somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথা চুপকথা(একটি কল্পবৈজ্ঞানিক রূপকথা)

১৮ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩০২০ সাল।আলফা-৪৭ গ্রহের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আছে ক্রান।পেশায় সে একজন গল্প নির্মাতা।এটা অত্যন্ত প্রাচীন একটা পেশা।অনেক বছর আগে মানুষ যখন একটি মাত্র গ্রহে বাস করত তখনকার লোক গল্প-উপন্যাস এগুলোর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সময়ের প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করত।এটা ছিল একটা সম্মানজনক পেশা।মানুষ তখন সবে মাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নতি শুরু করেছে।এখনকার সময়ে এ ধরনের পেশায় লোকের সংখ্যা নগন্য।ফলে সমাজে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি অপরিসীম।সম্প্রতি বাচ্চাদের জন্য একটা রূপকথা লেখার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে ক্রানকে।দায়িত্ব দিয়েছে স্বয়ং তাদের গ্রহের চীফ প্রেসিডেন্ট।একটা খসড়া দাড়া করিয়েছিল সে।কিন্তু তা চীফ প্রেসিডেন্টের পছন্দ হয় নি।বাচ্চাদের গল্পে সব সময় ভালো লোকের জয় দেখানো হতে পারে অন্যায়কারীর জয় না।কাজেই তাকে গল্পটা একটু নতুন করে সাজাতে হবে...শুধু দূষ্ট লোক আর ভালো লোকের সংজ্ঞাটা বদলে দিলেই হল...এখনকার আধুনিক পৃথিবীতে অবশ্য এই কাজটুকু কঠিন কিছু না।নিজের মাইক্রো ভিডিকম্পটা কাছে টেনে নিল ক্রান।তার ভয়েজে একটিভ হয়ে উঠল ভিডিকম্পেরর স্ক্রীন।এটি একই সাথে একটি সুপার কম্পিউটারের পাশাপাশি একটি যোগাযোগ মডিউল হিসবে কাজ করে।ক্রানের ব্যবহৃত ভিডিকম্পটা হল ভিডি-৪০০০ মডেল।গ্যালাক্সির লেটেস্ট মডেল। গ্যালাক্সির একশ বসবাসযোগ্য গ্রহের যে কোনটির সাথে এর সাহায্যে থ্রি-ডি ভিডিও কনফারেন্স করা যায়।ভয়েজ এক্টিভেটেড এই ভিডিকম্পের মাঝে আছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন্টারফেস।ফলে অন করার সাথে সাথে মনিটরে একটি মুখ ভেসে উঠে।যাকে তার প্রয়োজনীয় কাজটুকু মুখে বলে বুঝিয়ে দিলেই করে ফেলে।ভিডিকম্পের মনিটরে ভেসে উঠল ত্রাইনার মুখ।ত্রাইনা ক্রানের মেয়ে।ইচ্ছা থাকলেও কাজের চাপে ছোট্র ত্রাইনার সাথে খুব বেশী দেখা করতে পারে না ক্রান।তাই ভিডিকম্পের মনিটরে ভিডিকম্পের এ.আই এর যে ইন্টারফেসটা তার কথার সাথে ত্রাইনার মুখ আর কণ্ঠস্বর জুড়ে দিয়েছে ক্রান।ত্রাইনার মুখটা দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল ক্রানের।এমন কিছু মিথ্যা এখন সাজাতে হবে যা সে কিছুতেই করতে চাচ্ছিল না।সেটাও ভিডিকম্পই করলেও তাতো তার সামনে তার মেয়ের রূপেই আসে।ভিডিকম্পকে একের পর এক ইন্সট্রাকশান দিয়ে গেল ক্রান।এবার ভিডিকম্প কাহিনীটাকে সাজিয়ে তারপর কাহিনীটাকে একটি হাই ডেফিনিশান ইন্টিগ্রেটেড থ্রি-ডি হলোগ্রাফিক মুভিতে নিজেই কনভার্ট করবে।তারপর সেটা পৌছে দেবে চীফ প্রেসিডেন্ট প্রাইসের ভিডিকম্পে।ক্রানের পূর্বপুরুষরা এসেছে মানুষের আদিম গ্রহ পৃথিবীর ছোট্র একটি দেশ থেকে।কাজেই সেই দেশটাকেই গল্পের প্লট হিসেবে নিল ক্রান।

“আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগের কথা।তখন মানুষ মাত্র একটি গ্রহে বাস করত।গ্রহটার নাম পৃথিবী।পৃথিবীর একটা ছোট্র দেশের নাম বাংলাদেশ।সেই দেশে ছিল এক প্রধানমন্ত্রী।দেশের সব ক্ষমতা থাকত প্রধানমন্ত্রীর হাতে।রাজা কেবল নামে মাত্রই রাজা।মজার বিষয় রাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর পর পর রাজা আর প্রধানমন্ত্রী সহ সব মন্ত্রী পরিবর্তন হত।আরো মজার বিষয় হল রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীরা ছিল মহিলা।তো সব প্রধানমন্ত্রীর আমলেই সেই দেশে উন্নয়নের জোয়ার-ভাটা(কোন গ্রহের বক্ষত্র বা উপগ্রহের মহাকর্ষীয় টানে জলভাগের পানির লেভেলের বৃদ্ধি-হ্রাসকে জোয়ার-ভাটা বলে) হত।বর্ষা মৌসুমে এই উন্নয়নের জোয়ার এত তীব্র হত যে সেই রাজ্যের রাজধানীতে হাটু পানি হত।প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর আমলে সেই পানির উচ্চতা বাড়ত বই কমত না।প্রধানমন্ত্রী আর অন্যান্য মন্ত্রীদের ভাষায় সেই রাজ্যে ছিল খালি সুখ আর সুখ।সেই সুখের সাগরে মানুষ সমানে হাবুডুবু খেত।তবে রাজ্যে দুষ্ট লোকেরও অভাব ছিল না।দুষ্ট লোকদের কাজই ছিল মন্ত্রীদের বদনাম করা।তো আমাদের গল্পের সময়কার প্রধানমন্ত্রীর এক বান্ধবী ছিল।সেই বান্ধবী ছিলেন একটি মেয়েদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। রূপকথার গল্প হবে আর পরী থাকবে না তা কি হয়।আমাদের এই গল্পের নায়কের নামের উৎপত্তি পরী থেকে।কোন এক পরীর পুরীষ মানে মল থেকেই তার জন্ম।তাই নাম তার পরিমল।তার নামের আরেকটা অংশে আছে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের নাম।সে আবার প্রধানমন্ত্রীর জেলা থেকে এসেছে।পুরো নাম তার পরিমল জয়ধর...এই পরিমল ছিল আবার প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী যেই স্কুলের শিক্ষিকা সেই স্কুলের বাংলার শিক্ষক।স্কুলের অর্বাচীন মূর্খ বালিকাদের বাংলা শিক্ষা দেবার পাশাপাশি বিনা বেতনে মিউচুয়াল সেক্স শিক্ষা দেবার গুরুদ্বায়িত্ব হাতে তুলে নেয় আমাদের নায়ক।এই মিউচুয়াল সেক্স ধারবার প্রবর্তক আবার প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী।তো এক ছাত্রীকে মিউচুয়াল সেক্স শিক্ষা দিতে গিয়ে ঘটে গন্ডগোল।ছাত্রী কিছুতেই এই শিক্ষা নিতে রাজী নয়।কিন্তু পরিমলও শিক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস।পড়ালেখায় ফাকিবাজি তার খুবই অপছন্দের।তাও যেটা কিনা সে বিনামূল্যে পড়াচ্ছে।কিছু দুষ্ট লোক এগুলো নিয়ে ব্লগ নামক একটি যায়গায় লেখালেখি শুরু করে।ফলে দেশের সমস্ত অর্বাচীন-মূর্খের দল মিউচুয়াল সেক্সের বিরোধিতা শুরু করে।এক পর্যায়ে সেই স্কুল পরিচালকারী কিছু মূর্খ প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবীকে অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারন করে।কিন্তু এবার আর ছেড়ে কথা বলা যায় না।তাই এই ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য আবির্ভাব ঘটে দেশের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের।তারা চাকরীচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবীকে স্বপদে পুনর্বহাল করল।কিন্তু পরিমল চলে গেল জেলে।ফলে পরিস্থিতি ব্যাপক ঘোলাটে হয়ে গেল।এদিকে মূর্খের দল (ওই স্কুলের ছাত্রীরা) পরিমলের সাথে মিউচুয়াল সেক্স করতে না পারার দুঃখে পরিমলের ফাসি দাবি করল এবং স্কুলের অধ্যক্ষের অপসারন দাবী করল।সাথে লেখালেখি করা মুর্খগুলোও(ব্লগাররা) আন্দোলন শুরু করল।কাজেই আন্দোলন থামাবার জন্য সবাইকে হুমকি-ধামকি দেয়া হল।

পরিশেষঃ পরিস্থিতি সামলাতে শেষমেশ পরিমলের বিচার হল।কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জেলার ছেলে এবং তার সন্তানতুল্য(কারন নামে তার পূত্রের নামের অংশবিশেষ আছে) একজনের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।কাজেই প্রধানমন্ত্রীর(যিনি তখনকার সময়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক ছিলেন) নির্দেশে রাজা পরমলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা প্রদর্শন করেন।আর ছাড়া পেয়ে আমাদের নায়ক যেই দেশ মিউচুয়াল সেক্সের মর্যাদা দিতে পারে বা সেই দেশ ছেড়ে মিউচুয়াল সেক্সের দেশ আমেরিকায় পাড়ি জমায়।সেখানে তাকে সাদর অভ্যররথনা জানায় তার প্রিয় বন্ধু...প্রধানমন্ত্রীপুত্র...আর অতঃপর পরিমল,প্রধানমন্ত্রী আর তার বান্ধবিরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল...”

বিঃদ্রঃ ইহা বাঙ্গলা সাহিত্যের প্রথম কল্পবৈজ্ঞানিক রূপকথা।এটার মাধ্যমে সাহিত্যের একটা নতুন ধারার সৃষ্টি হল।বাস্তবের সহিত ইহার মিল খুজতে যাবেন না,কারন ইহা বাস্তব নয় রূঢ় বাস্তব।আমরা যদি পরিশেষটুকু আন্দোলনের সাহায্যে বদলাতে না পারি তাহলে কে জানে হাজার বছর পরের রূপকথার গল্পটা হয়ত এরকম হলেও হতে পারে......
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×