somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই কি সেই বিপ্লবী ছাত্রনেতা মেনন যাকে দেখে অনুপ্রানিত হত আমার মত লাখো ছাত্র?

১৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রোম যখন পুড়ছিলো নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো। ভিকারুননিসা যখন কাঁদছিলো মেনন তখন বিদেশ সফর করছিলো।’

রাষ্ট্রবিপ্লবের স্বপ্ন দেখা রাশেদ খান মেননরা রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন। তাদের চোখ দিয়ে সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তাদের হাজারো অনুসারী। কিন্তু মেননের রাজনীতির শেষ বেলায় প্রমাণ হলো রাষ্ট্রতো অনেক দূরের বিষয়, বছরের পর বছর শত শত মানুষের চেষ্টায় গড়ে ওঠা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার যোগ্যতাও তাদের নেই।

অথচ জীবনের বড় সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বলেই ছাত্রনেতা থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন রাশেদ খান মেনন। জাতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই সভা-সমাবেশে একদিকে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন, অন্যদিকে ‘ইউটোপীয়’ হলেও সমাধানের পথ বাতলেছেন কখনো সখনো। কিন্তু বাবুগঞ্জের ‘হাতুড়ি’ ছেড়ে ’নৌকা’র সওয়ারী হিসেবে রমনা-মতিঝিলের অভিবাসী এমপি হয়ে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সংকট ঠেকাতে পারলেন না। অনেকের অভিযোগ, ‘মার্কসবাদী’ থেকে ‘পুঁজিবাদী’দের কাছে আত্মসমর্পণ করা এ ‘সমাজতন্ত্রী’ সেই সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছেন। তারপর সময়মতো আর দেশেই থাকেননি।

তার এ ব্যর্থতা আরো বেশি হয়ে দেখা দেয় এ কারণে যে, শুধু স্থানীয় এমপি হিসেবেই রাশেদ খান মেনন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এবং কলেজের মতো নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন না, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও চেয়ারম্যান। ৬০ এর দশকে ছাত্ররাজনীতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে রেখেই হয়তো মেননকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো। কিন্তু স্কুলের পরিচালনা কমিটির প্রধান, স্থানীয় এমপি এবং স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান; কোনো অবস্থান থেকেই সংকটে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি মেনন।

ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সংকটের শুরু স্কুলের বসুন্ধরা শাখার বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধর ছাত্রী ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটানোর পর। গ্রেফতারের পর ধর্ষণ অপরাধের কথা স্বীকার করে এখন কারাগারে পরিমল। কিন্তু তাকে আইনের মুখোমুখি করাটা খুব সহজ ছিলো না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ভিকারুন নিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজে।

সেই বাধার কারণেই এখন সমালোচিত স্কুলের পরিচালনা কমিটির (পরে ভেঙ্গে দেয়া) চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন। আর স্কুলের ‘অপসারিত’ কিন্তু সরকারের আদেশে পুনর্বহালের পর ছুটিতে যাওয়া অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ‘তিন নম্বর আসামি’।

অনেকের কাছে এটি বিস্ময়ের বিষয় যে, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটানোর পরও পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে মেনন কেন পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেননি, কিংবা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিটির বৈঠক ডাকেননি। একজন নারী হয়ে অধ্যক্ষ কেনো কমিটির বৈঠকের অজুহাতে ব্যবস্থা নিতে দেরি করলেন সেই প্রশ্নও অনেকের।

তবে যারা ভেতরের ঘটনা জানেন তারা এটাও জানেন, যে প্রক্রিয়ায় এবং যে শক্তির জোরে হোসনে আরা বেগম বাইরে থেকে এসে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন সেই একই শক্তির বলে নিয়োগ পেয়েছেন পরিমল জয়ধরসহ আরো কয়েকজন। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার পরিমলের বিরুদ্ধে তাই শুধু ব্যবস্থা নিতেই গড়িমসি করেননি অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রথমে ঘটনা চেপে যেতে বলেন এবং পরে আন্দোলন শুরু হলে শুরু করেন হুমকি ধমকি।

স্কুলের একজন ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনার পরও অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের বিবেক কথা বলেনি। এদেশে গদি, চেয়ার এবং ক্ষমতা এতোই আরামদায়ক আর গুরুত্বপূর্ণ যে, পদ ধরে রাখতে ন্যূনতম নৈতিকতার কথাও মনে আসে না। সন্তানের মতো ছাত্রী নিজের স্কুলের শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার পরও তাই অধ্যক্ষের মনে হয়েছে তার অধ্যক্ষ পদই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম নন, রাশেদ খান মেননের বিবেকও কথা বলেনি। ক্ষমতা-বলয়ের কাছাকাছি থাকায় তিনিও তার সন্তানতুল্য ছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা না নিয়ে কমনওয়েলথের একটি কর্মসূচি হয়ে নিজের মেয়ের কাছে চলে গেছেন। একদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দেশের হাজারো স্কুলের মাঝে ঢাকার শীর্ষ এই স্কুলটির দেখ-ভাল করার কথা তার। অন্যদিকে পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে সমস্যা হলে তা দূর করাও তার দায়িত্ব। অথচ সেই স্কুলটিকেই চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়ে মেয়েকে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন সারাজীবন মার্কিন ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ স্লোগান দেয়া রাশেদ খান মেনন।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, লাল পাসপোর্টে হিল্লি-দিল্লি-বেইজিং-হাভানা এমনকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে ভোট দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ জপ নিয়ে মক্কা-মদিনা কোনো জায়গাতেই তার যাওয়াতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। সরকারি বা সংসদীয়দলের প্রতিনিধি হিসেবে কূটনৈতিক মর্যাদায় ‘ফরেন ট্যুরের’ ফাঁকে বিদেশে থাকা মেয়েকেও দেখে আসতে পারেন তিনি। এ নিয়ে কোনো অসুরও আপত্তি করবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একদিকে নিজের স্কুলকে সংকটের মধ্যে রেখে বিদেশে চলে যাওয়া কতোটা যৌক্তিক, অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষক দ্বারা একজন ছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার পর ব্যবস্থা না নেয়া কতোটা নৈতিক।

ঠিক যে কারণে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার সময় হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল এবং আমেনা বেগমসহ রাশেদ খান মেনন ‘আরেকবার সাধিলেই খাইবো`র মতো প্রথমে ভোট না দিয়ে অপেক্ষা করে পরে ভোট দিয়েছেন, সেই একই কারণে পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি। একসময় চরম আওয়ামী লীগ বিরোধিতার পরও এমপি হওয়ার জন্য এখন যে আওয়ামী লীগের লেজ তিনি ধরেছেন সদস্যপদ রক্ষায় তা মাড়ানোর সাহস তার নেই। ‘সমাজতান্ত্রিক’ এ নেতাকে যেজন্য বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হয়েছে, ঠিক একই কারণে পরিমল জয়ধরকে বাঁচিয়ে দেয়ার মিশনেও নামতে হয়েছে তাকে।

তবে সেই মিশন কোনোভাবেই সফল হয়নি। ছাত্রী এবং অভিভাবকদের আন্দোলন আর গণমাধ্যমের দৃঢ় অবস্থানের কারণে পরিমল জয়ধর এখন কারাগারে। আর যে ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ছিলেন রাশেদ খান মেনন সেই কমিটিই বিলুপ্ত করেছে সরকার।

তবে কমিটি বিলুপ্তির ঘটনায় সকলের প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথমবারের মতো কিছুটা হোঁচট খেলেন কি না সেই আশংকাও অনেকের। বিলুপ্তির এ ঘটনা ঘটেছে ব্যবস্থাপনা কমিটির অর্ধেক বৈঠকে বসে ধর্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ করার পর। অর্ধেক কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিশ্চিতভাবেই তাতে রাজনীতি আছে। শিক্ষামন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, মিরেরসরাই ট্র্যাজেডিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোক দিবস পালনের দিন মেয়েদের দিয়ে কেক কাটানোর মধ্যে অশুভ শক্তির ইন্ধন ছিলো। তবে এটাও বাস্তবতা হোসনে আরা বেগমের অপসারণের সিদ্ধান্তকে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ছাত্রীরা স্বাগত জানিয়েছে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড স্কুলের পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত করার পর হোসনে আরা বেগম আবারো অধ্যক্ষ হিসেবে পুনর্বহাল হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছে তারা।

অবস্থা এখন এরকম দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় বেশিরভাগ সময়ই শীর্ষে থাকা ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিবেশ। অর্ধবার্ষিক এবং প্রি-টেস্ট পরীক্ষার ঠিক আগে শিক্ষা কার্যক্রম এভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকরা আশংকার মধ্যে আছেন। অথচ প্রথমেই পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে রাশেদ খান মেনন এবং হোসনে আরা বেগমরা ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এতোদূর গড়াতো না। তারা সেটা করেননি রাজনৈতিক কারণে।

অদ্ভুত এ দেশের রাজনীতি! রাজনৈতিক কারণে কারো চাকরি হতেই পারে। কিন্তু তিনি যদি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটান তাহলে সেই দায় কেন নেবে ওই রাজনীতি? যদি নেয় তাহলে বুঝতে হবে রাজনীতি না হোক, অন্তত রাজনীতিকদের মধ্যে গলদ আছে। সেই গলদের শিকার আজ দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

লেখকঃ জাহিদ নেওয়াজ খান
সুত্র রোম যখন পুড়ছিলো নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো। ভিকারুননিসা যখন কাঁদছিলো মেনন তখন বিদেশ সফর করছিলো।’

রাষ্ট্রবিপ্লবের স্বপ্ন দেখা রাশেদ খান মেননরা রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার স্বপ্নও দেখতেন। তাদের চোখ দিয়ে সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তাদের হাজারো অনুসারী। কিন্তু মেননের রাজনীতির শেষ বেলায় প্রমাণ হলো রাষ্ট্রতো অনেক দূরের বিষয়, বছরের পর বছর শত শত মানুষের চেষ্টায় গড়ে ওঠা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার যোগ্যতাও তাদের নেই।

অথচ জীবনের বড় সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বলেই ছাত্রনেতা থেকে রাজনৈতিক নেতা হয়েছেন রাশেদ খান মেনন। জাতীয় সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই সভা-সমাবেশে একদিকে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন, অন্যদিকে ‘ইউটোপীয়’ হলেও সমাধানের পথ বাতলেছেন কখনো সখনো। কিন্তু বাবুগঞ্জের ‘হাতুড়ি’ ছেড়ে ’নৌকা’র সওয়ারী হিসেবে রমনা-মতিঝিলের অভিবাসী এমপি হয়ে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সংকট ঠেকাতে পারলেন না। অনেকের অভিযোগ, ‘মার্কসবাদী’ থেকে ‘পুঁজিবাদী’দের কাছে আত্মসমর্পণ করা এ ‘সমাজতন্ত্রী’ সেই সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছেন। তারপর সময়মতো আর দেশেই থাকেননি।

তার এ ব্যর্থতা আরো বেশি হয়ে দেখা দেয় এ কারণে যে, শুধু স্থানীয় এমপি হিসেবেই রাশেদ খান মেনন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এবং কলেজের মতো নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন না, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিরও চেয়ারম্যান। ৬০ এর দশকে ছাত্ররাজনীতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে রেখেই হয়তো মেননকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিলো। কিন্তু স্কুলের পরিচালনা কমিটির প্রধান, স্থানীয় এমপি এবং স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান; কোনো অবস্থান থেকেই সংকটে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি মেনন।

ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সংকটের শুরু স্কুলের বসুন্ধরা শাখার বাংলার শিক্ষক পরিমল জয়ধর ছাত্রী ধর্ষণের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটানোর পর। গ্রেফতারের পর ধর্ষণ অপরাধের কথা স্বীকার করে এখন কারাগারে পরিমল। কিন্তু তাকে আইনের মুখোমুখি করাটা খুব সহজ ছিলো না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ভিকারুন নিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজে।

সেই বাধার কারণেই এখন সমালোচিত স্কুলের পরিচালনা কমিটির (পরে ভেঙ্গে দেয়া) চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন। আর স্কুলের ‘অপসারিত’ কিন্তু সরকারের আদেশে পুনর্বহালের পর ছুটিতে যাওয়া অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ‘তিন নম্বর আসামি’।

অনেকের কাছে এটি বিস্ময়ের বিষয় যে, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটানোর পরও পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে মেনন কেন পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেননি, কিংবা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিটির বৈঠক ডাকেননি। একজন নারী হয়ে অধ্যক্ষ কেনো কমিটির বৈঠকের অজুহাতে ব্যবস্থা নিতে দেরি করলেন সেই প্রশ্নও অনেকের।

তবে যারা ভেতরের ঘটনা জানেন তারা এটাও জানেন, যে প্রক্রিয়ায় এবং যে শক্তির জোরে হোসনে আরা বেগম বাইরে থেকে এসে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন সেই একই শক্তির বলে নিয়োগ পেয়েছেন পরিমল জয়ধরসহ আরো কয়েকজন। গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার পরিমলের বিরুদ্ধে তাই শুধু ব্যবস্থা নিতেই গড়িমসি করেননি অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রথমে ঘটনা চেপে যেতে বলেন এবং পরে আন্দোলন শুরু হলে শুরু করেন হুমকি ধমকি।

স্কুলের একজন ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনার পরও অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের বিবেক কথা বলেনি। এদেশে গদি, চেয়ার এবং ক্ষমতা এতোই আরামদায়ক আর গুরুত্বপূর্ণ যে, পদ ধরে রাখতে ন্যূনতম নৈতিকতার কথাও মনে আসে না। সন্তানের মতো ছাত্রী নিজের স্কুলের শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার পরও তাই অধ্যক্ষের মনে হয়েছে তার অধ্যক্ষ পদই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শুধু অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম নন, রাশেদ খান মেননের বিবেকও কথা বলেনি। ক্ষমতা-বলয়ের কাছাকাছি থাকায় তিনিও তার সন্তানতুল্য ছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা না নিয়ে কমনওয়েলথের একটি কর্মসূচি হয়ে নিজের মেয়ের কাছে চলে গেছেন। একদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দেশের হাজারো স্কুলের মাঝে ঢাকার শীর্ষ এই স্কুলটির দেখ-ভাল করার কথা তার। অন্যদিকে পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে সমস্যা হলে তা দূর করাও তার দায়িত্ব। অথচ সেই স্কুলটিকেই চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়ে মেয়েকে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেন সারাজীবন মার্কিন ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ স্লোগান দেয়া রাশেদ খান মেনন।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, লাল পাসপোর্টে হিল্লি-দিল্লি-বেইজিং-হাভানা এমনকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে ভোট দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ জপ নিয়ে মক্কা-মদিনা কোনো জায়গাতেই তার যাওয়াতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। সরকারি বা সংসদীয়দলের প্রতিনিধি হিসেবে কূটনৈতিক মর্যাদায় ‘ফরেন ট্যুরের’ ফাঁকে বিদেশে থাকা মেয়েকেও দেখে আসতে পারেন তিনি। এ নিয়ে কোনো অসুরও আপত্তি করবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একদিকে নিজের স্কুলকে সংকটের মধ্যে রেখে বিদেশে চলে যাওয়া কতোটা যৌক্তিক, অন্যদিকে স্কুলের শিক্ষক দ্বারা একজন ছাত্রী ধর্ষিত হওয়ার পর ব্যবস্থা না নেয়া কতোটা নৈতিক।

ঠিক যে কারণে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার সময় হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল এবং আমেনা বেগমসহ রাশেদ খান মেনন ‘আরেকবার সাধিলেই খাইবো`র মতো প্রথমে ভোট না দিয়ে অপেক্ষা করে পরে ভোট দিয়েছেন, সেই একই কারণে পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি। একসময় চরম আওয়ামী লীগ বিরোধিতার পরও এমপি হওয়ার জন্য এখন যে আওয়ামী লীগের লেজ তিনি ধরেছেন সদস্যপদ রক্ষায় তা মাড়ানোর সাহস তার নেই। ‘সমাজতান্ত্রিক’ এ নেতাকে যেজন্য বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে হয়েছে, ঠিক একই কারণে পরিমল জয়ধরকে বাঁচিয়ে দেয়ার মিশনেও নামতে হয়েছে তাকে।

তবে সেই মিশন কোনোভাবেই সফল হয়নি। ছাত্রী এবং অভিভাবকদের আন্দোলন আর গণমাধ্যমের দৃঢ় অবস্থানের কারণে পরিমল জয়ধর এখন কারাগারে। আর যে ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ছিলেন রাশেদ খান মেনন সেই কমিটিই বিলুপ্ত করেছে সরকার।

তবে কমিটি বিলুপ্তির ঘটনায় সকলের প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথমবারের মতো কিছুটা হোঁচট খেলেন কি না সেই আশংকাও অনেকের। বিলুপ্তির এ ঘটনা ঘটেছে ব্যবস্থাপনা কমিটির অর্ধেক বৈঠকে বসে ধর্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার কারণে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ করার পর। অর্ধেক কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিশ্চিতভাবেই তাতে রাজনীতি আছে। শিক্ষামন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, মিরেরসরাই ট্র্যাজেডিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোক দিবস পালনের দিন মেয়েদের দিয়ে কেক কাটানোর মধ্যে অশুভ শক্তির ইন্ধন ছিলো। তবে এটাও বাস্তবতা হোসনে আরা বেগমের অপসারণের সিদ্ধান্তকে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ছাত্রীরা স্বাগত জানিয়েছে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড স্কুলের পরিচালনা কমিটি বিলুপ্ত করার পর হোসনে আরা বেগম আবারো অধ্যক্ষ হিসেবে পুনর্বহাল হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও নেমেছে তারা।

অবস্থা এখন এরকম দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় বেশিরভাগ সময়ই শীর্ষে থাকা ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিবেশ। অর্ধবার্ষিক এবং প্রি-টেস্ট পরীক্ষার ঠিক আগে শিক্ষা কার্যক্রম এভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকরা আশংকার মধ্যে আছেন। অথচ প্রথমেই পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে রাশেদ খান মেনন এবং হোসনে আরা বেগমরা ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি এতোদূর গড়াতো না। তারা সেটা করেননি রাজনৈতিক কারণে।

অদ্ভুত এ দেশের রাজনীতি! রাজনৈতিক কারণে কারো চাকরি হতেই পারে। কিন্তু তিনি যদি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটান তাহলে সেই দায় কেন নেবে ওই রাজনীতি? যদি নেয় তাহলে বুঝতে হবে রাজনীতি না হোক, অন্তত রাজনীতিকদের মধ্যে গলদ আছে। সেই গলদের শিকার আজ দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

লেখকঃ জাহিদ নেওয়াজ খান
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৪৪
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×