দেড় শতাব্দীরও বেশি সময় দোর্দণ্ড দাপটে চলার পর আচমকা হোঁচট খেয়ে ‘পথ হারানো’ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডকে অবশেষে বিদায় নিতে হলো। গতকাল রোববার আট হাজার ৬৭৪তম সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়ে ১৬৮ বছরের পথচলা শেষ করল পত্রিকাটি।
গতকাল প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে ছাপা ‘থ্যাংক ইউ অ্যান্ড গুডবাই’—শিরোনামে পাঠককে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এর সম্পাদকীয়তে খোলাখুলি দুঃখ প্রকাশ করে পাঠকের কাছে ক্ষমা চেয়েছে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ‘রবিবাসরীয়’ এই ট্যাবলয়েড। খবর এএফপি ও বিবিসির।
পত্রিকাটির শেষ সংখ্যায় ভেতরের পৃষ্ঠাজুড়ে লেখা সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘সোজা কথায়, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি।...ফোন হ্যাক করা হয়েছে এবং এ জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘ভয়ানক এই ভুল এবং এর শিকার হওয়া ব্যক্তিদের যন্ত্রণার বিষয়টি ন্যায্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মতো কোনো যুক্তি নেই। মহান এক ইতিহাসে যে চিড় ধরেছে, তার সপক্ষেও কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।’ সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ‘...আশা করি, ইতিহাস আমাদের এতগুলো বছরের কাজের মূল্যায়ন করবে।’
পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা সাজানো হয় বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংখ্যার প্রচ্ছদ দিয়ে। প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৬৮ বছর পর আমরা একই সঙ্গে দুঃখ ও গর্বের সঙ্গে ৭৫ লাখ বিনয়ী পাঠকের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।’
এর আগে শনিবার রাতে শেষবারের মতো কাজ শেষ করে নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর কার্যালয় থেকে সম্পাদক কলিন মাইলারের নেতৃত্বে একযোগে বেরিয়ে আসেন পত্রিকাটির সাংবাদিক ও অন্য কর্মীরা। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে বহু সাংবাদিক অপেক্ষমাণ ছিলেন। তাঁদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মাইলার বলেন, ‘আমরা এ অবস্থায় আসতে চাইনি, এ পরিস্থিতি আমাদের ন্যায্য পাওনা বলেও আমরা মনে করি না।’
পত্রিকাটির স্বাভাবিক প্রচারসংখ্যা ২৫ লাখ হলেও সর্বশেষ সংখ্যা ছাপানো হয় ৫০ লাখ কপি। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শেষ সংখ্যাটির বিক্রয়লব্ধ অর্থ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া হবে।
নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর যাত্রা শুরু হয় ১৮৪৩ সালের ১ অক্টোবর। শুরু থেকেই এর লক্ষ্য ছিল কাটতি বাড়ানো। আর এ জন্য যৌনতা ও অপরাধের খবরকে পুঁজি করে লক্ষ্য অর্জনে সফলও হয় পত্রিকাটি। ১৮৮০ সাল নাগাদ এর প্রচারসংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৫০-এর দশকে এর প্রচারসংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, ৮০ লাখ।
মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটি কিনে নেন। এর পরও ব্যবসার একই গতি ধরে রেখেছিল পত্রিকাটি।
পত্রিকাটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফোনে আড়ি পেতে আসছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ‘ফোন-কেলেঙ্কারি’র ব্যাপারে গত শুক্রবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দুটি বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেন। ওই দিনই গ্রেপ্তার হন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা ও পত্রিকাটির সাবেক সম্পাদক অ্যান্ডি কুলসন। ২০০৭ সালে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠদের ফোনে আড়ি পাতার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন কুলসন। তার পরই তাঁকে মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন ক্যামেরন। ক্যামেরন বলেছেন, তাঁকে এই নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল ভুল।