somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটো স্মৃতিকথা...

২০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুইদিন আগে জেরীর পোস্টে মন্তব্য করার সময়ও মনে পড়েনি। আজ দাঁড়িপাল্লার পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়েই হঠাৎ মনে পড়লো স্কুল আর কলেজ জীবনের দুটো ঘটনা। সেগুলোই শেয়ার করছি,

ঘটনা ১:

আমাদের স্কুলে ম্যাথের এক সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, উনার মেয়েও একই স্কুলে পড়তো, আমাদের এক ব্যাচ কি দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, ঠিক মনে নেই। স্কুলে কেবল মাত্র দুই হুজুরের হাতেই বেত থাকতো, অন্য কোন স্যার-ম্যাডামরা আমাদের বেত দিয়ে মারতেন না। স্যারেরা সাধারণত: মারতেন না, কদাচিৎ হয়তো ডাস্টার দিয়ে বাহুতে এক ঘা দুই ঘা দিতেন। এক হুজুরী আপা ছিলেন মেয়েদের সামনের দিকে চুল কাটা দেখলেই (আমরা বলতাম বব কাটিং) চুল টেনে দিতেন এক থাপ্পড়। :| বেশির ভাগ শাস্তি ছিল সাধারণ দাঁড়িয়ে থাকা, বেন্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা, কখনও কান ধরে, কখনো কেবল এমনি। সবচেয়ে লজ্জাজনক শাস্তি ছিল ক্লাস ছুটির পরেও কিছুক্ষণ কান ধরে বেন্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকা, দরজা হাট করে খোলা থাকতো, অন্য ক্লাসের মেয়েরা যেন বারান্দায় বের হলেই দেখতে পায়। অথবা কান ধরে বারান্দাতেই দাঁড় করিয়ে রাখা, উদ্দেশ্য একই সহপাঠী ভিন্ন অন্যরা যেন দেখতে পায়। :( কারণ, বান্ধবীদের সামনে শাস্তি পেতে তেমন কেউ লজ্জা পেত না তো...:P সংশোধনও হতো না কেউ কেউ। কিন্তু ঐ অংক স্যারের শাস্তি ছিল অভিনব! ক্লাসে কোন মেয়ে অংক বাড়ির কাজ না আনলে উনি কখনো কখনো ডাস্টার দিয়ে বাহুতে দুই-তিন বাড়ি মারতেন, কখনো কখনো উনার হাত দিয়েই বাহুতে ধরে জোরে চাপ দিতেন। আবার চাপ কমিয়ে বাহুর মাংসপেশী নাড়াচাড়া করতেন। যেসব মেয়েরা এই শাস্তি পেত তারা অস্বস্তি বোধ করতো, কিন্তু অপরাধ যেহেতু আছে, পড়া রেডি করেনি, তাই আর উচ্চবাচ্য করতো না বা লজ্জা পেত।

কিন্তু একদিন ঘটনাটা ঘটলো এক রাগী আপুর সাথে। উনি আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, তখন মনে হয় ক্লাস টেনে। যথারীতি অংক না পারার কারণে উনার বাহুতে একই শাস্তি দিলেন। সেই আপু বাসায় গিয়েই উনার মায়ের কাছে বললেন, ঐ আন্টি ছিলেন আবার আওয়ামী লীগের নারীনেত্রী। পরদিন আপু আর আন্টি এসে লিখিত অভিযোগ জানালেন প্রধান শিক্ষিকার কাছে, আন্টি যা মুখে আসলো তাই বলেই বকাঝকা করলেন বড়আপার সামনে। বড়আপা স্যারকে ডেকে জিগ্যেস করলেন, এরপর নাইন-টেনের অন্যান্য মেয়েদের জিগ্যেস করে যখন নিশ্চিত হলেন এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই স্যারকে জিলা স্কুলে বদলির ব্যবস্থা করলেন।


ঘটনা ২:

নাহ, এটা কোন কুরুচিশীল কাজের ঘটনা নয়। কলেজে এক পদার্থবিজ্ঞানের ক্লাস নিতেন চারজন শিক্ষক বিভিন্ন চ্যাপ্টার ভাগ করে করে। অন্যান্য সাবজেক্টের বেলায়ও একই নিয়ম ছিল। ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়তাম পদার্থবিজ্ঞানের এক স্যার প্রথম দিন থেকেই ক্লাসে আসলেই কেবল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করার অংক করাতেন। আর তিনি যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে পাশ করেছিলেন সেই গল্প শোনাতেন। প্রথম এক সপ্তাহ তেমন গায়ে মাখিনি, ক্লাস সবে শুরু...ওমা! মাস চলে যায়, প্রতিদিন উনার একই কেচ্ছা-কাহিনী, একই অংক। অথচ এটা সিলেবাস বহির্ভূত ছিল। শখের বসে দুই তিন ক্লাস এমন করা যায়, কিন্তু নিত্য.../:)

এরই মাঝে একদিন ক্লাসে উনার গল্পের ফাঁকে এক ছেলে কেন জানি হেসে ফেলেছিল, কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি স্যার এসে ঠাস করে এক চড় মারলেন ঐ ছেলেকে। এবার আমরা সবাই ক্ষিপ্ত, কলেজে পড়ুয়া ছাত্রের গায়ে হাত তুললো! বকে দিলেই তো হতো। মনে মনে উপায় খুঁজছি স্যারের গপ্পের হাত থেকে কিভাবে রেহাই পাওয়া যায়। একদিন হঠাৎ স্যার ক্লাসে আসবার আগে আমরা মেয়েরা প্ল্যান করলাম স্যারের ক্লাস করবো না, যেই ভাবা অমনি প্রায় ১৫জন মেয়ে ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে কমনরুমে এসে বসে রইলাম। ছেলেদেরকেও মনে হয় আমরা বলেছিলাম, ওরা তেমন পাত্তা দিল না। এদিকে স্যার ক্লাসে এসে যখন দেখে মেয়েরা নেই, এক ছেলেকে পাঠায় আমাদের ডেকে নেয়ার জন্য। আমরা তাকে বলে দেই তোমাদের মন চাইলে তোমরা করো গিয়ে ক্লাস, আমরা আর করবো না, ডেইলি ডেইলি ঐ এক অংক, ঐটা মুখস্ত হয়ে গেছে। ছেলেটা ফিরে গেল। এদিকে আমরা চিন্তা করলাম স্যার নিশ্চয়ই ক্ষেপেছে আমাদের উপরে। আমরা কমনরুমে বসে থাকলে পরে স্যার ক্লাস শেষে গিয়ে যদি চেয়ারম্যান স্যারের কাছে নালিশ দেয়, তাহলে উনি আমাদের ভুল বুঝবেন, বকা তো খাবই, আসল সমস্যা স্যারকে বলারই সুযোগ পাব না। তাই আমরাই আগে গিয়ে অভিযোগ দেই। যেই ভাবা সেই কাজ, সাথে সাথে সবাই মিলে গিয়ে লেকচার খাতা খুলে দেখিয়ে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে ঐ স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালাম, স্যার আমাদের একজনের খাতা রেখে দিলেন। এরপর সেই খাতাসহ প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে অভিযোগ জানালেন। প্রিন্সিপাল স্যার কলেজের নানা ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাত করতেন ঠিকই, কিন্তু কলেজের লেখাপড়ার মানের দিকে ছিল তীক্ষ্ন নজর। একমাসের মধ্যে ঐ স্যারকে অন্য কলেজে বদলি করিয়ে দিলেন, এরপর তিনজন শিক্ষকই আমাদের ক্লাস নিতেন, তবুও ভাল।


আমাদের ভাগ্য ভাল, একবারের অভিযোগেই আশানুরূপ ফল পেয়েছি, ভিকিরা তোমরা সাহস হারাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:০৪
১৬টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×