somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ হলো কি হ্যারি পটার অধ্যায়!

১৪ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সব মানুষেরই কিছু না কিছু ব্যাপারে নাক উঁচু হয়৷ সেই উঁচু নাকের অহংকারে অনেক সময় অনেক ভালো জিনিসও সে হারিয়ে ফেলে৷ আমি যেমন খুব জনপ্রিয় কিছু চট করে গ্রহণ করতে পারি না৷ খুব জনপ্রিয় জিনিস অনেক সময়েই ভালো হয় না, তাই অনেক সময় জনপ্রিয় জিনিসগুলো এড়িয়ে যাই৷ আর এভাবেই এড়িয়ে গিয়েছিলাম হ্যারি পটার৷

হ্যারি পটার সম্পর্কে আমার এলার্জি ছিলো৷ প্রথম যখন হ্যারি পটার সম্পর্কে জানতে পারি, তখন সেটা খুব বিখ্যাত৷ হ্যারি পটার নিয়ে হলিউডে ততোদিনে অনেক মুভি তৈরি হয়ে গেছে৷ সেটার জনপ্রিয়তা দেখে আমার ধারণা হলো, নিশ্চয় আরেকটা সস্তা কিছু তৈরি হয়েছে৷ হলিউডের স্বভাবমতো একই প্যাটার্নের উদ্ভট কাহিনী হবে নিশ্চয় হ্যারি পটার (ঠিক যেমন এখনকার জনপ্রিয় সিনেমা টুইলাইট, ভ্যাম্পায়ার নিয়ে কি উদ্ভট গল্প ফেঁদেছে)৷

মনে পড়ে, ২০০৫ সালের এক সকালে, নাস্তার টেবিলে বসে পত্রিকায় দেখি হ্যারি পটার সিরিজের ষষ্ঠ বই "হ্যারি পটার এণ্ড দি হাফ ব্লাড প্রিন্স" বই এর প্রকাশনার খবর৷ প্রথম পাতায় বইটা সহ জেকে রাউলিংয়ের হাস্যজ্জ্বল ছবি৷

"হু, হাফ ব্লাড প্রিন্স! ঢংয়ের আর জায়গা পায় না৷ নিশ্চয় গাজাখুরি নিয়ে কিছু ফেদেছে, আর তাই নিয়ে কিছু পাগল মেতে উঠেছে৷" আমি মনে মনে গজ গজ করলাম৷ আমার বিরক্তির কারণ ছিলো একই জিনিস নিয়ে হলিউডের ক্রমাগত ত্যানা পেচিয়ে যাওয়া৷ যেমন ডাইনোসর নিয়ে ওরা একইরকম অনেক ছবি তৈরি করে, আর প্রায় তার সবই জনপ্রিয় হয়৷

যাকগে, এরপর অনেকদিন চলে গেলো৷ ২০০৬ সালে একদিন ডিভিডির দোকানে ডিভিডি দেখতে গিয়ে কি মনে করে হ্যারি পটারের একটা ডিভিডি নিয়ে এলাম৷ ডিভিডিতে হ্যারি পটার সিরিজের প্রথ্ম চারটা সিনেমা ছিলো৷ প্রথম ছবিটা দেখেই মনে হলো- আরে, এতো অন্য ছবির মতো না! এর মধ্যে ডাইনোসর টাইপ কিছু নিয়ে ত্যানা প্যাচানো নাই, লর্ড অব দা রিং টাইপ সিনেমার মতো আজিব ধরণের কুৎসিত সব ক্রিয়েচার তৈরি করে মারামারি নাই৷ আর কি আশ্চর্য, ছোটবেলায় আমরা যে পড়তাম ডাইনিরা ঝাড়ুতে করে উড়ে যায়, এর মধ্যে তো সেগুলাই৷ আমাদের রূপকথার সবকিছু জীবন্ত হয়ে উঠেছে এখানে এসে! আমি মুগ্ধ হয়ে দেখলাম ব্রুমস্টিকে করে হ্যারিদের কুইডিস খেলা৷

কিন্তু ছবি ভালো লাগলেও ছবির কাহিনী ভালো বুঝলাম না, বুঝলাম আধাখেচরা করে৷ পরিচিত একজনকে জিজ্ঞেস করলাম সে হ্যারি পটার সম্পর্কে জানে কি না৷ দেখা গেলো সে ভালোই জানে৷ সে আমাকে কিছু জ্ঞান দান করলো৷ কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারলাম না৷ নীলক্ষেতে গিয়ে কিনে আনলাম "হ্যারি পটার এণ্ড দি অর্ডার অব দি ফিনিক্স"৷ সেটা ছিলো সিরিজের পাঁচ নম্বর বই৷ পাঁচ নম্বরটা কেনার পিছনে আমার যুক্তি ছিলো অন্য চারটার সিনেমা ভার্সন তো আছে, কাজেই যেটার এখনো সিনেমা হয়নি সেটা আগে পড়ে দেখি, ভালো লাগলে অন্যগুলা কেনা যাবে৷

বইটা পড়ে যেটা বুঝলাম, আসলে সিনেমা দেখে হ্যারি পটারের আসল স্বাদের দশ ভাগের একভাগ পাওয়া যেতে পারে, পুরোটা পাওয়া সম্ভব না৷ বই এতো ভালো, এতো ডিটেল তার বর্ণনা যে আমি অদ্ভুত মজে গেলাম৷ বই শেষ করেই আবার চলে গেলাম নীলক্ষেতে৷ তখন পর্যন্ত প্রকাশিত হ্যারি পটার সিরিজের বাকি পাঁচটা বই (হাফ ব্লাড প্রিন্স সহ!) কিনে আনলাম৷ তারপর নিলাম অফিস থেকে ছুটি৷

এখন ভাবলে অবাক লাগে সে সময়কার কাহিনী৷ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলাম আসলে শুধু হ্যারি পটার পড়ার জন্য না৷ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই কয়েকটা দিন কষে ঘুমাতে চেয়েছিলাম৷ ছুটি নেয়ার পর যেটা হলো, সারাদিন আমি হ্যারি পটার পড়ি, সন্ধ্যার দিকে একটু হাঁটতে বের হই৷ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে এসে ভাবি আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুমাবো৷ সারারাত ভালো একটা ঘুম দিবো যাতে পরেরদিন চনমনে শরীর নিয়ে ঘুম থেকে উঠতে পারি৷ এটা ঠিক করার পর আমি হ্যারি পটার নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি৷ তারপর একসময় টের পাই, ফজরের আজান দিচ্ছে৷

হ্যারি পটার আরো আগে না পড়ে একদিক দিয়ে আমি ভালো করেছিলাম৷ সিরিজের সাতটা বই লেখা হয়েছে দশ বছর ধরে৷ অথচ আমি ছয়টা বই পড়ার এক বছর পরেই পেয়ে গেলাম সিরিজের সপ্তম আর শেষ বই- হ্যারি পটার এ্যাণ্ড দি ডেথলি হ্যালোজ৷ আমার জানা মতে "হ্যারি পটার এ্যাণ্ড দি ডেথলি হ্যালোজ" হচ্ছে একমাত্র জিনিস যেটা যেদিন প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রকাশিত হয়েছে সেদিন একই সাথে বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয়েছে৷

ডেথলি হ্যালোজ শেষ করার পর অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো৷ আর কখনো হ্যারি পটার সিরিজের নতুন আর কিছু পড়া হবে না, ভেবে আশ্চর্য লেগেছিলো৷ মনে হলো, কি যেনো হারিয়ে গেলো জীবন থেকে৷ বড় আশ্চর্য সে অনুভূতি৷ ভল্ডোমোর্টের মতো আশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন জাদুকরের ভয়ংকর জাদু সম্পর্কে আর জানা যাবে না, সেও মেনে নেয়ার মতো না৷

২০০৭ সালে ডেথলি হ্যালোজ বইটা বের হলেও, ওটার সিনেমা ভার্সনের শেষ অংশ মুক্তি পাবে ১৫ ই জুলাই ২০১১, মানে কালকে৷ সেই সাথে শেষ হবে হ্যারি পটার অধ্যায়৷ খারাপ লাগছে৷ খারাপ লাগছে নিজের জন্য৷ খারাপ লাগছে সেই সব শিশু কিশোরদের জন্য, যারা দীর্ঘ দশটা বছর হ্যারি পটারের হাত ধরে বেড়ে উঠেছে৷ ছোটবেলায় পড়া যে কোনো কিছু অনেক বেশি প্রিয় হয়৷ সে সব শিশু কিশোর সৌভাগ্যবান যারা হ্যারি পটারের সাথে বেড়ে উঠেছে৷

আর থ্যাঙ্কস টু জোয়ান ক্যাথলিক রাওলিং- হ্যারি পটারের জন্য৷
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×