somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিটামিন-এ ক্যাপসুল চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের নিম্নমানের ভিটামিন এ ক্যাপসুল আমদানি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের স্বার্থান্বেষী কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিম্নমানের এসব ভিটামিন-এ আমদানি করা হয়। ১২ মার্চ জাতীয় ক্যাম্পেইনে ভিটামিন-এ ও কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর শত শত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। কয়েক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন, সরবরাহকৃত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সেবনে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। কোনো শিশু অসুস্থও হয়নি।
সমকাল অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্যাম্পেইনে সরবরাহকৃত ভারতীয় ওলিভ হেলথকেয়ার যে ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাপসুল সরবরাহ করেছে তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমদানি করা হয়নি। বাংলাদেশে ওষুধনীতি অনুযায়ী যে কোনো বিদেশি ওষুধ আমদানি করতে হলে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের ওলিভ কোম্পানির ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয়। কোম্পানিটি ৭টি উন্নত দেশের কোনোটিতেই নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, তাদের প্রয়োজনীয় এফএসসি সার্টিফিকেট নেই। ভারতের ওই কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে সর্বনিম্ন হলেও সরকারের ওষুধনীতির আলোকে তারা যোগ্য নয়। ওই কোম্পানির ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাদের দরপত্র প্রাক-মূল্যায়ন পর্যায়েই বাদ পড়ার কথা। এমনকি বিশ্বব্যাংকও ওই কোম্পানির ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের প্রাক-যোগ্যতা নেই বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয় বিভাগ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে (সিএমএসডি) পরিষ্কারভাবে জানিয়ে
দেয়। এতদসত্ত্বেও নিয়মবহির্ভূতভাবে অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ওষুধগুলো আমদানি করা হয়েছে।
ওষুধনীতিতে এনওসির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ওষুধ আমদানির সুযোগও নেই বলে অভিমত দেন ওষুধ শিল্কসংশ্লিষ্টরা। কেবল সীমিত ক্ষেত্রে মুমুর্ষূ রোগীদের কথা বিবেচনা করে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এনওসির মাধ্যমে ওষুধ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ ভারতীয় কোম্পানির ওষুধ আমদানিতে এনওসি নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া এ ব্যাপারে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। একইভাবে বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয় এবং যাদের এফএসসি নেই এমন একটি ভারতীয় কোম্পানির ওষুধ কীভাবে আমদানির অনুমোদন পেল তারও সদুত্তর মেলেনি মন্ত্রণালয়ের ওষুধ ক্রয় সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান সিএমএসডি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, স্থানীয় যে এজেন্ট ভারতীয় ভিটামিন-এ ক্যাপসুল আমদানি করেছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের একজন প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদপুষ্ট। যে কারণে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর অনন্যোপায় হয়ে ভারতীয় কোম্পানি ওলিভকে এনওসির মাধ্যমে ওষুধ আমদানির অনুমোদন দেয়। বিদেশ থেকে মান পরীক্ষার কথা বলা হলেও আমদানিকৃত ৬৮টি ব্যাচের ওষুধের মধ্যে মাত্র ১১টি ব্যাচের মান পরীক্ষা করিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ অবশিষ্ট ৫৭টি ব্যাচের ওষুধ মান যাচাই ছাড়াই খাওয়ানো হয়েছে। নিম্নমানের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল আমদানি, শিশুদের অসুস্থতা ও শিশুমৃত্যুর অভিযোগের যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে অভিমত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও চিকিৎসকরা।
অভিযোগগুলো সম্পর্কে কথা বলতে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ খেয়ে শিশুদের গণহারে হাসপাতালে ভর্তির পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই দিন স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটি ভিটামিনের ক্রয় প্রক্রিয়া, শিশুদের অসুস্থতাসহ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. সিফায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। তথাপি সরকার অভিযোগগুলো তদন্তে কমিটি করেছে।
এদিকে খুলনায় এবারের জাতীয় ক্যাম্পেইনে ব্যবহৃত ওলিভ ও ব্যানার ফার্মা ছাড়াও গ্গ্নোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ভিটামিন সরবরাহের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সিএমএসডি জানায়, এক লাখ ইউনিটের কিছু ক্যাপসুল সেখানে পাঠানো হয়েছে। এগুলো ২০১১ সালে গ্গ্নোবের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল। এর আগে ওলিভ ও ব্যানারের ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. সিফায়েত উল্লাহ গতকাল জানান, তদন্ত কমিটি অন্য একটি কোম্পানির ওষুধ কীভাবে খুলনায় গেল তাও যাচাই করবে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি এসএম শফিউজ্জামান সমকালকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক টেন্ডারে ওষুধ কিনলেও মান নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ থাকলে তা প্রয়োগ করা উচিত হয়নি। তার মতে, মান নিয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনেক শিশুর অসুস্থতার মধ্য দিয়ে অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়েছে।
মান নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রশ্ন :ভারতের ওলিভ হেলথকেয়ারের সরবরাহ করা ১০ কোটি ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল কেন্দ্রীয় সিএমএসডির গুদামে পেঁৗছায় গত বছরের অক্টোবরে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জ্যাকলিন টিএফ মোহন স্ব্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে মান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে ক্যাপসুল বিতরণ না করার কথা বলেন। সরবরাহকারী কোম্পানির যোগ্যতা সম্পর্কেও চিঠিতে প্রশ্ন আছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় ওলিভ বলেছিল, নাইজেরিয়ায় ২০ কোটি ক্যাপসুল সরবরাহ করেছে তারা। 'মেডফোড নাইজেরিয়া' নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা সরবরাহ করেছে। ব্যানার বিশ্বব্যাংকে অভিযোগ দিয়েছে, নাইজেরিয়ার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা আড়াই কোটি। ইউনিসেফ ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ইনিশিয়েটিভ এ ক্যাপসুল সরবরাহ করে। কাজেই অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ২০ কোটি ক্যাপসুল সরবরাহের দাবিটি মিথ্যা।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ১২ মার্চের ক্যাম্পেইনের জন্য সারাদেশে মোট আড়াই কোটি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সরবরাহ করা হয়েছিল। ওলিভের কাছ থেকে কেনা ওষুধ ঢাকা বিভাগের ১৮টি জেলাসহ মোট ২৪ জেলায় সরবরাহ করা হয়।
এনওসি দিয়ে কোটি কোটি টাকার ওষুধ আমদানির অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক গোলাম কিবরিয়াসহ তিনজন দায়িত্বে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার অধিদফতরে গিয়ে মহাপরিচালক জরুরি মিটিংয়ে অফিসের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরিচালক গোলাম কিবরিয়া সমকালকে বলেন, 'জাতীয় স্বার্থে' অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে ওষুধ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে সিএমএসডি ওষুধ ক্রয় করলে অনাপত্তিপত্র না দেওয়ারও সুযোগ থাকে না। অনভিজ্ঞ ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া প্রসঙ্গে সিএমএসডি পরিচালক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সমকালকে বলেন, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি নাইজেরিয়ায় যোগাযোগ করে ওলিভের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কাগজপত্রে তার প্রমাণও রয়েছে। ৬৮টি ব্যাচের মধ্যে মাত্র ১১টি ব্যাচ পরীক্ষা করানো সম্পর্কে তিনি বলেন, র‌্যানডম পদ্ধতিতে ১০ শতাংশ ওষুধ পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তিনি বলেন, ওষুধ সরবরাহে 'মনোপলি' বজায় রাখতে একটি কোম্পানি অভিযোগগুলো করে যাচ্ছে।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×