somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হার্টের রিং বিক্রিতে ডাক্তারদের কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য

১৯ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হৃদযন্ত্রের আটারি ব্লক নিরাময়ে ব্যবহৃত রিং (স্টেন্ট) বিক্রির বাবদ বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তাররা কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।



জানা যায়, ট্রেড প্রাইজ নির্ধারিত না থাকায় রিং বিক্রির মাধ্যমে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ও ট্রেডিং কোম্পানির লোকজন রোগীদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।



জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, এ্যাপোলো হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসাপতাল, স্কয়ার হাসপাতাল এবং ল্যাবএইড ছাড়াও অন্যান্য হাসপাতালে বসেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বিভিন্ন ট্রেডিং কোম্পানির স্টেন্ট বা আটারিতে লাগানোর রিং বিক্রির কমিশন নিচ্ছেন।



তবে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।



এ্যাপোলা হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক এ.কিউ.এম রেজা বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “স্টেন্ট কেনা-বেচার ওপর সরকারের বা ওষুধ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে কোনো চিকিৎসক এ ধরনের কাজে জড়িত থাকতে পারেন। তবে ঢালাওভাবে সব চিকিৎসকের ব্যাপারে এ অভিযোগ করা যাবে না। এ বিষয়ে নিয়ম থাকলে ফাঁক-ফোকর থাকত না। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ঢালাওভাবে অভিযোগ উঠত না।”



তিনি বলেন, “এ্যাপোলোতে আমাদের সঙ্গে ট্রেডিং কোম্পানির কোনো যোগাযোগ নেই। কর্তপক্ষকে স্টেন্ট দিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। বিক্রির পর কোনটা এবং কতগুলো বিক্রি হলো তার বিক্রিমূল্য একসঙ্গে নেয় কোম্পানিগুলো।”



জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ডা. আতাহার আলী অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘স্টেন্ট আমদানি করে কোম্পানির লোকজন ব্যবসা করছে। তাছাড়া, ট্রেডপ্রাইজ নির্ধারিত না থাকায় অন্য কোথাও এটা হতে পারে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এ ধরনের অভিযোগ জানা নেই।” তবে কোম্পানির লোক রোগীদের কাছ থেকে দাম বেশি নিতে পারেন বলে তিনি জানান।



বিভিন্ন হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ক্যাথেল্যাবগুলোর সামনে টেডিং কোম্পানির লোকজন ব্যাগে করে স্টেন্ট নিয়ে থাকে। ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দাম-দর মিটিয়ে তাদের কাছ থেকে স্টেন্ট কিনে নেন। অস্ত্রপাচারের প্রস্ত্ততির পর ট্রেডিং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে চিকিৎসরা এই স্টেন্ট সংগ্রহ করেন।



বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, হৃদযন্ত্রের আটারি শতকরা ৬০ ভাগ ব্লক হয়ে গেলে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্টরা স্টেন্ট লাগানোর মতামত বা পরামর্শ দেন। সেক্ষেত্রে একজন রোগীর যতটি ব্লক আছে, ততটি স্টেন্ট বা আটারিতে লাগানোর রিং ব্যবহার করতে হয়।



ব্লক নিরময়ের ক্ষেত্রে বেয়ার মেটাল, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম এবং ড্রাগ ইলুইটিং-এ তিন ধরনের স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি না থাকায় এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করছে বিভিন্ন ট্রেডিং কোম্পানি। দেশে মূলত কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ও ড্রাগ ইলুইটং বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে।



ট্রেডিং কোম্পানিগুলো স্টেন্ট বিক্রি করছে ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে।



ওমেগা হেলথ কেয়ার কোম্পানির এম আর লুৎফর রহমান বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, বেয়ার মেটাল ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ৬০ থেকে ৭০ হাজার এবং ড্রাগ ইলুইটিং ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।



তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেয়ার মেটাল রিং কিনতে নেয়া হচ্ছে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, কোবাল্ট ক্রোমিয়াম এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ড্রাগ ইলুইটিং দু’লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণ দাম নেয়া হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে।



তবে দ্বিগুণ দাম নেয়া হয় কি না, জানতে চাইলে লুৎফর রহমান বলেন, “বেলুন বা অন্যান্য কারণে দাম কিছু বেশি পড়তে পারে।” তবে দ্বিগুণ দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “এ ধরনের তথ্য আমার জানা নেই।’’



জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোগীদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানির লোকজন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ভেতরে ব্যাগে করে এসব স্টেন্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। যখন কারো প্রয়োজন হয় তখন চিকিৎসকরা কোম্পানির লোকদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করে রোগীর লোকদের নিদিষ্ট অঙ্কের দাম দেয়ার পরামর্শ দেন। এমনকি চিকিৎসকরা রোগীকে বা রোগীর লোকদের কম দামে স্টেন্ট কিনে দেয়া হলো বলে আশ্বস্ত করেন। রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, সব হাসপাতালেই একই অবস্থা।



ল্যাবএইডে চিকিৎসা নিতে আসা প্রশান্ত সাহার অভিভাবক মমতাজ বেগম বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘ল্যাবএইডে অন্য হাসপাতালের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছে। তা ছাড়া রিংয়ের দাম দ্বিগুণ নিয়েছে।” তবে এ বিষয়ে এখন কথা বললে দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসার ক্ষতি হতে পারে তিনি জানান।’



হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক নিয়ে চিকিৎসা করতে আসা রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাতাব উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, এ্যাপোলোতে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন রিংয়ের দাম অনেক বেশি। যেখানে কম মূল্যে পাবেন সেখানে রিং লাগাবেন।



ইন্টারভেনশন কর্ডিওলোজিস্ট জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মির জামাল উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, স্টেন্টের দাম চিকিৎসকদের নির্ধারণ করার কথা নয়। রোগীদের সঙ্গে দাম-দর হওয়ার কথা। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে সাধারণত কর্তৃপক্ষই দাম নির্ধারণ করে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×