somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিদস্যুদের দখলে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান

১৮ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা। দখলদারদের দাপটে কবরস্থানে সরকারি অর্থে মাটি ভরাট করে বাড়ানো জায়গায়তেও ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নতুন কোনো কবর দিতে পারছে না। কবর স্থানের জায়গায় বিভিন্ন ভুয়া জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে সাইন বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছে কুচক্রী মহল। বর্তমানে কবর স্থানের ৬৩.৫৪ একর জায়গায় ডিসিসি'র অনুমতি ছাড়াই দুর্বৃত্ত এই ভূমিদস্যুরা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধ পুনর্বাসন, পীরের মাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং থানা কমপ্লেক্স তৈরির নামে কবর স্থানের জায়গায় বসানো হয়েছে বড় বড় সাইন বোর্ড। দীর্ঘ পাইপের লাইনের মাধ্যমে তুরাগ থেকে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে পাশের জলাশয়ও।
Click This Link

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্র, বেনামি ভণ্ড পীরের মাজার, দারুস সালাম থানা কমপ্লেক্ম এবং সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের নামে যার যার ইচ্ছামত সাইন বোর্ড বসিয়ে রেখেছে। বুদ্ধিজীবী কবর স্থানের জায়গার ভিতরে থাকা জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে দেদারছে। মিরপুর ১০ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশের ডিসিসি'র মালিকানাধীন জলাশয় হতে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। জলাশয়টি বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য তুরাগ নদী থেকে জলাশয় পর্যন্ত মোটা পাইপ বসানো হয়েছে। জলাশয়টিতে প্রস্তাবিত দারুস সালাম থানা কমপ্লেক্স ও সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দু'টি সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। জলাশয়ের আশে পাশে কয়েকটি টিনের ঘরও রয়েছে।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, এই জায়গায় কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি করার অনুমতি দেয়নি ডিসিসি। কবর স্থানের জন্যই এখানে এল এ কেস নং- ১১৫/৬১-৬২ মূলে ৬৩.৫৪ একর জমি মিরপুর গৃহসংস্থান অধিদফতর কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। অধিগ্রহণ করা সম্পত্তি যে উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণ করা হয় সে উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ডিসিসি'র সম্পত্তি বিভাগ থেকে আরো জানা যায়, কবরস্থানের ভূমি মিরপুর গৃহসংস্থান অধিদফতর কর্তৃক হস্তান্তর মূলে এর মালিক ঢাকা সিটি করপোরেশন।
গত ১২ জুলাই মহানগর নাট্যমঞ্চে ডিসিসির বাজেট অধিবেশন চলাকালীন মিরপুর ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাসুদ খান প্রথমে মেয়রের দৃষ্টিতে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবর স্থানের জন্য বরাদ্দকৃত জমি কে বা কারা অবৈধভাবে দখলের পাঁয়তারা করছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাসেমকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। প্রধান প্রকৌশলী অভিযোগের সত্যতা যাচইয়ের জন্য নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট খলিল আহমেদকে কবরস্থান সরেজমিনে দেখার নির্দেশ দেন। গত ১৩ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। তিনি অবৈধ স্থাপনা ও ডিসিসি'র জমি দখলের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ডিসিসি কবর স্থানের মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় কয়েক মাস আগে মাটি ও বালু ফেলে কবর স্থানের পরিসর বৃদ্ধি করে। কিন্তু কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেখানে জোরপূর্বক কয়েকটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। এসব তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা তাদের সাইনবোর্ড বসানো এলাকায় লাশ দাফনে বাধা দিচ্ছেন। কবরস্থানে দায়িত্ব পালনরত মেহেরাব মো. সরোয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সাইনবোর্ড বসানো এলাকা দেখিয়ে বলেন, কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানের ওই এলাকায় কোনো কবর না দেয়ার জন্য আমাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র করা হবে। ডিসিসি'র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেছেন, কবরস্থানে কোনো পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ কোনো প্রকার স্থাপনা তৈরি করার অনুমতি ডিসিসি দেয়নি।
জানা গেছে, কবর স্থানের জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থানা কমপ্লেক্স নির্মাণ করার নীতি নির্ধারক ঢাকা-১৪ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক। তিনিই কবর স্থানের জায়গাটিতে এই দু'টি প্রতিষ্ঠান তৈরি করার জন্য নির্ধারণ করেছেন।
কবর স্থানের জায়গা দখল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও থানা কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যাপারে সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হকের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কবর স্থানের কোনো জায়গা দখল করিনি। এখানে কবরস্থান বা ডিসিসি'র কোনো জায়গা নেই। জায়গাটি কাদের জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের জায়গা। ভূমি মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আমি কোনো জায়গা দখল করিনি। বরং আমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে জায়গাটিকে রক্ষা করেছি। তিনি বলেন, সরকার ঢাকায় ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করবে তারই ধারাবাহিকতায় আমার এলাকায় একটি পেয়েছি। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী এটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন। সেজন্য দ্রুত কাজ চলছে। সংসদ সদস্য বলেন, আমার বক্তিগত কোনো খায়েশ নেই। এটা সরকারের কাজ, সরকার তার পরিত্যক্ত জায়গা ব্যবহার করছে।
কবর স্থানের দেয়াল কেন ভাঙা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে আসলামুল হক বলেন, আমরা কবর স্থানের বাউন্ডারির বাইরে কাজ করছি, ভিতরে নয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জায়গায় কাজ করছি অন্য কারো জায়গায় নয়। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সরকার ইতিমধ্যে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে আমার এলাকায়। যে করেই হোক এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জায়গা সিটি করপোরেশন অথবা তার বাপের হোক আমার জানার দরকার নেই। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন, এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো জায়গার প্রয়োজন নেই।
এদিকে কবর স্থানের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য মেয়রের অনুমতি চেয়েছে ডিসিসি'র সম্পত্তি বিভাগ। তাছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হককে চিঠি দিয়ে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে যে জায়গাটি ডিসিসি'র। এই জায়গা কবর স্থানের জন্য বরাদ্দকৃত।
এ ব্যাপারে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা ডিসিসি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়নি। দেয়ার নিয়মও নেই। এটা স্বার্থান্বেষীমহল অবৈধভাবে দখল করে আছে। আমরা শিগগিরই এটাকে অবৈধ দখলমুক্ত করব।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×