কবি সুফিয়া কামাল মারা যাওয়ার পর ২০০০ সালে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৮৯ সালে তিনি শিক্ষকতা অবসর নিয়েছিলেন।
বিভিন্ন সংগঠন ও কমিউনিস্ট পার্টিতে কাজ করার জন্য তাঁকে সরকারে রক্তচক্ষুর মুখামুখি হতে হয়েছে। ১৯৭৯ সালে শিক্ষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাঁকে কারাবরণ যেতে হয়। কমিউনিস্ট পার্টি করার জন্য তাকে বার বার যেতে হয়েছে আত্মগোপনে। আত্মগোপনকালেও তিনি পার্টি গড়ে তোলার কাজ করতেন। নারীপুরুষ নির্বিশেষে গণমানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে আমৃত্যু ভূমিকা রেখেছেন কমরেড হেনা দাস। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন- এমন অনেক সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন এই লড়াকু নেত্রী।
ভাষা আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিলো অগ্রণী। তিনি ছিলেন মহিলা পরিষদের সভানেত্রী । নারী ও শিক্ষক আন্দোলনের তার ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি দেশের সকল মানুষের কথা ভাবতেন। লিখতেন শিক্ষা-সংস্কৃতি-রাজনীতি বিষয়ে। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কথা বলতেন।
তিনি ২০০৯ সালের ২০ জুলাই মারা যান।
http://www.biplobiderkotha.com
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×