somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রীক যৌন নির্যাতন ও আলোচিত সেই চিঠি

১৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর কর্তৃক দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন চলছে। ওই ছাত্রী প্রথমে ২৮শে জুন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। তাতে পরিমলের শাস্তি দাবি করা হলেও যৌন হয়রানির বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। পরে ৪ঠা জুলাই অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগে তার ওপর যৌন হয়রানির বিস্তারিত বর্ণনা দেয় সে। তা সংবাদপত্রে প্রকাশের পরই ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনে নামে তারা। আন্দোলনে যোগ দেন অভিভাবকরাও। ৪ঠা জুলাই লিখিত চিঠির পরই আন্দোলন জোরদার হয়। সেই চিঠিটি হুবহু এ রকম-

‘সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি (নাম) জন্ম ১৮/১১/১৯৯৬। আমি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা দিবা শাখার একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমি ছাত্রী হিসেবে ভাল ফলাফলের জন্য প্রতি বিষয়েই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিং করি। যেমন লুৎফর রহমান স্যারের কাছে গণিত, মাহবুবুল হক স্যারের কাছে ইংরেজি, জাহাঙ্গীর আলম স্যারের কাছে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন, জিনাতুন্নেছা আপার কাছে জীববিজ্ঞান এবং পরিমল জয়ধর স্যারের কাছে বাংলা। অত্র স্কুলে আমি চতুর্থ শ্রেণী থেকেই পড়ে আসছি। পরিমল জয়ধর স্যার স্কুলে বাংলা বিষয় পড়ান বলে আমি তার কোচিংয়ে গত মে ২০১১ থেকে ১০ জনের ব্যাচে পড়া শুরু করি। আনুমানিক ২০-২৫ দিন পরে কোচিং ক্লাসে পড়তে যাওয়ায় আমার একটু বিলম্ব হয়। দেরিতে যাওয়ায় যেটুকু পড়ায় আমি অনুপস্থিত ছিলাম সেটুকু পড়া স্যার আমাকে বুঝিয়ে দেবেন বলে দেরি করতে বলেন। সবাই চলে যায়; কিন্তু আমি রয়ে যাই। সবাই চলে গেলে আমি আগের পড়াটুকু পড়তে থাকি। স্যার মূল গেট বন্ধ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেন এবং আমি কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ বেঁধে ফেলেন। মুখ বাঁধা থাকায় আমি কিছু বলতে পারিনি। হাত ছোড়াছড়ি করতে যাওয়ায় তিনি আমার ওড়না দিয়ে আমার হাত পেছনে বেঁধে ফেলেন। হাত বেঁধে আমাকে ভীষণ মারধর করেন। মারধর করে আমাকে উলঙ্গ করে ফেলেন এবং আমার ছবি তোলেন। ছবি তোলার পর আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে যাই এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। এরপর আমার বাঁধন খুলে দেন এবং সাবধান করে দেন যে ঘটনা কাউকে বললে, নিয়মিত তার ক্লাস না করলে, আমার ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবেন এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেন। এতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি এবং দিশেহারা হয়ে যাই। এরপর জুন ১৭ তারিখ লুৎফর স্যারের ব্যাচ থেকে পড়ে আমি পরিমল স্যারের ব্যাচে পড়তে যাই। তখন অন্য ব্যাচ পড়ছিল। স্যার আমাকে পাশের রুমে বসতে বলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাচ ছুটি দিয়ে সদর দরজা বন্ধ করতে যান। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে দরজা বন্ধ করতে বারণ করি। তখন সে আমাকে ধাক্কা দেন এবং মাথা দেয়ালে লাগায় আমি মাথায় ব্যথা পাই। তখন আমাকে ধমক দেন যে, ‘তোকে বলেছি আমার ইচ্ছার বাইরে যাবি তো তোকে জানে মেরে ফেলবো’। এরপর আমাকে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন করেন। জুন ১৮ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ১৯ জুন তারিখে ঘটনাটি আমার সহপাঠীদের অবহিত করি। তারা আমাকে ঘটনাটি শাখা প্রধানকে জানাতে বলে। তারা আমাকে পরামর্শ দেয় যে, শাখা প্রধান এ বিষয়টির সুষ্ঠু বিচার করতে পারবেন। সেদিন আমি আমাদের শাখা প্রধান লুৎফর রহমান স্যারকে ব্যাপারটি বলতে যাই। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত বা স্কুলের কাজে স্কুলে ছিলেন না বিধায় তাকে ওইদিন ঘটনাটি জানাতে পারিনি। জুন ২০ তারিখ স্যার স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। জুন ২১ তারিখে তিনি স্কুলে আসেন এবং আমি তাকে সুযোগ বুঝে ব্যাপারটি জানাই। তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি ঘটনাটি দেখবেন। লুৎফর রহমান স্যারকে ঘটনা জানানোর পরও ২২ তারিখে পরিমল স্যার স্কুলে এলে আমি লুৎফুর স্যারকে পুনরায় ব্যাপারটি বলি। তিনি আমাকে ব্যাপারটি ভেবে দেখছেন বলে আশ্বস্ত করেন। জুন ২৩ তারিখে স্কুলে অভিভাবক মিটিং ছিল যেখানে আমাদের স্কুলের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন পরিমল স্যারকে আমরা স্কুলে দেখিনি। এরপর ২৬ ও ২৭ তারিখ অসুস্থতার কারণে আমি স্কুলে উপস্থিত হতে পারিনি। জুন ২৮ তারিখে স্কুলে গেলে আমাদের দশম শ্রেণীর সব ছাত্রী পরিমল স্যারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা আলোচনায় বসি। আলোচনায় তার সম্পর্কে আরও কিছু কুরুচিপূর্ণ কথা উঠে আসে। তখন আমরা সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা অধ্যক্ষকে এ ব্যাপারে অবহিত করবো। তাই আমরা পরিমল স্যারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে আবেদনপত্র তৈরি করি।’ আবেদনপত্রটি ক্লাসে পড়ে শোনালে স্বেচ্ছায় সবাই এতে নিজ নিজ নাম স্বাক্ষর করে। এরপর আবেদনপত্রটি শাখা প্রধান জনাব লুৎফর রহমান স্যারের মাধ্যমে অধ্যক্ষ বরাবর পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানাই। উল্লেখ্য যে, আমি স্কুলে অনুপস্থিত থাকাকালীন ২৭ তারিখে ঘটনাটি স্কুলে জানাজানি হয়ে যায়। অতএব, এ ব্যাপারটি আপনার সুবিবেচনায় এনে আমার ওপর পরিমল স্যার যে বর্বোরচিত, অমানবিক, অনৈতিক, ঘৃণিত ও পাশবিক আচরণ করেছেন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
সূএঃপ্রথমে প্রকাশ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৬
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×