তথ্য অধিকার আইন জারী হয় ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। এমনকি একই দিনে গঠন করা হয় তিনসদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশন। একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং দু'জন তথ্য কমিশনার সচিব মর্যাদার। সেই আইনে বলা আছে, প্রতি স্বতন্ত্র অফিস এই আইন জারীর ৬০ দিনের মধ্যেই তাদের অফিসের একজন অফিসারকে তথ্য প্রদানকারী হিসেবে '' দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা'' নামে নিয়োগ দেবে। নতুন সৃষ্ট অফিসের ক্ষত্রেও একই নিয়ম! তারা আবেদনকারীকে প্রার্থিত তথ্য ২০/৩০ দিনে বা ক্ষেত্রমতে মৃত্যু বা কারাগারে আটকসংক্রান্ত বিষয় হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তথ্য লিখিতভাবে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবেন।
তিনি তথ্য আইনত দিতে বাধ্য না থাকলে ১০ দিনের মধ্যেই লিখিতভাবে প্রার্থীকে জানাতেও বাধ্য বা অহেতুক তথ্য না দিলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা অফিস প্রধানের কাছে আপীল করতে পারবে সেই প্রার্থী। আপীল কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে হয় তথ্য দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন বা আপীল খারীজ করতে পারবেন।
এতে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী তাদের বিরুদ্ধে তথ্য না দেয়ার অভিযোগে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করতে পারবেন--এবং কমিশন তা আমলে নিলে উভয়পক্ষকে সমন দেবেন নির্দিষ্ট দিনে তথ্য কমিশন আদালতে হাজির হতে।
এরপর শুনানীশেষে তথ্য কমিশন প্রার্থীকে তথ্য দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন বা আইনত তথ্য পাবার অধিকারী নয় বলে তার অভিযোগ খারীজ করে দেবেন। আর তথ্য দিতে গড়িমসি বা ইচ্ছেকৃত অবহেলা থাকলে অপরাধীকে বিলম্বের জন্য প্রতিদিনের জন্য ৫০টাকা হারে সরবোচ্চ ৫০০০/=টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন। প্রয়োজনে বিভাগীয় মামলা চালুর জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারবেন।
এখানে বলাবাহুল্য যে, তথ্য দেয়া না দেয়ার জন্য সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই আইনত দায়ী এবং শাস্তি হলে তারই হয়ে থাকে। অনেকে ভাবেন-- তথ্য কেউ চাইলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চাইব এবং তিনি না দিলে বা দিতে বারণ করলে প্রার্থীকে তথ্য দেবোনা। এটা মারাত্মক ভুল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তথ্য গচ্ছিত থাকলে লিখিতভাবে চেয়ে না পেলেই শুধু তিনি শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবেন, অন্যথায় নয়। কারণ তথ্য দিতে তিনিই বাধ্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়। তবে আইনে তৃতীয় পক্ষ বলে একটা বিষয় আছে তথ্য যোগাড়ের ক্ষেত্রে মানে তাদের অন্য অফিসে সেই তথ্য থাকলে সেখানে লিখিতভাবে তা চাইতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেই এবং তা পেলে বা তারা না দিলে তিনি দায়ী হবেন না। এক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের আদালতে হাজির হলে তবেই তিনি প্রমানসাপেক্ষে বাঁচতে পারবেন মাত্র।
এ হলো সংক্ষেপ কথা--তবে যারা এখনো আইনানুযায়ী ৬০দিনের মধ্যে তাদের অফিসে ডিও/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেননি, তারা কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে বসে আছেন! কমিশন যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে করার কিছু থাকবেনা।
উল্লেখ্য যে, এই আইনে আরো বলা হয়েছে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ কার্যত ১৯২৩ সালের গোপনীয় বা সেক্রেসী আইনের ওপরে প্রাধান্য পাবে। তাই যারা তথ্য দিতে চান না তারা কতবড় বিপদে আছেন--ভাবুন তো?
ইতোমধ্যে দু'জন সরকারী অফিসারের ১০০০/= ও ৫০০/= টাকা জরিমানা হয়েছে তথ্য না দেয়ার অপরাধে। এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার একজন ডাক্তারের রীট করেও লাভ হয়নি। হেরে গিয়ে জরিমানা দিতে হয়েছে তাকে-আর এটা কতবড় অপমান এবং সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কী ঝুঁকিপূর্ণ তাকি ভেবে দেখেছেন? এমনকি আইনে এও আছে যে, তথ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে রীট ছাড়া কোনো মামলাও করা যাবেনা।
বিশদ জানতে এখানে ক্লিক করুন
এ সাইটগুলোও দেখতে পারেন--
এখানে দেখুন
এখানে ক্লিক