somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা, সে তো খর দুপুরে বৃষ্টিজলের খেলা

১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত এক ঘন্টা ধরে বইয়ের একটা পাতাই বার বার পড়ছি । আসলে ঠিক একটা পাতাও না, একটা প্যারা, নাকি তাও না । আসলে আমি একটা শব্দে আটকে গিয়েছি । শব্দটি হল “ইকনমি” । আমাদের ইকনমিক্স পড়ান আজমল স্যার । আমার সবসময়ই মনে হয়েছে স্যার অর্থনীতির টিচার না হয়ে মনঃবিজ্ঞানের টিচার হলে খুব ভালো করতেন । যত অনিদ্রার রোগী আছে উনার লেকচার থেরাপি নিয়ে একটা শান্তির ঘুম দিতে পারত । উনি এমনই ঘুমপাড়ানী টিচার । এখন আমার সেদিনের ইকনমিক্স ক্লাসের কথা মনে পড়ছে । কি বিরক্তিকর ক্লাস । গত সপ্তাহে শুধু এই ক্লাসে চোখ খুলে রাখার জন্য ২৪ ঘণ্টা একটানা ঘুমিয়েছি । কিন্তু তারপরেও শেষরক্ষা হয়নি । স্যারের লেকচার শুরু হওয়া মাত্র আমার চোখের দুটি পাতা মিলিত হওয়ার জন্য আকুলি বিকুলি করতে লাগলো । আমি নরম মনের মানুষ । বেশিক্ষন এই মিলনে বাঁধা দিতে পারিনি । বরাবরের মতই ঝিমাতে লাগলাম । সমস্যা হল তখনই, যখন হঠাৎ পাশ থেকে কার গুঁতো খেয়ে ধড়মড়িয়ে বসলাম আর সাথে সাথে চেয়ারের পাশে রাখা বিশাল বইটা বিকট শব্দ করে নিচে পড়ে গেল । খেয়াল হল আমি আসলে ক্লাসে বসে আছি আর ক্লাসের সব কয়টা চোখ এখন আমার দিকে, এমনকি স্যারের চোখও । লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে যেতে দেখলাম গাল্লু তার তেত্রিশ পাটি দাঁত (একটা আক্কেল দাঁতসহ ) বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এর মানে সবাই এতক্ষন আমাকে ক্লাসে ঘুমাতে দেখেছে । ঘুমিয়েই যখন ছিলাম, চিরতরে কেন ঘুমালাম না । তাহলে অন্তত এই দৃশ্য সহ্য করতে হতনা ।

“আম্মু পড়তে বসো”, অন্যঘর থেকে আব্বুর সতর্কবানী ।
পড়তে তো বসেই আছি, কিন্তু পড়া তো হচ্ছেনা । আবার গাল্লুটা এসে বাগড়া বাঁধালো । ওফ! এই ছেলে আর কত যন্ত্রণা করবে । ভার্সিটিতে তো শান্তিতে থাকতে দেয়ই না এখন কি বাসায়ও শান্তিতে থাকতে দেবেনা । যখন তখন এসে মনের মধ্যে হাজিরা দেয় । এই যেমন সেদিন একটা ব্যাপক একশন মুভি দেখছি, হঠাৎ মনে হল ইশ! গাল্লুটাকে যদি এইভাবে পিটাতে পারতাম । আবার যখন কোন রোমান্টিক সিরিয়াল দেখতে বসি, কথা নাই বার্তা নাই, চোখের সামনে ভাসতে থাকে গাল্লুর চেহারাটা । নাহ! আর না এইভাবে এই আহাম্মকটাকে আর প্রশয় দেয়া যায়না । যখন তখন আমার মাথায় একে ঢুকতে দেয়া যাবেনা । একদম নো এন্ট্রি !

হ্যাঁ কোথায় যেন ছিলাম । সেকেন্ড প্যারাটা । আজকে এই চ্যাপ্টার শেষ করবোই । আবার প্রথম থেকে শুরু করি । এই প্যারাটায় মানি মার্কেট নিয়ে অনেক ক্যাঁচাল দেখা যাচ্ছে । ব্যাপার না । একবার মনোযোগ দিয়ে পড়লেই হয়ে যাবে । তারপর দেখিয়ে দেবো গাল্লুকে । ঐ ছাগল তো নিজেকে বিদ্যার সাবমেরিন মনে করে, যেটা কিনা আবার স্যাটেলাইটের মত অর্জিত বিদ্যা মুফতে বিতরনে খুব আগ্রহী । যেমন কাল ভার্সিটিতে পা দেয়া মাত্র দন্তগুচ্ছ বিকশিত করে এসে বলবে, “সেকেন্ড চ্যাপ্টারটা পরেছিস, মাথায় এঁটেছে তো, আঁটার তো কথা না, কিসব গাঁজাখুরি সিরিয়াল দিয়ে মাথা বোঝাই করে রাখিস, না আটলে বলে ফেল, আমার হাতের কয়টা গাত্তা খেলেই দেখবি মাথাটা হাল্কা হাল্কা লাগছে, এরপর শুধু একটা চ্যাপ্টার না, চাইলে পুরা লাইব্রেরিটাও আঁটাতে পারবি” তারপর সেই গা জ্বালানো বিতিকিচ্ছিড়ি হাসিটা । এই রকম একটা ছেলেকে দেখা মাত্রই যদি চড় মারার জন্য আমার ডান হাত নিশপিশ করতে থাকে, তাহলে তো আমাকে খুব বেশি দোষ দেয়া ঠিক হবেনা।

আমি আবারও হারিয়ে গেলাম । কোথায় যেন ছিলাম । ওহ হ্যাঁ, সেকেন্ড প্যারাটায় । এখনও এই প্যারাই শেষ হলনা, চ্যাপ্টার কবে শেষ হবে ! না এর একটা বিহিত করতেই হবে । একটা চরম ঝগড়া লাগাতে হবে গাল্লুর সাথে । কিন্তু এই কাজ তো আমাকে দ্বারা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই । অই কেবালাটা সামনে এসে দাড়ানো মাত্র কি যেন হয়ে যায় । আমার চোখ আর পা দুটো একদমই আমার কথা শুনতে চায়না । কিছুক্ষণ পর পরই আবিষ্কার করি হয় আমি গাল্লুর দিকে তাকিয়ে আছি নয়তো গাল্লু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তখন আমার ধরের উপর মাথা আছে কিনা , আর থাকলেও সেটা কাজ করে কিনা এটা আজ পর্যন্ত বোঝা হলনা । আর চোখ দুটো তো আরো এক কাঠি সরেস, যখন তখন বন্যা নামিয়ে কাণ্ড করতে ওস্তাদ ।কি করবো আমি এই আমাকে নিয়ে, এখন বাসায় বসেও এই ছেলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছিনা। কোন প্রয়োজন নেই এই অপ্রয়োজনীয় ছেলেটার কথা ভেবে ভেবে কষ্ট পাওয়ার। হ্যাঁ, গাল্লু অনেক স্মার্ট, অনেক জনপ্রিয়, অনেক ভালো ছাত্র । এত অনেকের মধ্যে ঠাই পাওয়ার মত মানুষও তো অনেক। এই যেমন সোনিয়া যে কিনা গাল্লুকে রেধে খাওয়াবার জন্য জান প্রান দিয়ে রান্না শিখছে। কিংবা ওর ওই ছাত্রীটা, যে কিনা নিজ হাতে চা বানিয়ে না খাইয়ে ছাড়তেই চায়না। এত কিছুর মধ্যে খুব সাধারণ একজন মেয়ের জায়গা কই। নেই কোন জায়গা নেই আর আমার দরকারও নেই। আমি তো পারিনি তার কটাক্ষগুলোর তীব্র কোন জবাব দিতে। পারিনি তো আমার তীব্র ব্যাক্তিত্বের ঝাঁঝে সোনিয়া মুনিয়াদের ম্লান করে দিতে। তবে কেন শুধু শুধু অরন্যে রোদন।

কর্কশ শব্দে সেল ফোনটা বেজে উঠে। আমার চোখের পানির মত এরও কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। ফোন হাতে তুলেই দেখি গাল্লুর নাম। একবার নিজের মাথাটা ঝাকি দিলাম, তারপর মোবাইলটা। না সত্যি সত্যি গাল্লুর নামই দেখা যাচ্ছে। কাঁপা হাতে ফোন ধরলাম, মনে প্রানে চাইলাম গলাটা যাতে কিছুটা স্বাভাবিক শোনায়, সফল হলাম কিনা বোঝা গেলনা। প্রত্যাশিত ভাবেই তার গা জ্বালানো হাসিটাই আগে শোনা গেলো।

"তোর জন্য মারাত্মক একটা ব্যাড নিউজ আছে”'

গাল্লু আমাকে ফোন দিয়েছে একটা ব্যাড নিউজ দেয়ার জন্য, এর চেয়ে ব্যাড এই দুনিয়ায় আর কি হতে পারে। আর তার হাসি শুনে ভালই বোঝা যাচ্ছে, নিউজটা আমার জন্য যতটা না ব্যাড, গাল্লুর জন্য তার চেয়ে বেশি গুড।

এবার গলাটা কঠিন করে বললাম, “"কি বলবি জলদি বল”"

"আমি না তোর প্রেমে পরেছি, একটা লাইফ মোটামুটিভাবে নির্বিঘ্নে কাটানোর জন্য তোর মত গোবেচারা মেয়ের কোন জুড়ি নাই”"।

"দেখ তোর ফাজলামি দিন দিন সীমা ছাড়াচ্ছে”"।

"আর আমার ধৈর্যের সীমা তারও আগে পার হয়ে গেছে, এতদিন জাস্ট বসে ছিলাম, হয়তো বুঝবি, কিন্তু তোর চোখ পানি সাপ্লাই দেয়া ছাড়া আর কোন কাজের না, আর তোর মাথাও ঘুমানো ছাড়া আর কিছু করতে পারবেনা”"।

আমি যথারীতি নির্ভেজাল হাবলার মত বসে রইলাম।

“"ভাবছিলাম একটা চাকরীর নাগাল পেয়ে নিলে আব্বা আম্মা নিয়ে সোজা তোর বাসায় হাজির হবো, তোর মত হাবাকে ডিরেক্টলি প্রপোজ করে কোন লাভ নাই। কিন্তু ওই যে বললাম না, তোর মাথা ঘুমানো ছাড়া আর কিছু করতে চাইলেও পারবেনা। তাই ভাবলাম অন্য কেউ এসে তোর লাইফটা ফালাফালা করার আগেই আমি ঢুকে যাই, এর উপর সেই দিন সোনিয়ায় ফ্রাইড রাইস টেস্ট করতে গিয়ে অবস্থা তো আরও কাহিল। আমি এইসব টেস্ট আর সহ্য করতে রাজিনা। ওরে বলে দিস, তুই আমার সাথে বুকড, খবরদার যেন আমার দিকে নজর না দেয়। আর বলিস তুই অর চেয়ে ভালো ফ্রাইড রাইস রাধতে পারিস”"।

আমি টের পাচ্ছি, আমার হৃদপিণ্ড যেখানে থাকার কথা, সেখান থেকে দড়াম দড়াম শব্দ হচ্ছে। আর একটু জোরে হলেই হয়তো সবাই শুনতে পাবে।
ও পাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম,” "জানি তুই কখনই এটা বলতে পারবিনা, এই কারনেই মেজাজ গরম হয়, আবার হয়তো এর জন্যেই তোকে এতটা ভালবাসি”"।
খুব বলতে ইচ্ছা করলো, তুই আমার সাথে সত্যি ফাজলামি করছিস নাতো, ছেড়ে যাবিনাতো আমাকে। কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না। সে কি বুঝতে পারলো আমার কথাগুলো।

“"আমার জীবনের প্রতিটা কথা ফাজলামি হতে পারে, ফান হতে পারে, কিন্তু এটা না, তোর সাথে পুরোটা জীবন কাটাতে চাই, আমি জানি তুইও চাস, তোর চোখের পানিগুলোই বলে দেয়। বাকিটা তোর উপর। আজ আর কিছু বলবনা, তোর উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। চাইলেও এখনও ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে পারিস। এটাকেই আমি তোর হ্যাঁ বুঝে নিবো"”।

কি অদ্ভুত আজ প্রথমবারের মত গাল্লুর হাসিটা একটুও গা জ্বালানো মনে হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে এতদিন এই হাসিটার অপেক্ষায় ছিলাম। ও বলাই তো হলনা, ওর নাম কিন্তু গাল্লু না, হবু হাজব্যান্ডের নাম এভাবে সবার সামনে ফাঁস করাটা ঠিক হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১৬
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×