somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি এলেই মনে পড়ে

১০ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষড়ঋতুর রঙ্গশালা আমাদের এই দেশ। রুদ্র গ্রীষ্মের পরে আসে বর্ষা ,বর্ষার প্রকৃতি আর পাচঁটি ঋতুর তুলনায় তীব্রভাবে আমাদের পঞ্চেন্দ্রিয়কে অভিভূত করে। এ জন্যেই এ দেশের কবি/সাহিত্যিকগণ বর্ষাকে নিয়েই সর্বাধিক সাহিত্য রচনা করেছেন। সকলের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে বর্ষার আগমনের কথা। বৃষ্টির কোন দেখা নেই,গরম পড়ছে অবিরাম সবাই যেন মন প্রাণ উজাড় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছে সৃষ্টিকর্তার কাছে। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম উঠে বাহিরে বের হলাম। দেখি আকাশে মেঘ কালো কালো পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ ছুটছে আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৃথিবীটা যেন ভারি হয়ে ওটেছে। পুকুর ঘাটে বসে আছি একা একা দাঁত ব্রাশ করছি মনে মনে ভাবছি কখন যে, বৃষ্টি আসবে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল মুষলধারে পুকুর ঘাট থেকে ফিরে এলাম ঘরে। সকালের পর থেকে একটানা বৃষ্টি চলতে থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে। লোক চলাচল প্রায় বন্ধ। দু-একজন তখনো চলছে ছাতা মাথায়। আমি কর্মহীন দিন না কাটানোর জন্য দোকানে চলে গেলাম। দিন শেষ, দিনের আলো আত্নসমর্পণ করছে সন্ধার নিকট। তখনো বৃষ্টি পড়ছে। কখনো হালকা ধারায় কখনো মুষল ধারায়, সকল কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে এলাম। রাতের খাবার খেয়ে বসে আছি। আবার বৃষ্টি শুরু, অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে, বিরামহীন একটানা ঝর ঝর বৃষ্টির শব্দে হঠাৎ করে মনটা যেন কেমন হয়ে গেল। দরজা খুলে ঘরে বসে বর্ষণ দেখছি। অনুভব আর উপভোগ করছি। বাইরে দৃষ্টি ফেলে প্রকৃতির নতুন রূপ লক্ষ্য করছি। বৃষ্টির একটানা শব্দ মন ছুটে চলে যায়। পূর্বের নানান ঘটনায়। সেসব ঘটনায় মনে পড়ছে অতীতের দু:খ, আনন্দ আর কৌতুক। জীবনে অনেক বর্ষা দেখেছি, সে বর্ষায় কার পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ হয়েছিল। কিন্তু আমার মনটা এই বর্ষার দিনে বর্ষার কালো মেঘের মত অন্ধকার হয়ে যায়। যখন আমার ছোট বোনের কথা মনে পড়ে, বর্ষার সময় সে স্কুলে যাওয়ার জন্য ছাতা আনতে বলত কিন্তু সে এখন আর আমাকে ছাতা আনতে বলে না। কারণ সে সৃষ্টিকর্তার এই সুন্দর পৃথিবী থেকে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্ষার বৃষ্টির প্রতি বৎসর দেখা মিলে কিন্তু আমার আদরের ছোট বোনের আর দেখা মিলে না। জানিনা কোন বর্ষায় সে ফিরবে কিনা। তবুও বর্ষার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন তাকে জান্নাত দান করে। বৃষ্টি ধারার মত যখন আমার চোখে অশ্রু ঝরছে তখন হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে ওটল দেখি এক বন্ধুর ফোন সে ভার্সিটি হোস্টেলে তাকে রিসিভ করার পর সে জিঞ্জেস করল কি করছ? বললাম বৃষ্টি দেখছি, দুজনে বর্ষার বৃষ্টির চন্দে অতীতের নানান কথা বলতে লাগলাম। এক পর্যায় কথা শেষ করে ফোন রেখে দিলাম। তখনো বৃষ্টির কমতি নেই। কবি/সাহিত্যিকগণ বর্ষার রূপ দিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। অবসর বিনোদনের সময় হিসেবে বর্ষাকে চিহিৃত করেছেন। কিন্তু যে বর্ষাকে কবি/সাহিত্যিকগণ উপভোগ করতে বলেছেন, সে বর্ষা আমাদের কাছে এখন আর সে ভাবে আসেনা। বদলে যাচ্ছে বর্ষার রং ঢং। যে বর্ষা বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া হাজারো খাল-বিল আর নদীর বুকে নিজের স্বাক্ষর রেখে যেত,যে বর্ষা কবিকে চন্দ দিত কবিতা লিখতে, যে বর্ষা বাংলার লক্ষ প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমের স্বীকৃতি দিত। যে বর্ষা মাঝির হাতে তুলে দিত বৈটা,যে বর্ষার বৃষ্টি মনে করিয়ে দিত শৈশবের কথা,যে বর্ষার রূপকে শিল্পী মনে রাঙাতো নানান রঙে তুলি দিয়ে, যে বর্ষায় ছাতা নিয়ে ছুটে বেড়াত ছোট ছেলে-মেয়ের দল। বর্ষা স্বকীয় রূপধারা নিয়ে এখন আর আমাদের কাছে আসেনা। একটা সময় ছিল আগেই ঋতু পরিবর্তনের আবাস পাওয়া যেত। অথচ এখন নির্ধারিত ঋতু চলে গেলেও তাঁর দেখা মিলে না। মনে হয়, আমাদের অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হয়েই ঋতুগুলো পালিয়েছে। প্রকৃতির অপার দান ঋতু বদল এখন আর বদলে দেয় না প্রকৃতিকে। আমরা নিজেরাই ধ্বংস করছি একটি একটি প্রাকৃতিক লীলা। এতে করে প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে তার ঐতিহ্য ফলে বিমুখ হয়েই নিজের গতি হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×