somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিকারুননিসার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে কিছু কথা..ফেসবুক থেকে

১৭ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ভিকারুননিসা” নামটা শোনা মাত্র চোখের সামনে হাজার হাজার স্মৃতি ভেসে ওঠে- আর সেই হাজার স্মৃতির ভীড় থেকে একটা গর্বিত মুখ সামনে এসে দাঁড়ায়- আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার, ভালবাসার, যথাসময়ে ভয়ের এবং সবসময়ের প্রিয় বড় আপা- আমাদের হামিদা আলী আপা। আমি নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতি ভিকিদের একজন মনে করি, কারণ আমি হামিদা আলী আপার তত্বাবধানে যখন ভিকারুননিসা স্কুল চলত সেই সময়ের ছাত্রী, সৌভাগ্যক্রমে আপার স্নেহ-সান্নিধ্য অর্জন করেছি। একুশ বছর...একুশ বছর ধরে এই মানুষটি তিলে তিলে ভিকারুননিসাকে সাফল্যের উচ্চতম শিখরে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। আমি বলব না যে “আজকে ভিকারুননিসা যে অবস্থানে আছে তার পেছনে হামিদা আলী আপার অবদান অসীম”...কারণ আজ যে অবস্থানে ভিকারুননিসা দাঁড়িয়ে আছে সেটা হামিদা আলী আপার ভিকারুননিসা না। তার অনেক নীচের একটা প্রতিষ্ঠান। হামিদা আলী আপা যাওয়ার পর থেকে বাইরের নোংরা মানুষগুলো যে যেভাবে পারে স্কুলটিকে ধ্বংস করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।

গত কয়েকদিন থেকেই খুব জানতে ইচ্ছা করছিল হামিদা আলী আপা কি ভাবছেন স্কুলের এই সংকটময় অবস্থা দেখে। তাঁর কেমন লাগছে একুশ বছর ধরে সযত্নে বড় করে তোলা স্কুলটাকে নিয়ে এই লোভী কুকুরগুলার কাড়াকাড়ি দেখে। গতকাল আরটিভিতে আপাকে আনা হয়েছিল একটি টক শো তে। চোখে পানি চলে আসছিল আমার বারবার আপার সেই পুরাতন কিন্তু আরেকটু বুড়িয়ে যাওয়া, আর কিছুটা উদভ্রান্ত চেহারাটা দেখে। চুপ করেই বসেছিলেন আপা...প্রথম একটা কথা বললেন, “আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাকে এই দিনটি দেখেতে হল কেন?”

আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না...যারা এই ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েদের কাজেকর্মে “রাজনৈতিক ইন্ধন” এর গন্ধ পাচ্ছেন তারা আরেকটু পেছনে ফিরে দেখছেন না কেন? আজকে মতিউর রহমান সাহেব তার অত্যন্ত “তারুন্য উদ্দীপ্ত”, “বদলে দেয়ায় বিশ্বাসী” এবং “সত্যবাদী” পত্রিকা প্রথম আলোর সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, “...পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এই মুহূর্তে দেশের বাইরে। তাঁর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিলীপ রায়ের পর্ষদের সভা আহ্বান করার কথা। কিন্তু তাঁর আহ্বানের অপেক্ষায় না থেকে পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজন সদস্য এক সভায় মিলিত হয়ে অধ্যক্ষ হোসনে আরাকে অপসারণ করেছেন বলে এ পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি (হোসনে আরা)। আর অধ্যক্ষের নামফলক সরিয়ে ফেলে আম্বিয়া খাতুনের দ্রুত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে দলাদলির আভাস দেয়।” মতিউর রহমান সাহেব কি জানেন যে এই মহিলাকে কেন ভিকারুন্নিসার মত well-reputed একটা কলেজে বাইরে থেকে এনে বসিয়ে দেয়া হল? এমন কোন স্বনামধন্য শিক্ষক হিসেবে তো আমি হোসনে আরা বেগমের নাম কোনদিন শুনিনি! আমাদের কলেজের এত সিনিয়র শিক্ষিকা থাকতে বাইরে থেকে একজনকে এনে যে সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে দেয়া হল এখানে জনাব মতিউর রহমান কোন দলাদলির আভাস কিন্তু পাননি!!

তিনি আরো লিখেছেন, “হোসনে আরার অপসারণে শিক্ষার্থীদের অনেকে খুশি, এমন খবর পাওয়া গেছে। এটা কোনো শিক্ষকের জন্য ভালো খবর নয়। আবার হোসনে আরা অন্যকলেজ থেকে এসেছেন বলে তাঁকে মেনে না নেওয়ার বিষয়টিও সমর্থনযোগ্য নয়।”...মতিউর রহমান সাহেবের মত অনেকেই গত কয়েকদিনে এধরনের কথা বলছেন যে কিছু শিক্ষক এবং গভার্নিং বডির কিছু সংখ্যক “বিরোধী দলীয়” সদস্য ছাত্রীদের হোসনে আরার অপসারণের জন্য “উষ্কে” দিচ্ছেন।

এই “সূক্ষদৃষ্টি” সম্পন্ন ব্যক্তিদের জ্ঞাতার্থে বলছি...হোসনে আরা যখন প্রথম প্রিন্সিপাল হয়ে আসেন আমার ছোট বোন তখন কলেজে ঢুকেছে মাত্র। প্রতিদিন ওর কাছে হোসনে আরার নানান কাহিনী শুনতাম। প্রথম দিনই অ্যাসেম্বলীতে হোসনে আরা অডিটোরিয়ামে মেয়েদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে বেশ জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে তিনি আমাদের মাননীয় (!!!!!!) প্রধানমন্ত্রীর স্কুল-ফ্রেন্ড!! এটা নিয়ে তিনি বেশ গর্বিত এবং তার চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর!!

কিছুদিন পর আমার বোন কলেজ থেকে ফিরল খুব রেগেমেগে! জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি...জানলাম হোসনে আরা ভিকারুন্নিসা স্কুল এন্ড কলেজের নাম পরিবর্তন করতে চান! এটা নিয়ে ফেইসবুকে ছাত্রীরা উনাকে রীতিমত গালিগালাজ করে বিভিন্ন পোস্ট দেয়। কথা জানাজানি হলে এই প্রজেক্ট তিনি স্থগিত করেন। আরো কিছুদিন পর আবারো আমার বোন মুখ কালো করে বাসায় ফিরল, “আমাদের স্কুল-ড্রেসের রঙ চেইঞ্জ করে দিবে বলছে প্রিন্সিপাল আপা...সবুজ জামা...” শুনে তো আমার মাথায় বাজ! কি বলে!! ভিকারুন্নিসার অমন সুন্দর আকাশী রঙের ড্রেস চেইঞ্জ করবে মানে? মামাবাড়ি নাকি? আবার শুরু হল ফেইসবুক ভিত্তিক প্রতিবাদ। আমার বোনের ক্লাসেরই একটি মেয়ে স্ট্যাটাস আপডেট দিল এবং পরের দিন প্রিন্সিপাল এর রুম এ তাকে ডেকে পাঠানো হয়। হোসনে আরা তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি ইন্টারনেটে এসব কেন লিখেছ?’ মেয়েটি সাহসের সাথেই জবাব দেয়, “আমার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে কি লিখব সেটা আমার ব্যাপার!” এরপর মেয়েটিকে আর তেমন কিছু না বলে একটু সাবধান করে ছেড়ে দেয়া হয়।

উপরের যে কয়টি ঘটনা বললাম এটা পুরোপুরি ছাত্রীদের realization থেকে এসেছে। কোন শিক্ষক তাদের এসব কথা বলেনি কোনদিন। হোসনে আরা কে অপসারণের দাবি আজকে নতুন না। আমার এই নোটের সাথে অ্যাটাচড ছবিটি দেখুন...এটা হোসনে আরা যখন প্রথম আসে তখনি তোলা! প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে আমার বোন ও তার বন্ধুরা তখন মুখ ঢেকেই ছবিটি তুলেছিল!!
মতিউর রহমান সাহেবের লেখায় মনে হল অন্য কলেজ থেকে আসার কারণেই হোসনে আরার অপসারণ দাবি করা হয়েছে! অথচ এই মহিলাটি যে নির্যাতিত মেয়েটির নামে অত্যন্ত আপত্তিকর কিছু কথা বলেছেন এই সংকটকালের প্রথম দিকে এবং সেই কথাগুলোই ছাত্রীদের cumulative অভিযোগের সাথে যোগ হয়ে উনাকে অপসারণ করে স্কুলটাকে বাঁচানোর আন্দোলনে পরিণত হয়েছে- সে ব্যাপারটা তিনি হয়তো আমলে নেয়ার প্রয়োজনই বোধ করেননি।

তো মতিউর রহমান সাহেব, আপনার কী মনে হয়- হোসনে আরার অপসারণের দাবিটি রাজনৈতিক দলাদলির নির্দেশক...নাকি হোসনে আরাকে ঐ পদে বসানোর প্রক্রিয়াটি? বিচার আপনার হাতে দিলাম...আপনার এবং দেশের মানুষের বিবেকের হাতে দিলাম।
Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×